Ajker Patrika

মশায় অতিষ্ঠ গাজীপুরবাসী

গাজীপুর প্রতিনিধি
আপডেট : ১৪ মার্চ ২০২২, ১০: ৩৩
মশায় অতিষ্ঠ গাজীপুরবাসী

শিল্পনগরী গাজীপুর কর্মব্যস্ত এক মহানগরীর নাম। এখানে প্রায় ৪০ লাখ মানুষের বসবাস। নগরীতে সন্ধ্যা থেকে শুরু হয় মশার রাজত্ব। শীতের শেষে তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নগরীতে বেড়ে গেছে মশার উপদ্রব।

কিছুদিন ধরে গাজীপুর মহানগরীর প্রায় সব এলাকায় মশা অত্যধিক বেড়ে গেছে। মশার উপদ্রব ভয়াবহ আকার ধারণ করলেও গাজীপুর সিটি করপোরেশনের এ ব্যাপারে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেই। সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে নগরীর কোথাও মশার ওষুধ ছিটানো হচ্ছে না বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন নগরবাসী। তাঁদের অভিযোগ, গাজীপুর সিটি করপোরেশন এখনো ঘুমিয়ে আছে। আর নগর কর্মকর্তারা বলছেন, মশা নিয়ন্ত্রণে শিগগিরই বিপুল প্রস্তুতি নিয়ে অভিযানে নামবেন তাঁরা।

মহানগরীর বিভিন্ন এলাকার মানুষ অভিযোগ করেছেন, তাঁদের এলাকায় মশা মারার ওষুধ ছিটানো হয় না। দিনের বেলাতেই মশার যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন তাঁরা। রাত হলে এ যন্ত্রণা আরও বাড়ে। মশারি টানিয়ে, কয়েল জ্বালিয়ে, ইলেকট্রিক ব্যাট কিংবা মশানাশক ওষুধ স্প্রে করেও সুফল মিলছে না বলে অভিযোগ করেন তাঁরা। গাজীপুরের বাসিন্দারা যেন মশার কাছে অসহায়, জিম্মি।

মহানগরবাসীর অভিযোগ, নিয়মিত ওষুধ না ছিটানোয় মশার উপদ্রব বেড়েছে। বিভিন্ন এলাকার জলাশয় নিয়মিত পরিষ্কার না করায় এগুলো মশার প্রজননক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শীতের শেষে তাপমাত্রা বাড়ায় প্রকৃতিতে যে মশার ডিম থাকে সেগুলো একযোগে ফুটে যায়। ফলে ফেব্রুয়ারি ও মার্চে মশার ঘনত্ব বেড়ে যায়। কিন্তু গত বছরের এই সময়ের তুলনায় বর্তমানে মশার ঘনত্ব বেড়েছে বহুগুণ। মশা নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ নেওয়া না হলে চলতি মাসে মশার ঘনত্ব বেড়ে চরমে পৌঁছাবে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, মহানগরীর বিভিন্ন এলাকার ড্রেন, পুকুর, ডোবা, নালা-নর্দমার কচুরিপানা ও ময়লা পরিষ্কার না করায় সেগুলো এখন মশা উৎপাদনের খামারে পরিণত হয়েছে। বিশেষ করে শুষ্ক মৌসুমের কিউলেক্স মশার যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ নগরবাসী।

গাজীপুর মহানগরীর জয়দেবপুর বাজারের ব্যবসায়ী অসিত সাহা বলেন, এলাকায় মশা বেড়ে গেছে। সন্ধ্যার পর ঘরে বসে থাকা যায় না। মশার যন্ত্রণায় দরজা-জানালা খোলা যায় না।

মহানগরীর নীলেরপাড়া এলাকার রেজাউল বারী বাবুল বলেন, গাজীপুরে বসবাসকারী নাগরিকদের মধ্যে এখন মশা একটি আতঙ্কের নাম। বাসাবাড়ি থেকে শুরু করে অফিস-আদালতসহ সব জায়গায় মশার রাজত্ব। সিটি করপোরেশনের সব এলাকার পরিস্থিতি প্রায় একই। মশার যন্ত্রণায় কোথাও একদণ্ড দাঁড়ানো যায় না।

নগরীর উত্তর ছায়াবিথি এলাকার বাসিন্দা আব্দুল হামিদ বলেন, ১০-১২ দিন ধরে মশা বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সন্ধ্যার পর থেকে মশারি টাঙিয়ে বসে থাকতে হয়।

গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ডা. আব্দুল কাদের এ বিষয়ে বলেন, দিনদিন মশার ঘনত্ব বাড়ছে। ফলে ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু আর চিকুনগুনিয়া রোগের প্রাদুর্ভাব বাড়তে পারে। মশা নিয়ন্ত্রণে পরিবেশগত ব্যবস্থাপনার দিকে নজর দিতে হবে। আমাদের চারপাশকে পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে, যেন কোথাও মশা না জন্মায়। জনসাধারণকে এসব বিষয়ে সম্পৃক্ত করতে হবে। নর্দমা ও ডোবা পরিষ্কার করে এগুলোর পানি চলমান করে দিতে হবে। একই সঙ্গে সেখানে লার্ভিসাইড, অ্যাডাল্টিসাইট কিংবা গাপ্পি মাছ ছাড়তে হবে।

গাজীপুর সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম এ বিষয়ে জানান, ‘বিষয়টি নিয়ে মেয়রের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। আমরা এ বিষয়ে সচেতন আছি। নগরবাসী খুব শিগগিরই সুফল পাবেন।’

মশা নিয়ন্ত্রণে সিটি করপোরেশন কী ব্যবস্থা নিচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত মেয়র আসাদুর রহমান কিরণ বলেন, মশা নিধনের জন্য শতাধিক ফগার মেশিন কেনা হয়েছে। সিঙ্গাপুর থেকে আনা হয়েছে পোল্যান্ডের তৈরি ‘বেন্টাসাইড ২৫০’ নামক মশার ওষুধ। ইতিমধ্যে সব ওয়ার্ডে এসব পাঠানো হয়েছে। খুব শিগগির মশা নিধনে সর্বাত্মক অভিযান চালানো হবে। নালা-নর্দমা পরিষ্কার করার উদ্যোগ নেওয়া হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত