Ajker Patrika

‘সিআইডি’র নেশা

সম্পাদকীয়
‘সিআইডি’র নেশা

আট বছর বয়সী আদিল মোহাম্মদ সোহানকে হত্যা করেছে তারই গৃহশিক্ষক। এই শিক্ষাদাতা ভারতীয় সিরিয়াল সিআইডি দেখে অপহরণের নীলনকশা করে। সেই চিরাচরিত নিয়মে অপহরণের পর পরিবারের কাছে মুক্তিপণ চাওয়ার চেষ্টা করে সে। তার আগে শিশুটিকে মুখ ও গলা চেপে ধরে অজ্ঞান করে ফেলে। অজ্ঞান হওয়ার পর যা যা ঘটেছে, তাতে আর বাঁচেনি শিশুটি। গৃহশিক্ষক হত্যা করেছে এই মাসুম বাচ্চাটাকে।

কষ্টদায়ক এই ঘটনা ঘটেছে চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জে। ১৭ বছর বয়সী এসএসসি পরীক্ষার্থী এই গৃহশিক্ষক একটি পরিবারের স্বপ্নকে ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়েছে স্রেফ কিছু অর্থ উপার্জনের মতলবি ভাবনার কারণে। বহুদিন আগেই ‘বোকা বাক্স’ নামে পরিচিত হওয়া টেলিভিশনে যে সিরিয়াল দেখেছে, তারই বাস্তব রূপ দিতে গিয়ে এই মর্মান্তিক ঘটনার জন্ম দিয়েছে সে। গৃহশিক্ষক ছেলেটির মনে তো সিআইডির সদস্য হওয়ারও ইচ্ছে জাগতে পারত। তা না জেগে কেন তার মনে অপরাধী হওয়ার শখ জাগল, সেটা জানতে পারলেই তার মনস্তত্ত্ব বোঝা সম্ভব হবে।

এ যুগে কেউ যদি বলে ‘সূর্য পৃথিবীর চারদিকে ঘোরে’, তাহলে তা নিয়ে হাসাহাসি করা যেতেই পারে। কিন্তু একসময় ধর্মীয় লেবাসে এর বিপরীত কথা চালু ছিল এই পৃথিবীতেই। গ্যালিলিওর সেই সংগ্রামের কথা নিশ্চয়ই নতুন করে মনে করিয়ে দিতে হবে না।

কথা হলো, টেলিভিশন বা ভিজ্যুয়াল মিডিয়ায় প্রচারিত যেকোনো অনুষ্ঠানকে যদি নিজের জীবনের সঙ্গে মিলিয়ে নিয়ে সে অনুযায়ী কাজ করার লোকের সংখ্যা বেড়ে যায়, তাহলেই সর্বনাশ। একবার ভেবে দেখুন, শেক্‌সপিয়ারের লেখা ‘ম্যাকবেথ’ নাটক দেখে কেউ হতে চাইছেন লেডি ম্যাকবেথ। স্বামীকে হত্যার ইন্ধন দিচ্ছেন তিনি! ‘ওথেলো’ দেখে বদমাশ ইয়াগো হওয়ার ইচ্ছে জাগতে পারে কারও। ডেসডেমোনাকে হত্যা করার জন্য যিনি প্রলুব্ধ করতে পারেন ওথেলোকে। কিংবা কিং লিয়রের ছোট মেয়ে কর্ডেলিয়ার মতো না হয়ে বড় দুই মেয়ে গনেরিল আর রিগানের মতো হতে চাইতে পারে মন! লিয়রের জীবনটাকে চূর্ণবিচূর্ণ করে দিতে পারেন তারা।

ভারতের বাংলা বা হিন্দি সিরিয়ালের দর্শক আমাদের দেশে কম নয়। বহুবার এই আসক্তির কুফল নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এই সিরিয়ালগুলোয় নারীদের যেভাবে অবমাননা করা হয়, সমাজের দুষ্টক্ষতদের যেভাবে বড় করে দেখানো হয়, যে ধরনের কাহিনির প্রতি আকর্ষণ সৃষ্টি করা হয়, তাতে একজন মানুষের স্বাভাবিক জীবন কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, তা নিয়ে কোনো গবেষণা হয়েছে বলে মনে পড়ে না। কিন্তু আমাদের দেশে, বিশেষ করে নারীদের মধ্যে এসব সিরিয়ালে ডুবে যাওয়ার প্রবণতা রয়েছে, এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই।

জীবন ও ভার্চুয়াল মিডিয়ার মধ্যে পার্থক্য বুঝতে না পারলে এই গৃহশিক্ষকদের মতো অপরাধীদের সংখ্যা বাড়বে। কোন উপায়ে এই সংকট কাটিয়ে ওঠা যায়, তা নিয়ে সমাজবিজ্ঞান, সংস্কৃতিজগৎসহ যাঁরা বিষয়টি বিশ্লেষণ করতে পারেন, তাঁদের এগিয়ে আসা উচিত। নইলে আদিল নামের ছোট্ট শিশুটির মতো অনেকেই হবে হত্যাকাণ্ডের শিকার।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত