Ajker Patrika

কাউন্সেলিং মনের জটগুলো খুলে দেয়

আজকের পত্রিকা ডেস্ক
আপডেট : ২৬ অক্টোবর ২০২২, ১০: ৩৭
কাউন্সেলিং মনের জটগুলো খুলে দেয়

প্রশ্ন: আমি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত। আমি যাকে ভালোবাসতাম, তার সঙ্গে সম্পর্ক নেই দুই মাস হয়ে গেল। প্রায় প্রতিদিন রাতে ভাবি, তাকে আমি ভুলে যাব। কিন্তু পরক্ষণে মনে হয় তাকে একটু ফোন করি, কেমন আছে জানতে চাই। কিন্তু কাজটা আমার পক্ষে করা সম্ভব হয় না। কারণ, আমরা দুজনে খুব ভালো করে জানি, আমাদের কোনো কিছুই আর ঠিক হবে না। আমাদের আট বছরের সম্পর্ক। সবকিছু মিলিয়ে মনে হচ্ছে, আমি মানসিকভাবে অনেক দুর্বল হয়ে গিয়েছি। আর এর প্রভাব পড়ছে আমার কর্মক্ষেত্রে। মানুষ হিসেবে আমি অনেক আশাবাদী। আয়নায় নিজেকে দেখলে খুব খারাপ লাগে। আমি কীভাবে ভালো থাকতে পারি?

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, নবাবগঞ্জ 
পরামর্শ: আপনাদের দুই মাস আগে আট বছরের সম্পর্কের বিচ্ছেদ হয়েছে। আপনার সম্পর্কের ধরন, বিবাহিত নাকি অবিবাহিত, মাত্রা ইত্যাদি কী ছিল, সেসব তথ্যের উল্লেখ নেই বিধায় মন্তব্য করার জায়গা সীমিত। আপনি বলেছেন, প্রতি রাতে ভাবেন তাকে ভুলে যাবেন। ঠিক নিউরোয়েন্সও তা-ই বলে—যত ভাবি ততই সেই ভাবনার স্নায়বিক রাস্তা বা নিউরাল পথ তৈরি হয়। ফলে ভুলে যাওয়াটা আরও কঠিন হয়ে পড়ে। নিজেকে চারটি ধাপে ভাগ করুন।

প্রথম ধাপ: নিজে মেনে নেওয়া বা এক্সেপটেন্স। নিজের কাছে নিজেই মেনে নিন যে হ্যাঁ, যে মানুষটি আমার জীবনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিলেন, তিনি এখন নেই।

দ্বিতীয় ধাপ: তিনি যে আপনার জীবন থেকে চিরতরে চলে গেছেন, এ অভিজ্ঞতাটিকে পূর্ণমাত্রায় অনুভবের জন্য সময় নিন। দুই মাস খুবই কম সময়। সাধারণত ছয় মাসের পর তীব্রতা কমতে থাকে। কারও কারও ক্ষেত্রে এটা দীর্ঘমেয়াদি হয়। সুতরাং এটা পুরোটাই একেকজন একেকভাবে অনুভব করে। এর কোনো ঠিক, ভুল নেই, ওষুধ নেই, রিকভারি সময় নেই।

তৃতীয় ধাপ: এর পরের ধাপ নিজেকে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে খাপ খাওয়ানোর চেষ্টা। কারণ একদিন যিনি খুব কাছের ছিলেন, আজ তিনি বেঁচে থেকেও নেই।

সেই পুরোনো পথে যেতে যেতে, দুজনের প্রিয় গান শুনতে শুনতে মনে তো পড়বেই। এই মনে পড়াটা সরলরেখায় চলবে না। মাঝে মাঝে ‘বুড়ি ছোঁয়া’ খেলার মতো মনে পড়বে।

কখনো বেশিক্ষণ মনে পড়বে, কখনো কম সময়।

প্রতীকী ছবিচতুর্থ ধাপ: এবার বেশ কিছুটা সময় গেলে ধীরে ধীরে আপনি নিজেকে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে পুনরায় ইনভেস্ট করবেন। আবার নতুন করে ভাবার সম্ভাবনা দেখবেন।

প্রশ্ন: আমার বয়স ২৬ বছর। আমার কোনো কিছু ভালো লাগে না। সারাক্ষণ ভাবি, কখন মারা যাব। কারণ, আমি আমার জীবন নিয়ে খুব হতাশ। আবার মরতে একটু ভয় লাগে।

কয়েকবার ঘুমের ওষুধ খেয়েছি। মনে মনে খুব করে চাই, রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় কোনো এক দুর্ঘটনায় মারা যাই। কারও সঙ্গে মিশতে পারি না, কাউকে বিশ্বাস করতে পারি না। সারাক্ষণ ভাবি, আর কত? যাকে নিজের চেয়ে বেশি ভালোবাসতাম, সে আমাকে ছেড়ে চলে গেছে। সে আরেক জনকে বিয়ে করেছে। আমি তাকে খুব ভালোবাসি। আমার ভালোবাসার মধ্যে কোনো ফাঁকি ছিল না। তারপরও সে কেন আমাকে ছেড়ে চলে গেল?

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, ডেমরা, ঢাকা

পরামর্শ: আপনাকে অবিলম্বে চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। কারণ আপনার মধ্যে নিজের ক্ষতি করার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। প্রথমে ঘুমের ওষুধ খাওয়া বন্ধ করা প্রয়োজন।

কখনো কখনো আমরা অবচেতনভাবে না বলতে এবং পরিস্থিতি মেনে নিতে পারি না। এই জায়গাগুলো একজন কাউন্সেলর বা সাইকোথেরাপিস্ট আপনাকে সেশনে বুঝিয়ে দেবেন। কাউন্সেলিং মানে কিন্তু উপদেশ দেওয়া নয়। অথবা জাজমেন্টাল হওয়াও নয়। আপনার মনে কোথায় কোথায় জট লেগে আছে, একজন কাউন্সেলর সেই জটগুলো দেখিয়ে দেবেন।

পরামর্শ দিয়েছেন, অধ্যাপক ডা. সানজিদা শাহরিয়া, চিকিৎসক, কাউন্সেলর, সাইকোথেরাপি প্র্যাকটিশনার, ফিনিক্স ওয়েলনেস সেন্টার বিডি

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত