Ajker Patrika

বস্তা বস্তা টাকা!

সম্পাদকীয়
বস্তা বস্তা টাকা!

বস্তা বস্তা টাকার কথা শোনা যাচ্ছে অনেক। বিভিন্ন লেনদেনে নাকি বস্তা বস্তা টাকা দেওয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে মাত্র দুটো নামের উল্লেখ করছি। তাঁরা সত্যিই বস্তা বস্তা টাকা নিয়েছেন কি না, তা তদন্ত করে দেখার বিষয়। আমরা তদন্ত হওয়ার আগে এ নিয়ে বাড়তি কথা বলতে পারি না। শুধু অভিযোগগুলোর কথা মাথায় রেখে বলতে চাই, লেনদেনের ক্ষেত্রে ‘বস্তা বস্তা’ টাকার কথা যে ব্যবহৃত হচ্ছে, এটাই বুঝিয়ে দেয় ক্ষমতাশালীদের নৈতিক অবস্থানটি।

সদ্য সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানকে নাকি বস্তা বস্তা টাকা ঘুষ দিতে হতো। এ নিয়ে বিস্তারিত খবর প্রকাশিত হয়েছে পত্রপত্রিকায়। কোন পদে নিয়োগের জন্য কত টাকা নিতেন তিনি, সে কথাও বর্ণিত হয়েছে সেই সব খবরে।

অন্যদিকে সম্প্রতি চট্টগ্রামে সেনা অভিযান চলেছে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিনের বাড়িতে। এস আলমের কর্মকর্তারা নাকি বস্তাভর্তি টাকা নিয়ে মীর নাছিরের বাড়ি গিয়েছিলেন। সে খবর পেয়ে চট্টগ্রামের চকবাজারের গ্রামার স্কুলের পাশে বিএনপির নেতার বাড়িতে চলেছে সেনা অভিযান।

কোনো ব্যক্তিকে দোষী সাব্যস্ত করার জন্য আমরা প্রসঙ্গটির উল্লেখ করছি না। আমাদের ভাবনায় এই যে বস্তা বস্তা টাকার প্রসঙ্গ এল, সেটাই আলোচনার বিষয়। আমরা ব্যাংক থেকে হাজার কোটি টাকা লোপাটের কথা শুনেছি আগে। প্রথম যখন ‘হাজার কোটি’ টাকার কথা শোনা গেছে, তখন বিস্ময়ে হতবাক হতে হয়েছে। কীভাবে গুনলে, কত দিনে হাজার কোটি টাকা গোনা যাবে, সে টাকার আয়তন কতটা হতে পারে, একটা বড় ঘর ভরে যাবে টাকায় টাকায়—এ রকম কত কথা ঘুরেছে মাথায়। তারপর একসময় যখন হাজার কোটি টাকার কথা একের পর এক প্রকাশিত হতে থাকল, তখন থেকে এই বিশাল অঙ্ক খুব বেশি প্রতিক্রিয়ার জন্ম দিত না মনে। এ কারণেই বস্তা বস্তা টাকাও যে ধাক্কা দিচ্ছে মনে, সেটাও একসময় সয়ে যাবে।

সয়ে যাওয়ার কথা বলা হচ্ছে এই কারণে যে আমাদের দেশে ঘুষ-বাণিজ্যের অবসান ঘটে গেছে, এমনটা মনে করার সময় এখনো আসেনি। আমলাতন্ত্র, রাজনীতিক, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্তাব্যক্তিরা যেভাবে অনিয়মে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছেন, তাতে খুব শিগগিরই এ থেকে নিষ্কৃতি মিলবে কি না, তা নিয়ে দুশ্চিন্তা আছে। আমাদের তহশিল ও সাব-রেজিস্ট্রি অফিসগুলো দুর্নীতিমুক্ত হয়েছে কি না, সেদিকে নজর দিলে আসলেই ঘুষ-বাণিজ্য নিবারণের সুযোগ আছে বলে মেনে নিতে হবে। নইলে ‘যেই লাউ সেই কদু’ প্রবাদবাক্যের চাপে পড়ে দিশেহারা হয়ে থাকবে জনগণ। 

বড় বড় অঙ্গীকার করে অনেকেই রাষ্ট্র পরিচালনার ভার কাঁধে তুলে নেন। শুরুতে সেই কাঁধগুলোকে যথেষ্ট চওড়া মনে হলেও পরবর্তীকালে দেখা যায়, তা আগের সরকারের দুর্নীতির ধারাবাহিকতামাত্র। রাষ্ট্র সংস্কারের অঙ্গীকার নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় এসেছে, তাদের কর্মকাণ্ড ও কর্মপরিধিই বুঝিয়ে দেবে, আমাদের গন্তব্য ঠিক আছে কি না। নইলে বস্তা বস্তা টাকার গল্প আরও অনেকবার শুনতে হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত