Ajker Patrika

চার লেন প্রকল্প সমীক্ষাতেই ঝুলে আছে এক দশক

কাউছার আলম, পটিয়া (চট্টগ্রাম) 
আপডেট : ০১ ডিসেম্বর ২০২২, ০৮: ২৬
Thumbnail image

এক দশক ধরে সমীক্ষাতেই ঝুলে আছে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের চার লেন প্রকল্পের কাজ। প্রায় ১৬০ কিলোমিটার দীর্ঘ এ মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করতে বছরে প্রায় চারবার সমীক্ষা চালিয়েছে দেশি-বিদেশি চার প্রতিষ্ঠান। ইতিমধ্যে মাঠপর্যায়ের সমীক্ষা শেষ হলেও মহাসড়কটি চার লেনে উন্নীত করার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এখনো হয়নি।

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পে ভারত, মিয়ানমার ও চীনের সঙ্গে সরাসরি আধুনিক সড়ক যোগাযোগব্যবস্থা স্থাপনের ওপর গুরুত্বারোপ করছে সরকার।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০১৩-১৫ সালে সুইডিশ কনসালট্যান্ট নামের একটি প্রতিষ্ঠান মহাসড়কটি চার লেনে উন্নীত করতে সমীক্ষা চালায়। সমীক্ষা প্রতিবেদনে ২২৫ কিলোমিটার মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণের সুপারিশ করা হয়। ওই সময় ব্যয় প্রাক্কলন করা হয় প্রায় সাড়ে ১০ হাজার কোটি টাকা। পরে এটি ‘কন্ট্রোলড-একসেস হাইওয়ে’ হিসেবে নির্মাণের পরিকল্পনা শুরু করে সওজ। ফলে কমে যায় মহাসড়কটির দৈর্ঘ্য। পরে দৈর্ঘ্য ধরা হয় ১৩৬ কিলোমিটার। এ জন্য ১৩ হাজার ৮৬৬ কোটি টাকা ব্যয় প্রাক্কলন করে একটি উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবও (ডিপিপি) প্রস্তুত করা হয়।

এদিকে ওই নকশায় মহাসড়কটির প্রশস্ততা ধরা হয় ৮২ ফুট। দুই পাশে ধীর গতির যানবাহনের জন্য থাকবে পৃথক লেন। পাশাপাশি ৩৩টি সেতু, ১৩৯টি কালভার্ট, ১৩টি ফুটওভার ব্রিজ ও দুটি ফ্লাইওভারের কথা বলা হয়েছে। মহাসড়কটি চার লেনে উন্নীত করতে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলায় ৩১৬ হেক্টর জমি অধিগ্রহণের প্রয়োজন হবে। পরে সমীক্ষা চালায় জাপানের মারুবেনি। সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বের (পিপিপি) মাধ্যমে মহাসড়কটি নির্মাণের পরিকল্পনা করে সরকার। ২০১৯ সালে প্রকল্পটির ডিপিপি পরিকল্পনা কমিশনে জমা দেয় সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়। তবে তা আলোর মুখ দেখেনি।

সর্বশেষ বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগ সমীক্ষা করেছে। এ বিভাগের অধ্যাপক ড. ইশতিয়াক আহমেদের নেতৃত্বে করা এ সম্ভাব্যতা যাচাই প্রতিবেদন ২০২১ সালের ডিসেম্বরে জমা দেওয়া হয়। প্রতিবেদনে দুটি বিকল্প প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।

জানতে চাইলে সওজের প্রধান প্রকৌশলী এ কে এম মনির হোসেন পাঠান বলেন, ইতিমধ্যে মাঠ পর্যায়ের সমীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। ডিপিপি তৈরি হলে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।

এদিকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের চারটি স্থানে নির্মাণ করা হয়েছে ছয় লেনের চারটি সেতু। যানজট এড়াতে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) অর্থায়নে বাইপাস সড়ক নির্মাণের উদ্যোগও নেওয়া হয়। তবে জাইকা ছয় লেনের বাইপাস নির্মাণ করতে গেলে বাদ সাধে সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ। সওজের ভাষ্য, মহাসড়ক নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়েছে চার লেনের। তাই বাইপাসও চার লেনের নির্মাণ করতে হবে। না হয় বাইপাসের প্রবেশপথে যানজটের সৃষ্টি হবে।

সওজের দোহাজারী সার্কেলের নির্বাহী প্রকৌশলী সুমন সিংহ বলেন, মাঠ পর্যায়ের সমীক্ষা শেষ হলেও মহাসড়কটি চার লেনে উন্নীত করার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এখনো হয়নি। চার লেনের চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সড়ক নির্মাণের বিষয়টি মাথায় রেখে সড়কের চারটি স্থানে ছয় লেনের সেতু নির্মাণ করছে সওজ। এর মধ্যে চন্দনাইশের বরুমতি খালের ওপর সেতু নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে। পটিয়ার ইন্দ্রপুল, দোহাজারীর শঙ্খ নদী ও চকরিয়ার মাতামুহুরী নদীর ওপর আরও তিনটি ব্রিজ নির্মাণের কাজ শেষ পর্যায়ে। কথা ছিল এসব ব্রিজ নির্মাণ শেষ হলে পটিয়া, চন্দনাইশ, দোহাজারী, লোহাগাড়া, আমিরাবাদ, সাতকানিয়া, কেরানী হাট ও চকরিয়ায় বাইপাস সড়ক নির্মাণ করা হবে। জাইকা এসব বাইপাস নির্মাণে অর্থায়ন করবে। বাইপাসের পর সড়ক নির্মাণ করা হবে।

সওজ বিভাগ চট্টগ্রাম সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মোহাম্মদ জাহিদ হোসেন বলেন, ২০২৩ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০২৬ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত প্রকল্প বাস্তবায়নের মেয়াদ ধরা হয়েছে। দেশের টাকাতেই বাস্তবায়নের রোডম্যাপ ঠিক করা হয়েছে। প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়েছে ৫ হাজার ৮২৮ কোটি ৪১ লাখ টাকা। এরই মধ্যে মহাসড়কে উন্নীতকরণে ডিপিপি জমা হয়েছে। মন্ত্রণালয় থেকে প্ল্যানিং কমিশন হয়ে অনুমোদন হয়ে এলে কাজ শুরু করা যাবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত