Ajker Patrika

ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র সংকটে জেলেরা

সুমেল সারাফাত, সুন্দরবন থেকে ফিরে
আপডেট : ১৩ ডিসেম্বর ২০২১, ১৮: ৩৮
ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র   সংকটে জেলেরা

ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাসসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে সুন্দরবনের জেলেদের আশ্রয় নেওয়ার জন্য ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র আছে মাত্র পাঁচটি। আর এসব সাইক্লোন সেন্টারে সর্বোচ্চ পাঁচ হাজার মানুষ আশ্রয় নিতে পারেন। বাকি জেলেদের ক্ষেত্রে সেভাবে আশ্রয়ণের ব্যবস্থা হয় না। এ ছাড়া যে আশ্রয়কেন্দ্রগুলো রয়েছে সংস্কারের অভাবে সেগুলোর একাধিক কেন্দ্র বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। আশ্রয়কেন্দ্র সংকটে ঝড়-জলোচ্ছ্বাসসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে শত শত জেলের প্রাণহানি ঘটছে।

জানা যায়, ২০০৭ সালে সিডর ও পরবর্তী বছর আইলার সময় মারা যায় প্রায় সহস্রাধিক জেলে-বহদ্দার। সর্বশেষ ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের সময় শুঁটকি মৌসুম চলায় সেখানকার প্রায় বিশ হাজারের বেশি জেলে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নদী-খালে নৌকা-ট্রলারের ভেতর আশ্রয় নিয়েছিলেন।

জেলে, জেলে মহাজন ও বনজীবীদের অভিযোগ, প্রতি বছর কোনো না কোনো দুর্যোগে সুন্দরবনের আশ্রয় কেন্দ্রের সংকট নিয়ে বন বিভাগ ও প্রশাসনে অনেক আলোচনা হয়। কিন্তু সিডরের ১৪ বছর পার হলেও এখনো পর্যন্ত প্রাকৃতিক দুর্যোগে আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণের দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগ নেই।

বন বিভাগ সূত্র জানায়, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাসসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে এখানকার জেলেদের আশ্রয় নেওয়ার জন্য ১৯৯৬ সালে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা কারিতাসের উদ্যোগে সুন্দরবনের চরগুলোতে পাঁচটি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়। আলোর কোল, মেহের আলী, অফিস কিল্লা, মাঝের কিল্লা ও শ্যালার চরে যে পাঁচটি সাইক্লোন সেন্টার আছে তাতে মাত্র পাঁচ হাজার জেলে আশ্রয় গ্রহণ করতে পারেন। তবে দীর্ঘ দুই যুগ সংস্কার না করায় এর মধ্যে আলোর কোল, শ্যালার চর ও অফিস কিল্লার আশ্রয়কেন্দ্রগুলোর খুবই জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে।

সম্প্রতি সুন্দরবনের দুবলার চরে গিয়ে মঠবাড়িয়ার সেলিম পাটোয়ারী, পাইকগাছার আলমগীর হোসেন, মোংলার নজরুল ইসলাম, লুৎফর ইজারদার, রামপালের মজিবর, সেকেন্দার ২০ জেলে ও মাছ ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা হয়। জেলেদের সূত্রে জানা যায়, ঘূর্ণিঝড় সিডরের সময় আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিতে না পেরে ২০ থেকে ২৫ হাজার জেলে নিরুপায় হয়ে আশ্রয় নিয়েছিল বনের ভেতরের বিভিন্ন ছোট ছোট খালে ও বড় গাছে। ফলে সেই ঝড়ে সহস্রাধিক জেলে-জেলে বহদ্দারের প্রাণহানি ঘটে। ঝড় আসলেই প্রশাসন ও বন বিভাগ খুলনা বা মোংলায় চলে যেতে বলে।

কিন্তু মোংলা থেকে দুবলার চরের দূরত্ব প্রায় ৯০ নটিক্যাল মাইল। তারপর সেই সময় সাগর-নদী থাকে চরম উত্তাল। ফলে কোনোভাবেই ওই সময়ে তাঁরা লোকালয়ে আসতে পারেন না। তাই এই চরগুলোতে পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণের দাবি জানান তাঁরা।

শরণখোলা মৎস্যজীবী সমিতি ও মালিক সমিতির সভাপতি আবুল হোসেন বলেন, ‘সুন্দরবনের বিভিন্ন চরে যে পাঁচটি আশ্রয়কেন্দ্র আছে সেগুলোও চরম ঝুঁকিপূর্ণ। এর মধ্যে সবচেয়ে খারাপ অবস্থা আলোর কোলের আশ্রয়কেন্দ্রটির। দীর্ঘ ২৩ বছরেও সেগুলোতে কোনো সংস্কার কাজ হয়নি। তা ছাড়া সাগরে জেলেদের আগাম বিপদ সংকেত জানানোরও কোনো ব্যবস্থা নেই। সুন্দরবনের ভেতর মোবাইল নেটওয়ার্ক ঠিকমতো কাজ করে না।’ তিনি পর্যাপ্ত সাইক্লোন সেন্টারের পাশাপাশি এ এলাকা সব মোবাইল নেটওয়ার্কের আওতায় আনার দাবি জানান।

সুন্দরবনের খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক (সিএফ) মিহির কুমার দো বলেন, ‘সুন্দরবনের গভীরে জেলে পল্লিগুলোতে পর্যাপ্ত ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র প্রয়োজনের তুলনায় কম। যে পাঁচটি নির্মাণ করেছিল বেসরকারি সংস্থা কারিতাস, তাদের কোনো সংস্কার কার্যক্রমও নেই। সব মিলিয়ে দুর্যোগে জেলেদের আশ্রয় নেওয়াটা কঠিন।’

তিনি আরও বলেন, ‘সুন্দরবন যেহেতু সংরক্ষিত বনভূমি এবং ইউনেসকো কর্তৃক স্বীকৃতিপ্রাপ্ত বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ। সেহেতু সুন্দরবনের গভীরে কোনো স্থাপনা নির্মাণ করতে হলে আমাদের অনেকবার এ বিষয়ে বিবেচনা করতে হয়। তবে দুবলার চর কেন্দ্রিক চরগুলোতে আরও বেশ কিছু বড় সাইক্লোন শেল্টার নির্মাণ করা প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

প্রশিক্ষণ ছাড়াই মাঠে ৪২৬ সহায়ক পুলিশ কর্মকর্তা

গ্রাহকের ২,৬৩৫ কোটি টাকা দিচ্ছে না ৪৬ বিমা কোম্পানি

১০০ বছর পর জানা গেল ‘অপ্রয়োজনীয়’ প্রত্যঙ্গটি নারীর প্রজননের জন্য গুরুত্বপূর্ণ

‘এই টাকা দিয়ে কী হয়, আমি এত চাপ নিচ্ছি, লাখ পাঁচেক দিতে বলো’, ওসির অডিও ফাঁস

কিশোরগঞ্জে আওয়ামী লীগের ঝটিকা মিছিল, যুবলীগ নেতা গ্রেপ্তার

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত