Ajker Patrika

তালাকের প্রতিশোধ নিতেই সামিউলকে হত্যা সৎবাবার

বগুড়া ও শাজাহানপুর প্রতিনিধি
Thumbnail image

১০ বছরের সন্তান সামিউলকে নিয়ে তৃতীয় বিয়ে করেন সালেহা। কিন্তু সৎবাবা সামিউলকে সহ্য করতে পারতেন না। যখন-তখন মারধর করে অনাহারে রাখতেন শিশুকে। আর স্ত্রীকে বলতেন ছেলেকে নানি বা খালার কাছে রেখে আসতে। কিন্তু ছেলেকে নিজের কাছেই রাখতে চাইতেন সালেহা।

কপর্যায়ে তিনি তৃতীয় স্বামীকে তালাক দিয়ে ছেলেকে নিয়ে বোনের বাড়িতে গিয়ে ওঠেন। এই তালাকের প্রতিশোধ নিতেই সামিউলকে হত্যা করেন সৎবাবা ফজলুর রহমান।
সহযোগী ছিলেন অনিতা রানী নামের এক নারী। তাঁদের দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

শাজাহানপুর উপজেলার খরনা ইউনিয়নের কমলাচাপড় গ্রামের বাসিন্দা ফজলুর রহমান ও গোহাইল ইউনিয়নের চেলো গ্রামের বাসিন্দা অনিতা রানী। সালেহার করা মামলায় তাঁদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

হত্যার শিকার সামিউল ইসলাম উপজেলার সাজাপুর গ্রামের বাসিন্দা। এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন বগুড়া পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী।

গত বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে আসামির জবানবন্দির বরাত দিয়ে পুলিশ সুপার বলেন, মাদক সেবনের কারণে বনিবনা না হওয়ায় প্রায় দেড় মাস আগে দ্বিতীয় স্বামী জাহাঙ্গীর আলমকে তালাক দেন সালেহা। জাহাঙ্গীর ও সালেহার দম্পতির সন্তান সামিউল। ১০ বছরের ছেলে সামিউলকে নিয়েই দিনমজুর ফজলুর রহমানকে বিয়ে করেন। কিন্তু ফজলুল শিশুটিকে মেনে নেননি।

তিনি সালেহাকে বলতেন শিশুটিকে নানি অথবা খালার কাছে রেখে আসতে। কিন্তু শিশুকে নিজের কাছেই রাখতে চাইতেন সালেহা। একপর্যায়ে চলতি মাসের ১১ তারিখে ফজলুরকে তালাক দেন। এরপর ছেলেকে নিয়ে বোনের বাড়িতে আশ্রয় নেন। ১০ মে ছেলেকে সাজাপুর পূর্ব দক্ষিণপাড়ায় তালিমুল হাফিজিয়া মাদ্রাসায় রেখে আসেন।

এদিকে সালেহার তালাকের প্রতিশোধ নিতে সামিউলকে হত্যার পরিকল্পনা করেন ফজলুর। পরিকল্পনা অনুযায়ী ১৬ মে মাদ্রাসায় গিয়ে ছেলেকে আনতে চান তিনি। কিন্তু মাদ্রাসার নিয়ম অনুযায়ী মায়ের অনুমতি ছাড়া শিশুকে ছাড়া যাবে না বলে জানান মাদ্রাসা শিক্ষক। পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী আরেক দিনমজুর অনিতা রানী (৩৫) নিজেকে সামিউলের মা পরিচয় দিয়ে মাদ্রাসা শিক্ষকের কাছে ফোন দেন। এ সময় ফজলুরের সঙ্গে সামিউলকে পাঠিয়ে দেওয়ার জন্য বলেন অনিতা। শিক্ষক সে সময় সামিউলকে যেতে দেন।

এরপর সামিউলকে বাড়ি নেওয়ার কথা বলে উপজেলার আড়িয়া ইউনিয়নের মানিকদিপা উত্তরপাড়া গ্রামের চড়াপাথারে নিয়ে যায় ফজলুর। এরপর ঘটনাস্থলে লাউয়ের মাচার নিচে বাঁশের খুঁটির সঙ্গে গলায় রশি দিয়ে শ্বাসরোধে সামিউলকে হত্যা করে। পরদিন মঙ্গলবার স্থানীয় ব্যক্তিদের দেওয়া খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে সামিউলের মরদেহ উদ্ধার করে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এবং গণমাধ্যমে প্রকাশিত ছবি দেখে লাশ শনাক্ত করেন সালেহা।

সামিউলের মা সালেহা বেগম বলেন, তালাক দেওয়ার পরও ফজলুর রহমান তাঁর পিছু ছাড়ছিলেন না। আবারও সংসার করার জন্য চাপাচাপি করছিলেন। কিন্তু ছেলেকে ছাড়া সংসার করতে রাজি হননি বলেই ছেলেকেই হত্যা করেছে ফজলুর।

শাজাহানপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, সালেহা বেগম বাদী হয়ে ফজলুর রহমান ও অনিতা রানীকে আসামি করে মামলা করেছেন। গ্রেপ্তারকৃত দুই আসামিকে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত