সাধারণ ভোটার টানতে জোর প্রচারে দুই প্রার্থীই

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন (নাসিক) নির্বাচনে প্রধান দুই প্রতিদ্বন্দ্বীর মধ্যে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভীই একমাত্র দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করছেন। বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক স্বতন্ত্র প্রার্থী তৈমূর আলম খন্দকার পাচ্ছেন দলের আকুণ্ঠ সমর্থন। তবে নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে শুধু দলীয় ভোট যে যথেষ্ট নয়, তা জানেন দুই প্রার্থীই। আর তাই তো সাধারণ ভোটার টানতে নানা কৌশল অবলম্বন করছেন দুজনই, চালাচ্ছেন প্রচার-প্রচারণা। সব মিলিয়ে নারায়ণগঞ্জে ভোটের হাওয়া লেগেছে পুরোদমে।

নারায়ণগঞ্জের টানা দুইবারের ও দেশের একমাত্র নারী সিটি মেয়র আইভীর জনপ্রিয়তা যথেষ্ট। দৃষ্টিনন্দন স্থাপনা ও সড়ক তৈরি করে তিনি নতুন রূপ দিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ শহরের। তাঁর কর্মদক্ষতা ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আপসহীন অবস্থান তাঁকে করেছে ব্যাপক জনপ্রিয়। এই বিষয়টিই আইভীকে নির্বাচনী দৌড়ে এগিয়ে রাখবে বলে আওয়ামী লীগ নেতাদের প্রত্যাশা।

অপরদিকে নির্বাচনে এসেই দলমতের বাইরে নিজেকে তুলে ধরে ভিন্ন চমক দেখিয়েছেন তৈমূর আলম খন্দকার। নারায়ণগঞ্জবাসীর চাওয়া-পাওয়াকে ভিত্তি করে হাজির হয়েছেন, এমন দাবি করে প্রচারণা চালাচ্ছেন তিনি। তুলে ধরছেন সিটি করপোরেশনের নানা অসঙ্গতির চিত্র। এদিকে বিএনপির সাবেক দুই সাংসদ গিয়াস উদ্দিন ও আবুল কালামকে পাশে পেয়েছেন তৈমূর।

মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এ টি এম কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘মানুষ পরিবর্তন চায়, তারা নতুন করে এই শহরকে দেখতে চায়। আর সেই বিষয়গুলোকে লক্ষ্য করেই আমরা প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছি।’

নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনে ভোটগ্রহণ করা হবে আগামী ১৬ জানুয়ারি। নারায়ণগঞ্জ সদর, সিদ্ধিরগঞ্জ ও বন্দর—এই তিন থানা নিয়ে সিটি করপোরেশন গঠিত। এই সিটিতে এবার ভোটার রয়েছেন ৫ লাখ ১৭ হাজার ৩৫৭ জন। এর মধ্যে অন্তত ৫৫ হাজার হিন্দুধর্মাবলম্বী রয়েছেন বলে জানিয়েছেন মহানগর পূজা উদ্‌যাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক উত্তম কুমার সাহা। সে হিসাবে এবারের ভোটেও হিন্দুধর্মাবলম্বী সাধারণ ভোটারেরাও ফল নির্ধারণে বিশেষ ভূমিকা রাখবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিভিন্ন নির্বাচনের ফলাফল পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, সিদ্ধিরগঞ্জে ভোটার বেশি বিএনপির। বন্দরে আওয়ামী লীগের পাশাপাশি আইভীর ব্যক্তিগত অনুসারী রয়েছে।

তবে আইভীর ক্ষেত্রে এসব হিসাব-নিকাশ খুব একটা কাজে আসে না। তার প্রতিফলন দেখা গেছে ২০০৩ সালের পৌর নির্বাচন এবং ২০১১ ও ২০১৬ সালের সিটি নির্বাচনের ফলাফলে। আওয়ামী লীগ মনে করে, এবার আইভীর অবস্থান আরও শক্ত। যদিও নির্বাচনের মাঠে শামীম ওসমানপন্থি আওয়ামী নেতাদের এখন পর্যন্ত দেখা যায়নি। ফলে ২০১৬ সালের নির্বাচনে যেভাবে উত্তর-দক্ষিণ মিলে আইভীর পক্ষে কাজ করেছিল, এবার তাতে কিছুটা ভাটা দেখা গেছে।
তৈমূর আলম খন্দকার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জবাসী সবচেয়ে বেশি হোল্ডিং ট্যাক্স দেয়। ট্রেড লাইসেন্স করতে লিখিত ফি নেয়, আবার অলিখিত ফিও দিতে হয়। পানির পাইপ বসানোর আগেই দেড় লাখ টাকা জামানত দিতে হয়। এই শহরে যানজট, জলাবদ্ধতা লেগেই থাকে। অব্যবস্থাপনার কারণে কেউ শাবলের আঘাতে মারা যায়, আবার কেউ দুর্ঘটনার শিকার হয়। বায়ুদূষণ, পানিদূষণ, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অভাব পুরো শহরে। আমি সিটি করপোরেশনকে গণমুখী করব। সবাই এর সুবিধা পাবে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির শহর করতে চাই আমরা। আর এ কারণেই সাধারণ ভোটার নিজেদের ভাগ্যোন্নয়নে আমাকে বেছে নেবেন।’

অবশ্য আইভীই নারায়ণগঞ্জের মেয়র হিসেবে ফিরবেন বলে মনে করেন সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের আহ্বায়ক রফিউর রাব্বী। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা আইভীকে সমর্থন দিচ্ছি কারণ, নারায়ণগঞ্জের বাস্তবতা যেকোনো জায়গার তুলনায় ভিন্ন। নারায়ণগঞ্জে একটি অপশক্তির বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে আমরা লড়াই করছি। সেই লড়াইয়ে আইভী আমাদের সহযাত্রী ও সহযোদ্ধা। নারায়ণগঞ্জের মানুষ জানে, ওই অপশক্তির বিরুদ্ধে সাহসী কথা বলে আইভী। আর সেই কারণে যাঁরা আওয়ামী লীগকে পছন্দ করেন না, তাঁরাও আইভীকে বেঁছে নেবেন।’