Ajker Patrika

সংকটে লঙ্কানদের মুখে হাসি ফোটাচ্ছে ক্রিকেট

আরমান হোসেন, ঢাকা
আপডেট : ২৩ জুন ২০২২, ১১: ৪৯
সংকটে লঙ্কানদের মুখে হাসি ফোটাচ্ছে ক্রিকেট

স্বাধীনতার পর নিজেদের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক সংকটে পড়েছে শ্রীলঙ্কা। এই সংকট তারা এখনো কাটিয়ে উঠতে পারেনি। দেশের এমন সংকটাপন্ন সময়ে তাদের একপশলা স্বস্তির সুবাস এনে দিয়েছে ক্রিকেট। গত মাসে বাংলাদেশে টেস্ট সিরিজ জয়ের পর এবার ঘরের মাঠে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ জিতে শ্রীলঙ্কার সাধারণ মানুষের খুশির উপলক্ষ এনে দিয়েছে ক্রিকেট। ক্রিকেট দল এই সাফল্য দেশবাসীকে উৎসর্গ করেছে।

মাহেলা জয়াবর্ধনে, কুমার সাঙ্গাকারা, মুত্তিয়া মুরালিধরনরা যেটা পারেননি, সেটিই করে দেখিয়েছেন পাথুম নিশানকা-কুশল মেন্ডিসরা। ৩০ বছর পর অস্ট্রেলিয়াকে ঘরের মাঠে সিরিজ হারিয়েছেন তাঁরা। তারুণ্যনির্ভর এই দলের কোনো ক্রিকেটারেরই ১০০ ওয়ানডে খেলার অভিজ্ঞতা নেই। অথচ তারাই কিনা পূর্ণশক্তির অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজ জিতেছে এক ম্যাচ হাতে রেখেই।

ঐতিহাসিক সিরিজ জয়ে লঙ্কানদের সাবেক অধিনায়ক সনাৎ জয়সুরিয়া তো বেশ আবেগতাড়িত হয়ে পড়েছেন, ‘৩০ বছর পর ঘরের মাঠে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দুর্দান্ত সিরিজ জয়ে শ্রীলঙ্কা দলকে অভিনন্দন! এই জয় সত্যিকারের দলীয় প্রচেষ্টা।’

শ্রীলঙ্কার এই সাফল্যের মূল রহস্য একসঙ্গে একঝাঁক তরুণ প্রতিভাবান ক্রিকেটারের জ্বলে ওঠা। বিশেষ করে স্পিন দিয়ে বিশ্বের যেকোনো দলের ব্যাটিং লাইনআপকে চ্যালেঞ্জ জানানোর সামর্থ্য আছে এই শ্রীলঙ্কা দলের। মহেশ থিকশানা, ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা, চারিথ আসালঙ্কা, ধনঞ্জয়া ডি সিলভা, জেফরে ভ্যান্ডারসে, দুনিথ ভেলালাগেদের নিয়ে তৈরি হয়েছে বৈচিত্র্যময় এক স্পিন আক্রমণ। তাঁদের মধ্যে হাসারাঙ্গা, ধনঞ্জয়া, আসালঙ্কারা ব্যাট হাতেও সমান কার্যকর। পরশু রাতে আসালঙ্কার সেঞ্চুরিই তো শ্রীলঙ্কার জয়ে বড় অবদান রেখেছিল। ৫০ ওভারের মধ্যে ৪৩ ওভারই বোলিং করেছেন স্পিনাররা। সব মিলিয়ে ওয়ানডে ইতিহাসে এমন ঘটনা ঘটেছে আটবার, সববারই এ কৌশল অবলম্বন করেছে শ্রীলঙ্কা।

গত কয়েক বছর একটা পালাবদলের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে লঙ্কান ক্রিকেট। একসঙ্গে বেশকজন অভিজ্ঞ ক্রিকেটার বিদায়ের পর বড় ধাক্কা খেয়েছিল তারা। মাঠের খেলায় এর বড় প্রভাব পড়েছিল। ২০০৭ ও ২০১১—টানা দুটি বিশ্বকাপের ফাইনাল এবং ২০১৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে শিরোপা জেতা দলটা যেন সাফল্যের পথ হারিয়ে ফেলেছিল। দলের ধারাবাহিক ব্যর্থতা দেখতে দেখতে ক্ষুব্ধ লঙ্কান ক্রিকেট সমর্থকেরা গ্যালারি থেকে ক্রিকেটারদের দিকে বোতল পর্যন্ত ছুড়ে মেরেছেন একাধিকবার।

গত কয়েক বছরে বেশ কবার কোচিং স্টাফ থেকে শুরু করে শ্রীলঙ্কা ক্রিকেটে নির্বাচক প্যানেলে পরিবর্তন এসেছে। কিন্তু কিছুতেই যেন কাজ হচ্ছিল না। অবশেষে সুড়ঙ্গের শেষ প্রান্তে আলোর রেখা দেখতে পাচ্ছে শ্রীলঙ্কা, টানা দুটি বড় সিরিজ জিতে শ্রীলঙ্কান ক্রিকেট আভাস দিচ্ছে পুনর্জাগরণের, সেটিও আবার দেশের ক্রান্তিকালে। লঙ্কান ক্রিকেট বিশেষভাবে প্রশংসিত হচ্ছে ঠিক এ কারণেই। দেশের মানুষকে তাই ধন্যবাদ জানিয়ে লঙ্কান অধিনায়ক শানাকা লিখেছেন, ‘শুধু আমার জন্য নয়; সতীর্থ, শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট, পুরো দেশের জন্য এই মুহূর্ত খুব প্রয়োজন ছিল। আমি মনে করি পুরো দেশ জয়টি উদ্‌যাপন করবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত