Ajker Patrika

রেললাইনের ওপর বাজার ঘাটে ঘাটে চাঁদাবাজি

বগুড়া প্রতিনিধি
Thumbnail image

বগুড়া শহরের ৩ নম্বর রেলগেটের উত্তরে বসছে সর্ববৃহৎ পাইকারি কাঁচাবাজার আর দক্ষিণে মাছের আড়ত। বাজার দুটিকে বিভক্ত করেছে রেললাইন। আর এই রেললাইনের ওপরই ঝুঁকি নিয়ে চলছে বেচাকেনা। প্রতিদিন হাজারো মানুষের আনাগোনা সেই বাজারে। ফলে যেকোনো সময় ঘটতে পারে প্রাণহানি। তবুও ঝুঁকিপূর্ণ বাজার অপসারণের নেই কোনো উদ্যোগ প্রশাসনের।

শুধু ৩ নম্বর রেলগেটেই নয়, শহরের চকযাদু রোড এলাকায় ১ নম্বর রেলগেট ও থানা মোড় এলাকার ২ নম্বর রেলগেটের একই চিত্র দেখা গেছে। আর এই রেললাইনের ধারে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা বাজারে তীব্র যানজটের ফলে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে পথচারীদের।

স্থানীয় বাসিন্দাদের সূত্রে জানা গেছে, ১৯৭৩-৭৪ সালের পর থেকে এই রেলগেটগুলোতে অস্থায়ী বাজার বসতে শুরু করেছে। আর সকাল থেকে শুরু করে মধ্যরাত পর্যন্ত এসব ভ্রাম্যমাণ বাজারে কেনাবেচা হয়। রেললাইনের ওপরে ও দুই ধারের ব্যবসায়ীরা নিয়মিত চাঁদা দিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করছেন।

সরেজমিনে দেখা গেছে, শহরের চকযাদু রোড এলাকার ১ নম্বর ও থানা মোড় এলাকায় ২ নম্বর রেলগেটে অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন নিত্যপণ্যের দোকান। এখানে রয়েছে খাবারের, ফল, লেপতোশক, ভাঙারি, লোহা ও ক্রোকারিজের দোকান।

অন্যদিকে ফতেহ আলী রাজাবাজারের মধ্যবর্তী স্থানে ৩ নম্বর রেলগেটে গড়ে উঠেছে অস্থায়ী অবৈধ কাঁচাবাজার। সেখানে শাকসবজি, মাছ, মাংসসহ নিত্যপণ্যের কেনাবেচা হয়। ট্রেন আসার শব্দ শুনলে বিক্রেতারা তাঁদের দোকান গুটিয়ে নেন। ট্রেন চলে গেলে আবারও শুরু হয় তাঁদের কেনাবেচা।

সেখানকার ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ১ ও ২ নম্বর রেললাইনের দুই ধারের প্রতিদিন পৌরসভা কর্তৃপক্ষকে ১০ টাকা, রেলের গেটম্যানকে ৫-১০ টাকা এবং ৩০-৪০ টাকা দিতে হয় শহরের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রেজাউল করিম ডাবলুকে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর রেজাউল করিম ডাবলু বলেন, ‘ফতেহ আলী বাজার ও রাজাবাজার যারা নিলামে নিয়েছে, তারা টাকা নেয়। ১ ও ২ নম্বর রেলগেটে কোনো টাকা নেওয়া হয় না। ব্যবসায়ীরা মিথ্যে বলেছে।’

এ ছাড়া মাসে ১০০ টাকা করে প্রতি ব্যবসায়ীর কাছ থেকে চাঁদা নেয় রেলওয়ে পুলিশ। পুলিশের এই চাঁদার টাকা একজন ব্যবসায়ীর কাছে জমা রাখা হয়। প্রতি মাসের ২ তারিখে রেলওয়ে পুলিশের এক সদস্য এসে নিয়ে যান সেই টাকা।

১ ও ২ নম্বর রেলগেটের মধ্যবর্তী রেললাইনের ওপর ভার করে ফল বিক্রি করা এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘সামান্য কিছু ফল বিক্রি করে হামি সংসার চালাই। তার জন্যি পৌরসভা, রেলওয়ে পুলিশ, গেটম্যান, কাউন্সিলরক চাঁদা দেওয়া লাগে।’

এ বিষয়ে সান্তাহার রেলওয়ে থানার ওসি সাকিউল আযম বলেন, রেলওয়ে পুলিশ ওখান থেকে চাঁদা তোলে এমন অভিযোগ তিনি গত এক বছরে পাননি। তিনি এখনই বিষয়টির খোঁজ নেবেন৩ নম্বর রেলগেটের ব্যবসায়ীদের নিয়ে গঠিত হয়েছে ‘৩ নম্বর রেলগেট ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমিতি’। এই সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মান্নান শেখ এখান থেকে চাঁদা তোলেন। ব্যবসায়ীরা জানান, এই বাজারে দৈনিক একজন মাছ ব্যবসায়ীকে ২০০, মুরগির ব্যবসায়ীকে ১৮০, মাংস ব্যবসায়ীকে ৭০ ও শাকসবজিসহ অন্য ব্যবসায়ীদের ৪০ টাকা করে দিতে হয়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ৩ নম্বর রেলগেটের এক সবজি ব্যবসায়ী বলেন, ‘এটি বসলেই প্রতিদিন টাকা দেওয়াই লাগবি। মান্নান শেখ হামার কাছ থেকে ৪০ টেকা লেয়।’

রেলওয়ে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মান্নান শেখ বলেন, রাজাবাজারের সঙ্গে রেলগেট বাজার নিলামে দেয় পৌরসভা। তিনি রেলগেট অংশটুকু নেন। তবে এ বছর নিলাম হয়নি। পৌরসভাই রাজাবাজার ও রেলগেট বাজার চালাচ্ছে। তিনি খাজনা তুলে পৌরসভায় জমা দেন।

এ বিষয়ে জানতে পৌর মেয়র রেজাউল করিম বাদশার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি মিটিংয়ে আছেন বলে ফোন কেটে দেন।

রেলস্টেশন মাস্টার সাজেদুর রহমান বলেন, ওখানকার ব্যবসায়ীদের নামে মামলা দেওয়া হলে, তাঁরা জামিনে বেরিয়ে যেতেন। ব্যবসায়ীদের ভার তুলে নিয়ে এলে তাঁরা কাউন্সেলর, অমুক-তমুক বলতেন। চাঁদা নেওয়ার বিষয়ে গেটম্যান সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তাঁরা ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে কোনো চাঁদা নেন না। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত