Ajker Patrika

পানির নিচে কৃষকের ধান

ঘিওর (মানিকগঞ্জ) প্রতিনিধি
আপডেট : ২৩ মে ২০২২, ১১: ৫৬
পানির নিচে কৃষকের ধান

কৃষকের হাসি এখন কান্নায় পরিণত হয়েছে। টানা দুই দিনের বৃষ্টি এবং শনিবার ভোরের ঝোড়ো বাতাসে মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলায় ধান খেতে পানি জমেছে। মাঠের পর মাঠ পাকা বোরো ধান মাটিতে শুয়ে পড়েছে।

একবুক স্বপ্ন নিয়ে কৃষকেরা বোরো ধানের আবাদ করেছিলেন। অনেকেই ধান কাটা শুরু করেছিলেন, কিন্তু শুকাতে পারেননি। আবার অনেক কৃষক ধান কেটে খেতে রেখে দিয়েছিলেন পরের দিন ঘরে তুলবেন বলে। কিন্তু শনিবার ভোরের ঝড়ে সেসব ধান পানিতে ডুবে গেছে। অনেক কৃষকের কাটা ধান এখন পানিতে হাবুডুবু খাচ্ছে। এমন অবস্থায় শ্রমিকও পাচ্ছেন না কৃষকেরা। দ্রুত পানি না সরলে পানির নিচে ডুবে থাকা ধান নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা করছেন কৃষকেরা।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি বোরো মৌসুমে উপজেলায় ৬ হাজার ২৯০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে। উপজেলার বানিয়াজুরী, ঘিওর সদর, বালিয়াখোড়া, নালী, সিংজুরী, বড়টিয়া এবং পয়লা এলাকার কৃষকেরা ব্যাপক হারে বোরো আবাদ করেছেন। আবাদি জমিতে বোরোর বাম্পার ফলন হয়েছে। পাকা ধানের সোনালি শিষ যেন হাতছানি দিচ্ছিল। নতুন ধানের ম-ম গন্ধে মুখর ছিল গ্রামের পর গ্রাম। আশায় বুক বেঁধেছিলেন কৃষকেরা। এসব এলাকার কৃষকদের হাহাকার এখন বৈরী প্রকৃতি নিয়ে।

অনেক কৃষকই আধা পাকা ধান কেটেছেন পচে যাওয়ার ভয়ে। শ্রমিক সংকটের কারণে ওই ধানও দ্রুত ঘরে তুলতে পারেননি তাঁরা। তলিয়ে যাওয়া ধান নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কৃষকেরা। উপজেলার অধিকাংশ নিচু এলাকার কৃষকদের একই অবস্থা। বদলি শ্রমিকের এক দিনের মজুরি তিন বেলা খাওয়া ছাড়াই ১ হাজার ১০০ টাকা। এ খরচ দিয়ে ধান থেকে লাভ করা একেবারেই অসম্ভব বলে জানিয়েছেন এলাকার কৃষকেরা। এমনকি কম্বাইন হারভেস্টার মেশিন দিয়েও কাটা যাচ্ছে না ধান।

উপজেলার বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা যায়, মাঠগুলোয় এক দিন আগেও সোনালি ধান মাথা তুলে দাঁড়িয়ে থাকলেও এখন তা বাতাসে হেলে গিয়ে শুয়ে পড়েছে। অনেক মাঠে বৃষ্টির পানি জমে আছে। এক ধানের শিষ অন্য ধানের সঙ্গে হেলে পড়ায় সদ্য পাকা ধান ঝরে পড়তে শুরু করেছে। আর যেসব খেতের ধান এখনো পাকেনি, সেসবের অবস্থাও নাজুক। নরম কাঁচা ধান এবং সদ্য শিষ আসা ধানগাছগুলো হেলে পড়ায় ফলন বিপর্যয়ের শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এভাবে দীর্ঘদিন হেলে থাকলে ধান চিটা হয়ে যাবে। এভাবে বিঘাপ্রতি ৭-১০ মণ ফলন কমে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন কৃষকেরা।

বালিয়াখোড়া ইউনিয়নের দ্বিমুখা গ্রামের বাসিন্দা কৃষক আলামিন মিয়া বলেন, ‘মহা বিপদে পড়েছি। খেতে পাকা ধান। ঝোড়ো বাতাসে মাটিয়ে শুয়ে পড়েছে। পানি কাদায় একাকার। এদিকে ধান কাটার শ্রমিক পাচ্ছি না।’

বড়টিয়া গ্রামের কৃষক সুদেব সাহা বলেন, ‘ধান কাটা হয়েছে। শনিবার ধান বাড়িতে নেওয়ার কথা। কিন্তু ভোরে ঝড়বৃষ্টিতে কাটা ধান পানিতে ভেসে গেছে। আমি ৫ বিঘা ধান চাষ করেছি। অনেক টাকা খরচ হয়েছে। বৃষ্টির পানিতে অনেক ধান তলিয়ে নষ্ট হয়ে গেছে।’

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শেখ বিপুল হোসেন এ বিষয়ে আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘কেউ কেউ ধান ঘরে তুলেছেন। কেউ তোলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন এমন সময়ে এই দুর্ভোগে পড়েছেন। কী পরিমাণ ফসলের খেত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তা এখনো নিরূপণ করা সম্ভব হয়নি। সব উপজেলাতেই উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা করছেন। পাশাপাশি কৃষকদের পানিনিষ্কাশনের পরামর্শও দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া আমাদের মাঠকর্মীরা কৃষকদের ধান কাটা, শুকানো এবং সংরক্ষণের ব্যাপারে নিয়মিত পরামর্শ দিচ্ছেন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ডিএনসিসির পদ ছাড়লেন এস্তোনিয়ার নাগরিক আমিনুল ইসলাম

ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিল নিয়ে ভারতের সঙ্গে উত্তেজনা, চ্যালেঞ্জের মুখে বাংলাদেশ

এনআইডির নাম ও জন্মতারিখ সংশোধনের দায়িত্বে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তারা

পদত্যাগ করব না, আলোচনা করে সমাধান করব: কুয়েট উপাচার্য

কাশ্মীরে পর্যটকদের ওপর অতর্কিত গুলি, নিহত ২৬

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত