Ajker Patrika

আর্সেনিক ঝুঁকিতে ৫০ পরিবার

আশিস রহমান, দোয়ারাবাজার (সুনামগঞ্জ)
আপডেট : ২৭ নভেম্বর ২০২১, ১০: ৩৭
আর্সেনিক ঝুঁকিতে ৫০ পরিবার

সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার গিরিশনগর গ্রামে খাবার পানিতে আর্সেনিক প্রকট আকার ধারণ করেছে। দুই যুগ আগে উপজেলায় শুধু গিরিশনগরেই খাবার পানিতে আর্সেনিক শনাক্ত হয়। বিশুদ্ধ খাবার পানির ব্যবস্থা না থাকায় গ্রামের বাসিন্দারা পড়েছেন আর্সেনিক ঝুঁকিতে। গ্রামের অনেকেই আক্রান্ত হয়েছেন আর্সেনিক রোগে। মারাও গেছেন কয়েকজন।

এদিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আর্সেনিক রোগের চিকিৎসার কোনো ব্যবস্থা নেই। উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে, ভবিষ্যতে কোনো প্রকল্প |শুরু হলে বিশুদ্ধ খাবার পানির ব্যবস্থা করা হবে।

দোয়ারাবাজার উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপসহকারী প্রকৌশলী মো. আক্কাস আলী বলেন, ‘উপজেলার মধ্যে গিরিশনগর গ্রামে আর্সেনিকের মাত্রা বেশি। আর্সেনিকের জন্য কাজ করার মতো আমাদের এখানে আলাদা কোনো প্রকল্প নেই। তবে কিছুদিন পর এখানে কিছু পাইলটিং প্রকল্পের কাজ শুরু হবে। এর আওতায় বিশুদ্ধ খাবার পানি সরবরাহ করা হবে। তখন ওই গ্রামেও বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের চেষ্টা করা হবে।’

উপজেলার গিরিশনগর গ্রামে ১৯৯৬ সালে আর্সেনিক রোগ ধরা পড়ে মনির হোসেন নামের এক ব্যক্তির। দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে আর্সেনিক রোগে ভুগছেন তিনি। চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে হারিয়েছেন সহায়সম্পদ। বিক্রি করেছেন পৈতৃক জমিজমা। তবুও তিনি আর্সেনিক রোগ থেকে মুক্তি পাননি। বরং তাঁর বাম হাতে পচন ধরেছে।

মনির হোসেন বলেন, ‘আমার সব স্বপ্ন ভেঙে গেছে। ২৫ বছর ধরে কোনো কাজ করতে পারি না। সংসারের আয়-উপার্জন বন্ধ। যত দিন চিকিৎসা চলে, তত দিন কিছুটা নিয়ন্ত্রণে থাকে। না হয় আবার বেড়ে যায়।’

এই অবস্থা শুধু গিরিশনগর গ্রামের মনির হোসেনের একার নয়। ইলিয়াস ফরাজী, গিয়াস উদ্দিন , সিরাজ , বদরুজ্জামান , মতিউর রহমান সহ আরও অনেকেই প্রাণঘাতী আর্সেনিকে আক্রান্ত। এই গ্রামের প্রায় প্রতি বাড়িতে রয়েছে আর্সেনিক রোগে আক্রান্ত রোগী। গ্রামের প্রায় ৫০টি পরিবার পুরোপুরি আর্সেনিকের ঝুঁকির মধ্যে বসবাস করছে প্রায় দুই যুগ ধরে। কিন্তু এখন পর্যন্ত ওই গ্রামে বিশুদ্ধ খাবার পানির ব্যবস্থা করা হয়নি।

স্থানীয়রা জানান, দুই যুগ আগেও এই গ্রামের কেউ আর্সেনিক রোগের সঙ্গে পরিচিত ছিল না। এখন গ্রামের সবক’টি নলকূপের পানি আর্সেনিকযুক্ত। অনেকে অস্বাস্থ্যকর আয়রনযুক্ত নলকূপের পানি কিংবা পুকুরের পানিও ব্যবহার করছেন। ইউনিসেফ কর্তৃক প্রায় দেড় যুগ আগে গ্রামে একটি আর্সেনিকমুক্ত পানির ফিল্টার স্থাপন করা হয়েছিল। সেটিও ১০ বছর ধরে বিকল। অপর দিকে একই সময়ে জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তর কর্তৃক স্থাপিত পানি শোধনাগারটিও কোনো কাজে আসেনি। এটি এখন পরিত্যক্ত।

আর্সেনিক রোগাক্রান্ত নূর মোহাম্মদ বলেন, ‘ আমার সারা শরীরে কালো কালো গুটি দেখা দিয়েছে। বিশুদ্ধ খাবার পানির কোনো ব্যবস্থা নেই গ্রামজুড়ে। সরকারিভাবে এখানে বিশুদ্ধ খাবার পানি সরবরাহের ব্যবস্থা করা গেলে আমাদের উপকার হতো।’

সুরমা ইউনিয়ন পরিষদের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হালিম বীরপ্রতীক বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই। আমি খোঁজ নিয়ে দেখব।’

দোয়ারাবাজার উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আর্সেনিক রোগের চিকিৎসার কোনো ব্যবস্থা নেই। তবে প্রাথমিক অবস্থায় ভালোভাবে চিকিৎসা করলে রোগটি নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত