Ajker Patrika

দৌলতপুরে অবহেলিত নজরুলের স্মৃতি

মুরাদনগর প্রতিনিধি
আপডেট : ২৫ মে ২০২২, ১৩: ১৯
Thumbnail image

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম ১৯২১ সালে কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার বাঙ্গরা বাজার থানার দৌলতপুর গ্রামে এসেছিলেন। এখানে অবস্থানকালে তিনি বহু কবিতা, গান আর ছড়া রচনা করেছেন। কিন্তু সেই দৌলতপুর আজও অবহেলিত।

ধীনতার ৫০ বছর পার হলেও এখানে কবির নামে রাষ্ট্রীয়ভাবে কোনো পাঠাগার বা ইনস্টিটিউট করা হয়নি। এ অবস্থার মধ্য দিয়েই দৌলতপুরে আগামী ২৭ মে শুক্রবার বিকেল তিনটায় কবির ১২৩তম জন্মবার্ষিকী পালন হবে।

মুরাদনগরের কোম্পানীগঞ্জ-নবীনগর সড়ক ধরে সামনে এগোলেই দৌলতপুর গ্রাম। এ গ্রামে ঢুকতেই চোখে পড়বে নজরুল তোরণ। তোরণের দুই পাশে ইট-সিমেন্টের তৈরি কালো রঙের টুকরা টুকরা বোর্ডে সাদা কালিতে লেখা কবির পঙিক্তমালা।

ই পথ ধরে আধা কিলোমিটার এগোলেই খানবাড়ি, যে বাড়িতে গেলেই নজরুলকে নিয়ে স্মৃতিকাতর হয়ে পড়েন ভক্তরা। ওই বাড়ি আর গ্রাম দীর্ঘদিন আগে থেকে নজরুল-নার্গিসের গ্রাম হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠেছে। এখানে রয়েছে আলী আকবর খানের সুনিপুণ কারুকাজে শোভিত দ্বিতল বাড়ি, এ বাড়িতেই কবি ছিলেন।

র্তমানে বাড়িটির পলেস্তারা খসে গেছে। দীর্ঘদিন এ অবস্থায় পড়ে থাকলেও সংস্কারের কোনো উদ্যোগ এখন পর্যন্ত নেওয়া হয়নি। এ বাড়ির পেছনে বাঁশঝাড়, সেটা পার হলেই কবির বাসরঘর।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ১৯৬২ সাল পর্যন্ত কবির বাসরঘরটি আটচালা ছিল। পরে চৌচালা হলেও আয়তন ও ভিটার কোনো পরিবর্তন করা হয়নি। ওই ঘরেই ছিল নার্গিসের ব্যবহার করা কাঠের সিন্দুকটি। দেখভালের অভাবে সিন্দুকটি হারিয়ে গেছে। সেটি এখন কোথায় আছে, তা আর ওই বাড়ির কেউই বলতে পারেন না। এক সময় ওই ঘরে বাসর খাটটিও ছিল। এখন সেটি পাশের একটি আধা পাকা ঘরে রাখা হয়েছে।

কবিপত্নী নার্গিসের বংশের উত্তরসূরি মোনালিসা খান বলেন, ‘এ বাড়ির পুকুরঘাটের আম গাছ তলায় কবি দুপুরে শীতল পাটিতে বসে গান ও কবিতা লিখতেন। খানবাড়ির ছেলেমেয়েদের নাচ, গান ও বাদ্যযন্ত্র শেখাতেন। পুকুরের পানিতে সাঁতার কাটতেন। শখ করে পুকুরে জাল আর পলো দিয়ে মাছ শিকার করতেন।

বির ওই স্মৃতিচিহ্ন ধরে রাখার জন্য দৌলতপুরে বানানো হয়েছে নজরুল প্রতিকৃতি। প্রতিবছর কবির জন্মদিনে সেখানে জেলা প্রশাসন ও মুরাদনগর উপজেলা প্রশাসন অনুষ্ঠান করে থাকে। এর বাইরে আর কিছুই এখানে হয়নি।’

নজরুল-নার্গিস শিল্পকলা একাডেমির পরিচালক নুরুল ইসলাম মাস্টার বলেন, ‘ময়মনসিংহের ত্রিশালে কবির নামে অনেক কিছু হয়েছে, অথচ দৌলতপুরে কিছুই হলো না। কবি এখানে দুই মাস ১১দিন ছিলেন। যৌবনে তিনি এখানে প্রেম ও বিয়ে করেছেন। অনেক কবিতা ও গান রচনা করেছেন।

কিন্তু দৌলতপুরে কবির নামে বড় ধরনের কোনো স্থাপনা ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়নি। কবির স্মৃতিচিহ্ন ধরে রাখতে আমরা এখানে সাংস্কৃতিক কোনো প্রতিষ্ঠান নির্মাণের দাবি জানাই।’
নজরুল গবেষক অধ্যাপক শ্যামা প্রসাদ বলেন, ‘কবি নজরুলের নামে দৌলতপুরে একটি বিশ্ববিদ্যালয় করার দাবিসহ আলী আকবর খানের করা সুনিপুণ কারুকাজে শোভিত দ্বিতল বাড়িটিকে জাদুঘর বানানো দাবি করছি। পাশাপাশি কবিপত্নী নার্গিসের ব্যবহার করা কাঠের সিন্দুক ও বাসর খাটটি সংরক্ষণের দাবি জানাচ্ছি।’

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অভিষেক দাশ বলেন, ‘জাতীয় কবির স্মৃতিকে ধরে রাখার জন্য বড় ধরনের কোনো বরাদ্দ এখন পর্যন্ত আসেনি। অপরদিকে গত দুবছর করোনা মহামারির কারণে আনুষ্ঠানিকভাবে নজরুলের জন্মজয়ন্তী পালন করা সম্ভব হয়নি। ফলে বেশ কিছু বিষয়ের ওপরে নজরদারি করা সম্ভব হয়নি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত