Ajker Patrika

কষ্ট শুধু সাধারণেরই ধর্মঘটে অচল দেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ০৬ নভেম্বর ২০২১, ১২: ৫৭
কষ্ট শুধু সাধারণেরই ধর্মঘটে অচল দেশ

দাম বাড়াল সরকার, ধর্মঘট ডাকলেন পরিবহন নেতারা। বেশি দামে জ্বালানি তেল কিনবেন যাঁরা, যানবাহনে চড়বেন যাঁরা—তাঁরাই বিপদে পড়লেন। এ আক্ষেপ আবুল হোসেন নামের এক পথযাত্রীর। হেঁটে, রিকশা করে শুক্রবার গন্তব্যে পৌঁছানোর চেষ্টা করছিলেন তিনি। তাঁর মতো অনেক মানুষ গতকাল পথে এভাবেই ভোগান্তির শিকার হয়েছেন।

তেলের দাম বাড়ানোর প্রতিবাদে গতকাল থেকে বলতে গেলে প্রায় পুরো দেশে গণপরিবহন বন্ধ হয়ে গেছে। আজ থেকে এই প্রভাব হয়তো পড়তে শুরু করবে নিত্যপণ্যের বাজারে। তারপরও শুক্রবার রাত পর্যন্ত এই সংকট সমাধানে দৃশ্যমান কোনো চেষ্টা নেই কোনো পক্ষেরই।

রাজধানীর মহাখালীতে সিরাজুল ইসলাম নামের এক যাত্রী বলছিলেন, ‘সবকিছু মিলিয়ে ভোগান্তিতে পড়লাম আমরা সাধারণ মানুষই। আমাদের কথা না ভাবে সরকার, না ভাবে পরিবহন মালিকেরা।’

ডিজেল ও কেরোসিনের দাম এক লাফে ১৫ টাকা করে বাড়ানোর পর ভাড়া বাড়ানোর দাবিতে বাস-ট্রাক বন্ধ রেখেছেন মালিক-শ্রমিকেরা। আর তেলের দাম কমানোর দাবিতে কর্মকাণ্ড বন্ধ রেখেছেন ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান নেতারা।

এ যেন পাটা-পুতার ঘষাঘষি, মরিচের পিষ্ট হওয়া।

ধর্মঘটের কারণে রাজধানীর গাবতলী, মহাখালী, সায়েদাবাদ টার্মিনাল থেকে ছাড়েনি কোনো দূরপাল্লার বাস। তবে যাত্রীর জটলা ছিল সব জায়গায়। ছুটির দিনে সড়কে বাস না চলায় সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন ঢাকার বাইরে থেকে চাকরির পরীক্ষা দিতে আসা ব্যক্তিরা।

শুক্রবার এক দিনেই ২৬টি চাকরির পরীক্ষা ছিল রাজধানীতে। যা ভোগান্তির মাত্রা আরও বাড়িয়েছে মানুষের। সড়কের বিভিন্ন মোড়ে অপেক্ষা করতে দেখা গেছে পরীক্ষার্থীদের। বাস না পেয়ে রিকশা-সিএনজি কিংবা প্রাইভেট কার ভাড়া করেই ছুটছেন অনেকে। আবার অতিরিক্ত ভাড়া না গুনতে পেরে অনেকেই হেঁটেই গেছেন গন্তব্যে। ঢাকার চেহারা প্রতিনিধিত্ব করেছে সব জেলার। কোথাও চলছে না বাস-ট্রাক। তবে চলছে ট্রেন ও লঞ্চ। সব মিলিয়ে ৭০ ভাগেরও বেশি চাকরি প্রার্থী অনুপস্থিত ছিলেন গতকাল।

বাস না চলায় গাবতলী এলাকায় সিএনজি, প্রাইভেট কার ও পিকআপে যাত্রীদের ঢাকায় ঢুকতে ও বের হতে দেখা গেছে। এসব গাড়িতে সাভারের ভাড়া নেওয়া হয়েছে ২০০ টাকা, আরিচা ঘাটে ৫০০ টাকা। প্রাইভেট কারে সিরাজগঞ্জের ভাড়া হাঁকানো হয়েছে ১ হাজার ২০০ টাকা, রাজশাহী ১ হাজার ৬০০ টাকা ও ফরিদপুর ১ হাজার ৮০০ টাকা।

মানিকগঞ্জ থেকে ঢাকাগামী যাত্রীদেরও দুর্ভোগ ছিল চরমে। বাড়ি থেকে ঢাকায় যাওয়ার উদ্দেশে বাসস্ট্যান্ডে এসে পরিবহন না পেয়ে অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে ছোট যানবাহনে করে রওনা দিয়েছেন। আবার কেউ পরিবহন না পেয়ে উল্টো বাড়ি ফিরে গেছেন।

তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে বাসের ভাড়া পুনর্নির্ধারণ করতে সরকারকে বৃহস্পতিবার চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি। এর পরিপ্রেক্ষিতে আগামীকাল রোববার বেলা ১১টায় বিআরটিএতে ভাড়া বাড়ানোর বিষয়ে মালিক সমিতির সঙ্গে বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। লঞ্চমালিকেরাও ভাড়া বাড়াতে চান।

বাসের ভাড়া পুনর্নির্ধারণের আগ পর্যন্ত সারা দেশে এ অচলাবস্থা অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছে সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি। রোববার বাসভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হবে।

তেলের পাশাপাশি অনেক বাস সিএনজিতে চলে। তাহলে সিএনজিচালিত বাস কেন বন্ধ করা রাখা হচ্ছে জানতে চাইলে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সিএনজি বা তেলে বাস চলে বিষয়টি এমন না। তেলের দাম বাড়ার প্রতিবাদে বাস বন্ধ রেখেছেন মালিকের। ভাড়া বৃদ্ধি করা না হলে বাস চালাবেন না মালিকেরা।’

এদিকে, এখন কঠোর অবস্থানে রয়েছেন ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান মালিক শ্রমিকেরা। তাঁদের দাবি, তেলের দাম না কমলে এ ধর্মঘট অব্যাহত থাকবে।

বাংলাদেশ ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান ও ট্যাংক লরি-প্রাইম মুভার মালিক শ্রমিক সমন্বয় পরিষদের সমন্বয়ক হোসেন মোহাম্মদ মজুমদার আজকের পত্রিকাকে বলেন, দাবি না মানা হলে ধর্মঘট চলতেই থাকবে।

এত সবের মাঝেও দ্বিগুণ করা প্রস্তাব এসেছে লঞ্চের ভাড়ার। শুক্রবার দুপুরে বৈঠকের পর সন্ধ্যায় গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে অভ্যন্তরীণ নৌ চলাচল সংস্থা (যাপ) জানায়, চলমান ভাড়া দ্বিগুণ করার জন্য অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষকে (বিআইডব্লিউটিএ) চিঠি দিয়েছে তারা।

সংস্থাটির সভাপতি মাহবুব উদ্দিন আহমেদ জানান, প্রতি ১০০ কিলোমিটারে ১.৭০ টাকার পরিবর্তে ৩.৪০ টাকা এবং ১০০ কিলোমিটারের বেশি হলে ২.৮০ টাকা ভাড়া বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।

ধর্মঘটের প্রথম দিনে যাতায়াতকারীদের জন্য একমাত্র অবলম্বন ছিল ট্রেন ও বিআরটিসি বাস। যদিও চাহিদার তুলনায় বিআরটিসি বাসের সংখ্যা ছিল নগণ্য। স্বাভাবিকভাবেই চাপ বাড়ছে ট্রেনে। সকাল থেকে কমলাপুর স্টেশনের ভেতরে ও বাইরে টিকিট ছাড়া কয়েক হাজার যাত্রী অপেক্ষমাণ ছিল। টিকিট না থাকায় যাত্রীর চাপের কারণে স্ট্যান্ডিং টিকিট দিতে বাধ্য হচ্ছে রেল কর্তৃপক্ষ।

এদিকে, জনগণের দুর্ভোগের কথা বিবেচনা করে এই ধর্মঘট প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে বলেন, এই মূল্য বৃদ্ধি দেশের অর্থনীতিতে ‘চেইন রিঅ্যাকশন’ সৃষ্টি করবে। জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি কৃষি ও শিল্পে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম লাগামহীনভাবে বাড়বে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত