Ajker Patrika

সেই বুলবুলি রানীর ছেলেরা এএসপি, ইঞ্জিনিয়ার

নন্দীগ্রাম (বগুড়া) প্রতিনিধি
আপডেট : ২০ এপ্রিল ২০২২, ১৩: ১১
Thumbnail image

বুলবুলি রানী একজন দিনমজুরের স্ত্রী। তিন ছেলে-মেয়ের মা। সন্তানদের পড়াশোনা করানোর জন্য একসময় অন্যের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করতেন। হাত পাততেন মানুষের কাছে। আজ তাঁর এক ছেলে এএসপি। আরেক ছেলে মেরিন ইঞ্জিনিয়ার। তাঁর এক পুত্রবধূ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। ছেলেদের চোখে বুলবুলি ও তাঁর স্বামী পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মা-বাবা।

রত্নগর্ভা বুলবুলির বাড়ি বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলার সদর ইউনিয়নের হাটুয়া গ্রামে। মাত্র ১৩ বছর বয়সে বিয়ে হয় তাঁর। স্বামী যুধিষ্ঠির চন্দ্র বর্মণ তখন ছিলেন চালচুলোহীন দিনমজুর। এই দম্পতির দুই ছেলে ও এক মেয়ে। তাঁরা হলেন বিমল চন্দ্র বর্মণ, জয় চন্দ্র বর্মণ ও লক্ষ্মী রানী। স্বামীর সামান্য আয়ে সংসার চলছিল না। তাই বুলবুলি শুরু করেন ঝিয়ের কাজ। এত অনটনের মধ্যেও সন্তানদের পড়াশোনা করানোর স্বপ্ন দেখেন। দুই ছেলে আর মেয়েটিকে ভর্তি করান গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। ওঁরা পড়াশোনায় ভালো। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পড়াশোনা শেষ হয়। পরে তাঁদের ভর্তি করা হয় নন্দীগ্রাম পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ে।

এদিকে ছেলে-মেয়ের লেখাপড়ার খরচ বাড়তে থাকে। তাই অল্প বয়সেই মেয়েটার বিয়ে দিতে বাধ্য হন। তবে দুই ছেলে পড়াশোনা চালিয়ে যান। এইচএসসি পাসের পর বুলবুলির বড় ছেলে বিমল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিজ্ঞান বিষয়ে ভর্তি হন। এদিকে তাঁদের ছোট ছেলের ভর্তির ফরম কেনার মতো টাকা ছিল না। নন্দীগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল বারি বারেক এক হাজার টাকা দেন। ছোট ছেলে জয় চন্দ্র সেই টাকা নিয়ে চট্টগ্রাম মেরিন একাডেমিতে ভর্তি হন। দুই ছেলের লেখাপড়ার খরচ বেড়ে যাওয়ায় বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, জনপ্রতিনিধি, ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছে সাহায্য চান বুলবুলি। তাঁদের বড় ছেলে বিমল চন্দ্র বর্মণ এখন এএসপি আর পুত্রবধূ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। ছোট ছেলে জয় চন্দ্র বর্মণ মেরিন ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে চীনের একটি জাহাজ কোম্পানিতে কাজ করেন।

এই সংগ্রামের স্বীকৃতিস্বরূপ বুলবুলি রানী ২০২০ সালে উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ জয়িতা পুরস্কার লাভ করেন। তিনি ২০২২ সালে রাজশাহী বিভাগীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ জয়িতার পুরস্কার পান।

মায়ের ত্যাগ আর সংগ্রামের কথা জানতে চাইলে মেরিন ইঞ্জিনিয়ার জয় চন্দ্র বর্মণ বলেন, ‘অনেক লড়াই-সংগ্রাম করে মা-বাবা আমাদের মানুষ করেছেন। কোনো সন্তানই তার পিতা-মাতার ঋণ শোধ করতে পারে না। আর আমার মা-বাবা তো এই পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মা-বাবা।’

বুলবুলি রানী বলেন, ‘জমিজিরাত ছিল না আমাদের। অন্যের জায়গায় ছোট্ট একটা ঘরে জীবনের বেশির ভাগ সময় কেটে গেছে। স্বামীকে নিয়ে কঠিন লড়াই করেছি। ছেলেরা পড়াশোনা করতে চাইত। আমরা চেষ্টা করেছি। কুলিয়ে উঠতে পারিনি। তখন মানুষের কাছে হাত পেতেছি। তবে অনেকেই সাহায্য করেছেন। এ জন্য আমি সবার কাছে কৃতজ্ঞ। আমাদের ছেলেরা দেখিয়ে দিয়েছে, ইচ্ছা থাকলে মানুষের কাছে কোনো কিছুই অসম্ভব নয়। আমার ছেলে-মেয়েদের জন্য সবার আশীর্বাদ চাই।’

এই সম্পর্কিত পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত