Ajker Patrika

মার্কিন চাপ ঠেকাবে কীভাবে

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ১৫ ডিসেম্বর ২০২১, ০৯: ২৪
মার্কিন চাপ ঠেকাবে কীভাবে

র‍্যাব কর্মকর্তাদের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা, শুধু বাহিনীর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে দেওয়া হয়নি বলে মনে করছেন সরকারের ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিরা। তাঁদের দাবি, পররাষ্ট্রনীতি অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্র নিজেদের কোনো পরিকল্পনা বাস্তবায়নের আগে বিভিন্ন দেশের জন্য এমন পদক্ষেপ নেয়। যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপ নেওয়ার পেছনে দেশীয় ষড়যন্ত্রকারীরা জড়িত। এ ছাড়া বঙ্গোপসাগর নিয়ে এখন যে বলয় সৃষ্টি হয়েছে, সেখানে বাংলাদেশ অন্তর্ভুক্ত না হওয়ায় এমন পদক্ষেপের মধ্য দিয়ে চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে বলে খোদ আওয়ামী লীগের নেতারা মনে করছেন।

এখন এই চাপ সামাল দেওয়া হবে কীভাবে, তা নিয়ে নানা চিন্তাভাবনা চলছে সরকারের মধ্যে। সরকারের মন্ত্রী ও পুলিশ কর্মকর্তাদের পাশাপাশি ক্ষমতাসীন দলের জোট এবং জোটের শরিকেরা সক্রিয় হয়ে উঠেছে। তাদের কথায়, এই সিদ্ধান্তের পেছনে মার্কিন কূটকৌশল ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার বিষয়টি ফুটে উঠেছে।

নিরপরাধ বেসামরিক নাগরিক, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ এবং শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকারীদের ওপর দমন, নিপীড়ন ও গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে র‍্যাবের বর্তমান ও সাবেক ছয় কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ মন্ত্রণালয়ের বৈদেশিক সম্পদ নিয়ন্ত্রণ কার্যালয়। সেখানে র‍্যাবের বর্তমান মহাপরিচালক চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন, অতিরিক্ত মহাপরিচালক খান মোহাম্মদ আজাদ, সাবেক মহাপরিচালক (বর্তমানে আইজিপি) বেনজীর আহমেদ, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক তোফায়েল মুস্তাফা সারওয়ার, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম এবং সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক মোহাম্মদ আনোয়ার লতিফ খানের নাম রয়েছে। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর পৃথক এক ঘোষণায় র‍্যাব-৭-এর সাবেক অধিনায়ক মিফতাহ উদ্দীন আহমেদের সে দেশে ঢোকায় নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। কক্সবাজারের টেকনাফে পৌর কাউন্সিলর একরামুল হককে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনে সম্পৃক্ততার জন্য তাঁর বিরুদ্ধে এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

র‍্যাব কর্মকর্তাদের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন সরকারের মন্ত্রীরা। এই সিদ্ধান্তের ব্যাখ্যা শুনতে ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলবও করা হয়। এদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের জোট শরিক ১৪ দলের নেতারা এই নিষেধাজ্ঞাকে ষড়যন্ত্রের অংশ বলে মন্তব্য করেছেন। এ বিষয়ে সরকারকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়ে তাঁরা বলছেন, সরকারকে কূটনৈতিক তৎপরতা আরও জোরদার করে বন্ধুদেশগুলোর কাছে সব বিষয়ে সঠিক তথ্য তুলে ধরতে হবে।

গত সোমবার মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত জানানোর সময় মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেছিলেন, র‍্যাব কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি দেখার দায়িত্ব পররাষ্ট্র, স্বরাষ্ট্র ও আইনমন্ত্রীকে দেওয়া হয়েছে। তবে গতকাল মঙ্গলবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ বলছে, মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে উদ্ধৃত করে প্রকাশিত খবর যথাযথ নয়। খবরের কোন অংশ যথাযথ নয়, সে বিষয়ে কিছু না জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানিয়েছিলেন বিষয়টি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন গতকাল ভার্চুয়াল এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ‘বিষয়টি খুব দুঃখজনক। প্রধানমন্ত্রী আমাদের দায়িত্ব দিয়েছেন। হুট করে উত্তর দেওয়া ঠিক হবে না। আলাপ-আলোচনা করে আমরা উত্তর দেব। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত থাকবে।’ র‍্যাব কর্মকর্তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দুই দেশের সম্পর্কে কোনো প্রভাব ফেলবে না বলে মনে করেন তিনি।

গত সোমবার এক ওয়েবিনারে ১৪ দলীয় জোটের সমন্বয়ক ও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু বলেন, ‘আজকে বঙ্গোপসাগর নিয়ে যে বলয় সৃষ্টি হয়েছে, সেই বলয়ে আমাদের দেশ অন্তর্ভুক্ত না হওয়ার কারণেই চাপ প্রয়োগ হচ্ছে বলে আমরা মনে করি। এটি অত্যন্ত ভুল সিদ্ধান্ত। এটি তাদের জন্যই একটি অসম্মানজনক সিদ্ধান্ত বলে পরিগণিত হবে।’ যুক্তরাষ্ট্রের এই সিদ্ধান্তের পেছনে তৃতীয় কোনো শক্তির হাত আছে কি না, তা খতিয়ে দেখার পরামর্শ দিয়ে আমু বলেন, ‘আমাদের সম্পর্কের মধ্যেই ফাটল ধরানো বা এই ধরনের সিদ্ধান্তের মাধ্যমে এই দেশের জঙ্গিবাদ সৃষ্টি করার কোনো প্রয়াস আছে কি না বা তাদের উৎসাহিত করা হচ্ছে কি না, তা তলিয়ে দেখা উচিত। তাদের সিদ্ধান্ত বদলানো উচিত।’

র‍্যাবের সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তাদের ওপর যুক্তরাষ্ট্র যে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, তা পুনর্বিবেচনার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশন। গত সোমবার গণমাধ্যমে পাঠানো তাদের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে অযাচিত সিদ্ধান্ত আমাদের জন্য বড়ই উদ্বেগের। তাই, যুক্তরাষ্ট্র সরকারের প্রতি বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করার জন্য বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে বিশেষভাবে আহ্বান করা হচ্ছে।’

যখন কোনো দেশের সরকারকে যুক্তরাষ্ট্র অপছন্দ করে তখন সেই সরকার পরিবর্তনের জন্য তারা এ ধরনের দোষারোপ করে বলে দাবি করেছেন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন। তিনি বলেন, ট্রাম্পের সময়েই যুক্তরাষ্ট্র কিছুটা হলেও বিশ্ব নেতৃত্ব থেকে পিছিয়ে গেছে। বাইডেন ঘোষণা দিয়েছেন তাঁরা বিশ্ব নেতৃত্বে ফিরতে চান। এ জন্য বিভিন্ন দেশকে তাঁদের বলয়ভুক্ত করার চেষ্টা করছেন। এই অঞ্চলেও তাঁরা প্রভাববলয় সৃষ্টি করতে চাইছেন। গণতন্ত্র সম্মেলনে বাংলাদেশকে দাওয়াত না দেওয়ার পেছনে সেই ভূরাজনীতিই কাজ করেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আ.লীগের এমপি শাম্মীর বাসায় ১০ লাখ টাকা চাঁদাবাজি ও ভাগ-বাঁটোয়ারার বিবরণ দিলেন রিয়াদ

কোটি টাকা আত্মসাৎ করে লাপাত্তা: কে এই ফ্লাইট এক্সপার্ট এমডি সালমান, বাবার হাত ধরে যাঁর উত্থান

গঙ্গাচড়ায় হিন্দুপল্লিতে হামলাকারীদের উসকানি, স্থানীয় সাংবাদিক গ্রেপ্তার

কিশোরগঞ্জে হর্টিকালচারের উপপরিচালকের বিরুদ্ধে ‘সমকামিতার’ অভিযোগ, মামলা বাবুর্চির

অতিরিক্ত ফি দাবি করায় বিমানবন্দর স্টাফের চোয়াল ভেঙে দিলেন যাত্রী

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত