Ajker Patrika

নামের মিলে বিনা দোষে জেলে

মো. রিয়াদ হোসাইন, কালীগঞ্জ (গাজীপুর)
আপডেট : ০২ ডিসেম্বর ২০২১, ০৯: ৩৬
নামের মিলে বিনা দোষে জেলে

গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার নাগরী ইউনিয়নের রাথুরা গ্রামের রাকিব (২৫)। একটি মাদক মামলায় গত ২২ দিন ধরে তিনি কারাগারে আছেন। তবে রাকিবের বাবা-মার অভিযোগ- মূল আসামির নামের সঙ্গে মিল থাকায় ভুল করে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বিনা দোষে রাকিব এখন জেলে।

রাকিবের মা রাহিমা বেগম বলেন, ‘আমার ছেলে স্থানীয় বিভিন্ন পোলট্রি ফার্ম থেকে মুরগি নিয়ে উত্তরায় দোকানে দোকানে সাপ্লাই দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে। সে গ্রামে কারও কোনো ক্ষতি করে নাই। তবে কেন তাকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হলো? আমার ছেলের মুক্তি চাই।’

রাকিবের বাবা শারীরিক প্রতিবন্ধী আক্তার হোসেন মামলার বরাত দিয়ে জানান, চলতি বছরের ২৭ আগস্ট গাজীপুর জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) ২০৩ ক্যান বিয়ারসহ উপজেলার নাগরী ইউনিয়নের রাথুরা গ্রামের শহিদুল্লাহকে (৩২) আটক করে। পরে পুলিশ ও আসামি শহিদুল্লাহর জবানবন্দি অনুযায়ী ২৮ আগস্ট ডিবি পুলিশের এসআই মো. ওবায়দুর রহমান বাদী হয়ে শহিদুল্লাহ ও তাঁর ছোট ভাই আশরাফুলসহ রাকিব ও রুবেলের নাম উল্লেখ করে কালীগঞ্জ থানায় একটি মামলা করেন। তবে মামলায় রাকিব ও রুবেলের বাবার নাম অজ্ঞাত ছিল। ওই মামলায় ডিবি পুলিশ চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়ার আগে অভিযুক্তদের পূর্ণাঙ্গ নাম-ঠিকানা যাচাই-বাছাই করার জন্য কালীগঞ্জ থানায় একটি অনুসন্ধান স্লিপ পাঠায়। পরে কালীগঞ্জ থানার পক্ষে ওই অনুসন্ধান স্লিপ নিয়ে উলুখোলা পুলিশ ফাঁড়ির সহকারী উপপরিদর্শক মুকুল তালুকদার তদন্ত করে রাকিবের বাবার নাম আক্তার উল্লেখ করে পাঠিয়ে দেন এবং মামলার আরেক অভিযুক্ত রুবেলকে অব্যাহতি দেন।

রাকিবের বাবা আরও বলেন, ‘নভেম্বরের শুরুতে আমরা জানতে পারি রাকিব ওই মামলার আসামি। পরে সরল মনে ছেলেকে নিয়ে আমরা আদালতে আত্মসমর্পণ করতে গেলে আদালত আমার ছেলেকে জেলে পাঠানোর নির্দেশ দেন। এখন সে ২২ দিন ধরে জেলে আছে। আমি আমার নির্দোষ ছেলের মুক্তি চাই।’

ওই মামলার ২নং আসামি মো. আশরাফুল মোবাইল ফোনে বলেন, ‘আসলে ওই দিন আমাদের সঙ্গে আক্তার কাকার ছেলে রাকিব ছিল না। আমাদের সঙ্গে যে রাকিব ছিল সে আমার বন্ধু। তার বাড়ি পাড়াবর্তা (নাওটান) গ্রামে এবং বাবার নাম তাইজউদ্দিন তাজু।’

কালীগঞ্জ থানার পক্ষে আসামিদের নাম-ঠিকানা যাচাই-বাছাইকারী পুলিশ কর্মকর্তা মুকুল তালুকদার বর্তমানে কোনাবাড়ী থানায় কর্মরত আছেন। তিনি মোবাইল ফোনে বলেন, ‘আমি মাত্র এক মাস কালীগঞ্জ থানার উলুখোলা ফাঁড়ির অধীনে কাজ করেছি। ঘটনাস্থলে গিয়ে স্থানীয়দের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে নাম-ঠিকানা পাঠিয়েছি।’

মামলার বাদী এসআই মো. ওবায়দুর রহমান বলেন, ‘আমি মামলায় ৪ জনের নাম দিলেও শহিদুল্লাহ ও আশরাফুলের বাবার নাম উল্লেখ করেছি। তবে রাকিব ও রুবেলের বাবার নাম জানতে না পারায় অজ্ঞাত রেখেছি। পরে ওই মামলা ডিবি পুলিশের এসআই মো. বদিউজ্জামান তদন্ত করে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়েছেন।’

এসআই বদিউজ্জামান বলেন, ‘এখানে আমার কিছু করার নেই। আমরা ডিবি পুলিশের পক্ষ থেকে অনুসন্ধান স্লিপ পাঠিয়ে কালীগঞ্জ থানা-পুলিশের সহায়তায় পূর্ণাঙ্গ নাম নিয়ে মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়েছি।’

কালীগঞ্জ থানার ওসি মো. আনিসুর রহমান বলেন, ‘আসলে যাকে তদন্ত করতে পাঠাই, তিনি তদন্ত করে দিলে আমি শুধু স্বাক্ষর করি। আমার পক্ষে যাচাই-বাছাই করার কোনো সুযোগ নেই। তবে এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটে থাকলে সেটা দুঃখজনক।’

গাজীপুর জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ওসি মো. আমির হোসেন জানান, ‘আমরা অনুসন্ধান স্লিপের মাধ্যমে চূড়ান্ত প্রতিবেদন পাঠিয়েছি। তবে এ ধরনের ঘটনা ঘটে থাকলে সেটা অনাকাঙ্ক্ষিত।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সরকারি কর্মচারীদের পদ-পদবি-বেতন কাঠামো নিয়ে পাল্টা অবস্থানে দুই পক্ষ

সেনানিবাস ঘিরে ‘নাশকতার পরিকল্পনা’, বরখাস্ত সৈনিকসহ গ্রেপ্তার ৩

বাংলাদেশ এড়িয়ে সমুদ্রপথে সেভেন সিস্টার্সকে যুক্ত করতে নতুন প্রকল্প ভারতের

ফেসবুকে লাইক-কমেন্ট, পাঁচ কর্মকর্তাকে নোটিশ

দক্ষিণপন্থীদের কবজায় বাংলাদেশের রাজনীতি: বদরুদ্দীন উমর

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত