Ajker Patrika

আহতদের সুচিকিৎসা জরুরি

সম্পাদকীয়
Thumbnail image

শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় যে সহিংসতা ঘটেছে, তাতে বহু মানুষ আহত হয়ে এখনো হাসপাতালে আছেন। আহত হয়ে এখনো যাঁরা হাসপাতালের বিছানায় কাতরাচ্ছেন, তাঁদের ব্যাপারটি আলোচনার বাইরে রাখা ঠিক হবে না।

তাঁদের অনেকের দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা আছে। আবার কারও কারও সারা জীবনের জন্য পঙ্গুত্ববরণের আশঙ্কাও রয়েছে। এসব মানুষের মধ্যে অনেকে আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না। তাঁরা কাজের প্রয়োজনে বের হয়ে সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। তাঁদের অধিকাংশই খেটে খাওয়া মানুষ, শিক্ষার্থী, বেসরকারি চাকরিজীবী, রিকশাওয়ালা, ছোট ব্যবসায়ীসহ নানা ছোট পেশার সঙ্গে যুক্ত মানুষ। এসব অসহায় এবং আর্থিকভাবে সামর্থহীন মানুষের সুচিকিৎসার দায়িত্ব কে নেবে? তাঁদের যন্ত্রণা-কষ্টের ভার কে বহন করবে? আজকের পত্রিকায় ২৪ জুলাই প্রথম পাতায় এ নিয়ে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে।

চোখে গুলির আঘাত নিয়ে গত শনিবার রাজধানীর জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে ভর্তি হয়েছেন ২৪ বছর বয়সী মো. অনিক। এখন তিনি দুই চোখে দেখতে পাচ্ছেন না। অনিক একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের বিক্রয়কর্মী ছিলেন। তাঁর কর্মস্থল ছিল মাদারীপুর। ১৮ জুলাই বিভিন্ন দোকান থেকে পণ্যের অর্ডার নিয়ে বাসায় ফিরছিলেন তিনি। বিকেল ৪টার দিকে মাদারীপুর নতুন জেলা আদালত সড়কে বিক্ষোভকারী ও পুলিশের সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে যান। কিছু বুঝে ওঠার আগেই শরীরে শটগানের গুলি এসে লাগে। মাথায় ও চোখে গুলিবিদ্ধ হয়ে মুহূর্তেই মাটিতে লুটিয়ে পড়েন অনিক। অচেতন অবস্থায় তাঁকে উদ্ধার করে নিকটস্থ একটি হাসপাতালে নেন পথচারীরা। সেখান থেকে তাঁকে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং পরে ২০ জুলাই জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে নিয়ে আসে পরিবার।

শুধু অনিক নন, এই হাসপাতালে ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলার ৪২৪ জন রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ২৭৮ জনের চোখে ও শরীরে গুলির আঘাত ছিল। ভর্তি থাকা ব্যক্তিদের মধ্যে অনেকেই দুই চোখ বা এক চোখ হারাতে পারেন বলে আশঙ্কা চিকিৎসকদের।

জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ছাড়াও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল এবং পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন অনেক আহত ব্যক্তি।

এসব মানুষের মধ্যে অনেকের একজনের আয়ে সংসার চলে। আহত ব্যক্তিরা কবে সুস্থ হয়ে উঠবেন, তা এখনই বলা যাচ্ছে না। ফলে তাঁদের পরিবার দীর্ঘ সময়ের জন্য সমস্যার মধ্যে পড়ে যাবে। সংসারের দায়িত্বভারের কথা বাদ দিলেও, তাঁদের এখন জরুরি সুচিকিৎসা।এর জন্য টাকার প্রয়োজন।

এই মানুষদের চিকিৎসার ব্যয়ভার পরিচালনার জন্য সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসা উচিত। সহিংসতায় আহত ব্যক্তিদের শুক্রবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দেখতে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই রোগীদের সুচিকিৎসার জন্য সরকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে এবং চিকিৎসা শেষে তাঁদের আয়-রুজির ব্যবস্থা করার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। শুধু সরকারি সাহায্যই নয়, সম্মিলিতভাবে এখন এই মানুষদের পাশে দাঁড়ানো দরকার।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত