Ajker Patrika

সাধারণ গৃহবধুর অসাধারণ হয়ে ওঠার গল্প

খায়রুল বাসার নির্ঝর, ঢাকা
আপডেট : ০৮ আগস্ট ২০২৩, ১৩: ০০
সাধারণ গৃহবধুর অসাধারণ হয়ে ওঠার গল্প

বিশ্বজুড়ে এখন বায়োপিক নির্মাণের হিড়িক। বিশেষ করে ভারতে। ইতিহাসের পাতা থেকে, পত্রিকার কলাম থেকে এমন ব্যক্তি বা ঘটনাকে তুলে আনা; যেটার একটা পরিচিতি বা প্রভাব দর্শকদের মধ্যে আগে থেকেই আছে। সে জায়গা থেকে ‘তরলা’ খুব একটা আলাদা কিছু নয়। কারণ সিনেমাটি তৈরি হয়েছে ভারতীয় খাদ্যবিষয়ক লেখক ও শেফ তরলা দালালের গল্প নিয়ে। তাঁর জীবন, তাঁর স্বপ্ন, সাফল্য, ব্যর্থতা, পরিশ্রম—নানাদিকে আলো ফেলেছে সিনেমাটি। আর সেটা করতে গিয়ে এমন কিছু বক্তব্য এবং দৃষ্টিভঙ্গি দর্শকদের সামনে তুলে ধরেছেন পরিচালক পীযূষ গুপ্ত, যা ‘তরলা’কে আলাদা তো বটেই, কনটেন্ট হিসেবে করে তুলেছে অসাধারণ। আর এই অসাধারণ হয়ে ওঠার অনেকখানি কৃতিত্ব তরলা চরিত্রের অভিনেত্রী হুমা কুরেশির। জীবনের অন্যতম সেরা অভিনয় তিনি করেছেন তরলা সিনেমায়।

গল্প শুরু হয় নলিনের ভয়েসওভার দিয়ে, পরবর্তী সময়ে যে হবে তরলার জীবনসঙ্গী। বিশ্ববিদ্যালয়ের বারান্দা দিয়ে তরলার হেঁটে যাওয়ার দৃশ্যের ভেতরে শোনা যায় নলিনের কণ্ঠ, ‘প্রত্যেক সফল পুরুষের পেছনে থাকে একজন নারী, আর প্রত্যেক নারীর সাফল্যের পেছনে থাকে একটা গল্প।’ তরলারও গল্প আছে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষ পর্যায়ে এসেও কোনো নির্দিষ্ট লক্ষ্য তার নেই। ইচ্ছা আছে, এমন কিছু করার যাতে সে হয়ে উঠবে আলাদা কেউ। কিন্তু কী করবে, সেটা ভেবে পায় না। এসব ভাবতে ভাবতেই প্রকৌশলী নলিনের সঙ্গে তার বিয়েটা হয়ে যায়। সংসারে দুটি সন্তান আসে। সুখেরই সংসার। স্বামী তাকে বোঝে, ভালোবাসে। কোনো অনুতাপ, অভাব, অভিযোগ নেই। তবুও নিজের মতো কিছু করতে না পারার অপ্রাপ্তি মাঝে মধ্যেই তাকে তাড়া করে ফেরে।

তরলা আগাগোড়া ভেজিটারিয়ান। কিন্তু স্বামী তাকে লুকিয়ে মাঝেমধ্যেই অফিসে মাংস খায়। সেটা একদিন দেখেও ফেলে তরলা। স্বামীকে সে মাংসের বদলে আলু দিয়ে এমন কিছু বানিয়ে দেয়, যা স্বাদে হবে মাংসের কাছাকাছি। এভাবেই তরলার নতুন নতুন রেসিপি তৈরির চেষ্টার শুরু। দিনে দিনে তার ভালো রান্নার খবর ছড়িয়ে পড়ে এলাকায়। অনেক মেয়ে তার কাছে রান্না শিখতে আসে, যাতে তাদের ভালো বিয়ে হয়। শিক্ষার্থী সংখ্যা যখন বেশি হয়ে যায়, আপত্তি আসে বিল্ডিংয়ের সোসাইটি থেকে। বাড়িতে বসে রান্না শেখানো বন্ধ হয়ে যায় তরলার। এখান থেকেই শুরু হয় তার জীবনের নতুন মোড়।

স্বামীর পরামর্শে রেসিপি লেখা শুরু করে তরলা। বইও বের হয়। কিন্তু বিক্রি তো হয় না, সে সব বই পড়ে থাকে গোডাউনে। একদিন রেস্টুরেন্টে খেতে গিয়ে তরলা আবিস্কার করে, এ তো তারই রেসিপি। বই বিক্রি না হলেও তার রেসিপির গ্রহণযোগ্যতা যে আছে, সেটা বুঝতে পারে। তারপরের গল্পটা শুধুই সাফল্যের। সাধারণ এক গৃহবধু থেকে তরলার সেলিব্রিটি হয়ে ওঠার গল্প।

এই গল্পের ফাঁকফোঁকরে সাধারণ অনুজ্জল জীবনের কিছু আটপৌরে দর্শন ঢুকিয়ে দিয়েছেন পরিচালক। আজকাল অনেকেই ভাবে, সাফল্য আর সংসার পরস্পরবিরোধী। নারীর আগে ‘স্বাধীনতা’ শব্দটি বসাতে গেলে, যেন তাকে ঘর থেকে বেরুতেই হবে। একজন গৃহবধুও যে স্বামী-সন্তান-সংসার সামলে নিজের স্বপ্ন পূরণ করতে পারে, বা রান্নাঘরও যে কারও স্বপ্নের জায়গা হতে পারে; সেটা শিক্ষিত সমাজ খুব একটা স্বীকার করে না। ‘তরলা’ এই ভুল ধারণার বিরুদ্ধে এক সিনেমাটিক প্রতিবাদ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত