Ajker Patrika

সরকারি কর্মচারীদের পদ-পদবি-বেতনকাঠামো নিয়ে পাল্টা অবস্থানে দুই পক্ষ

  • ৩০টি দপ্তর চায় সচিবালয়ের কর্মকর্তাদের মতো সুবিধা।
  • অভিন্ন নিয়োগবিধি করতে চাইছে সরকার।
  • অভিন্ন নিয়োগবিধিতে জটিলতার আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের।
শহীদুল ইসলাম, ঢাকা
আপডেট : ১৮ মে ২০২৫, ১৬: ৩২
সরকারি কর্মচারীদের পদ-পদবি-বেতনকাঠামো নিয়ে পাল্টা অবস্থানে দুই পক্ষ

সব সরকারি দপ্তরে একই ধরনের কাজে কর্মরতদের পদ-পদবি ও বেতন স্কেল একসময় একই ছিল। তিন দশক আগে সচিবালয়ের কর্মচারীদের পদনাম বদলে দিয়ে তাঁদের বেতন গ্রেড উন্নীত করে সরকার। পরে বিভাগীয় কমিশনার এবং জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের কর্মচারীদের এভাবে সুবিধা দেওয়া হয়। সরকারি অন্য দপ্তরের কর্মচারীরা ‘প্রভাবশালী’ ওই তিন দপ্তরের মতো সুবিধা চাইলেও সরকার হাঁটছে অন্য পথে।

৩০টি অধিদপ্তর, পরিদপ্তর ও সংস্থার কর্মচারীরা তাঁদের পদনাম বদল করে বেতন গ্রেড উন্নীত করতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছেন। গণ-অভ্যুত্থান-পরবর্তী পরিস্থিতিতে আসা এসব আবেদন পর্যালোচনার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। পাশাপাশি ১০ম থেকে ২০তম গ্রেডভুক্ত সব সরকারি কর্মচারীর জন্য অভিন্ন নিয়োগ বিধিমালা প্রণয়নেও হাত দিয়েছে। তবে সচিবালয়ের কর্মচারীদের আপত্তিতে এ বিষয়ে কার্যক্রম এখনো শুরু করতে পারেনি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়

জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সব সরকারি দপ্তরের কাজের ধরন এক রকম না হওয়ায় অভিন্ন নিয়োগবিধি জারি করলে জটিলতা সৃষ্টি হবে। বরং সচিবালয়ের মতো মাঠ প্রশাসনের কর্মচারীদের সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো যেতে পারে।

বর্তমানে ডিসি এবং ইউএনও কার্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য একটি এবং বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ের কর্মচারীদের জন্য আরেকটি নিয়োগ বিধিমালা রয়েছে। এ ছাড়া মন্ত্রণালয়-বিভাগের জন্য রয়েছে বাংলাদেশ সচিবালয় (ক্যাডারবহির্ভূত গেজেটেড কর্মকর্তা এবং নন-গেজেটেড কর্মচারী) নিয়োগ বিধিমালা-২০১৪। এই বিধিমালা অনুযায়ী, সচিবালয়ের কর্মচারীরা উপসচিব পর্যন্ত পদোন্নতি পান। আর বিভাগীয় কমিশনার, ডিসি ও ইউএনও কার্যালয়ের কর্মচারীরা সর্বোচ্চ প্রশাসনিক কর্মকর্তা পদে পদোন্নতি পান। অভিন্ন নিয়োগ বিধিমালা হলে সবার জন্য একই নিয়ম কার্যকর হবে।

সরকার অভিন্ন নিয়োগ বিধিমালা প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়ার পর সচিবালয়, বিভাগীয় কমিশনার ও ডিসি অফিসের কর্মচারীরা একদিকে এবং সরকারি অন্য দপ্তরের কর্মচারীরা পাল্টা অবস্থান নিয়েছেন।

এখন সচিবালয়ের নন-ক্যাডার কর্মকর্তাদের মধ্যে ৩৫৬ জন সহকারী সচিব, ৭৮ জন জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব ও ৯ জন উপসচিব পদে আছেন। ১৩ মে নন-ক্যাডার উপসচিবের আরও ছয়টি পদ সংরক্ষণ করার ঘোষণা দিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

সহকারী সচিব ও জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিবের আরও পদ সংরক্ষণের দাবি জানিয়ে আসছেন কর্মচারীরা।

অন্যদিকে ইউএনও, ডিসি ও বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে প্রশাসনিক কর্মকর্তার ৮৩১টি পদের বিপরীতে কর্মরত ৪৭৫ জন। বাকি পদে পদোন্নতি ও নিয়োগের জন্য জ্যেষ্ঠতার খসড়া তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। আর মাঠ প্রশাসনে প্রশাসনিক কর্মকর্তার পদ রয়েছে প্রায় ১৫ হাজার।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী, অধিদপ্তর, পরিদপ্তর ও সংস্থায় প্রধান সহকারী, উচ্চমান সহকারী ও সমমানের প্রায় ১৪ হাজার পদ রয়েছে। এ ছাড়া ফিডার পদ হিসেবে প্রায় ৩ লাখ সরকারি কর্মচারী পদোন্নতি বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

ক্যাডার কর্মকর্তাদের পদবি অনুযায়ী, সচিবালয়ের ১০ থেকে ২০তম গ্রেডের কর্মচারীদের পদবি পরিবর্তনের দাবিতে আন্দোলনে রয়েছেন কর্মচারীরা।

বৈষম্যের সূচনা যেভাবে

স্বাধীনতার পর ১৯৭৩ ও ১৯৭৭ সালের ঘোষিত জাতীয় বেতন স্কেলে সব সরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রধান সহকারী, উচ্চমান সহকারীসহ সব দপ্তরের সমজাতীয় পদগুলোর জন্য একই নিয়োগবিধি এবং ১৩ ও ১৪তম বেতন গ্রেড নির্ধারিত ছিল। ১৯৯৫ সালে তৎকালীন সংস্থাপন মন্ত্রণালয় (জনপ্রশাসনের আগের নাম) শুধু সচিবালয়ের ভেতরে যাঁদের অফিস তাঁদের দায়িত্ব, বেতন স্কেল, কর্মপরিধি ও পদমর্যাদা অপরিবর্তিত রেখে প্রধান সহকারী, উচ্চমান সহকারী, শাখা সহকারী, বাজেট পরীক্ষক পদবি বদলে প্রশাসনিক কর্মকর্তা এবং সাঁটলিপিকার পদবি পরিবর্তন করে ব্যক্তিগত কর্মকর্তা করে। ১৯৯৯ সালে প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের দ্বিতীয় শ্রেণির গেজেটেড পদমর্যাদা দিয়ে ১০ম বেতন গ্রেড দেওয়া হয়।

২০০৮ সালের নভেম্বরে সংস্থাপন মন্ত্রণালয় এবং ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে সরকারি কর্ম কমিশনের আদেশে পিএসসির প্রধান সহকারী, শাখা সহকারী, উচ্চমান সহকারী পদ পরিবর্তন করে প্রশাসনিক কর্মকর্তা এবং সাঁটলিপিকার পদবি পরিবর্তন করে ব্যক্তিগত কর্মকর্তা করা হয়। এসব পদের বেতনও ১০ম গ্রেডে উন্নীত করা হয়। ১৯৯৭ সালের ২৮ এপ্রিল থেকে এই আদেশ কার্যকর ধরা হয়।

২০১৭ সালের ২৫ অক্টোবর সুপ্রিম কোর্ট তাঁদের প্রধান সহকারী ও উচ্চমান সহকারীর পদবি পরিবর্তন করে প্রশাসনিক কর্মকর্তা করে বেতন ১০ম গ্রেডে উন্নীত করে। এটি ২০০৪ সালের ১ সেপ্টেম্বর থেকে কার্যকর ধরা হয়।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ২০২২ সালের ১৬ মে বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের অফিস সুপারিনটেনডেন্ট, সিএ কাম উচ্চমান সহকারী ও সাঁটলিপিকার কাম কম্পিউটার অপারেটরের পদবি বদলে উপপ্রশাসনিক কর্মকর্তা; প্রধান সহকারী, ট্রেজারি হিসাবরক্ষক, সাঁটমুদ্রাক্ষরিক কাম কম্পিউটার অপারেটর ও পরিসংখ্যান সহকারীর পদবি বদলে সহকারী প্রশাসনিক কর্মকর্তা এবং উচ্চমান সহকারীর পদবি বদলে উপসহকারী প্রশাসনিক কর্মকর্তা করা হয়। তবে তাঁদের বেতন গ্রেড আগের মতোই রাখা হয়।

সচিবালয়ের বাইরের অধিদপ্তর, পরিদপ্তর ও সংস্থার কর্মচারীরা পদবি বদলে বেতনবৈষম্য নিরসনের জন্য দুই যুগেরও বেশি সময় দাবি জানিয়ে আসছেন।

বাংলাদেশ প্রশাসনিক বাস্তবায়ন ঐক্য পরিষদ সম্প্রতি বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের অধীনে ২৫২টি অধিদপ্তর, পরিদপ্তর ও স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার প্রধান সহকারী, উচ্চমান সহকারী, সহকারীর সমমানের পদগুলোকে প্রশাসনিক কর্মকর্তা পদবি পরিবর্তনসহ বেতন স্কেল ১০ম গ্রেডে উন্নীত করে সচিবালয়ের মতো করার দাবিতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে স্মারকলিপি দিয়েছে।

প্রশাসনিক বাস্তবায়ন ঐক্য পরিষদের মহাসচিব মো. বেল্লাল হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ৩০ বছর ধরে অধিদপ্তর, সংস্থার সঙ্গে পদবিবৈষম্য করা হচ্ছে। কর্মচারী সংগঠনের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে পদবিবৈষম্য নিরসনে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় বারবার কমিটি গঠন করলেও আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় অধিদপ্তর, দপ্তর, সংস্থার ১৩ হাজারসহ প্রায় ৩ লাখ সরকারি কর্মচারী পদবি ও বেতনবৈষম্যের শিকার। এ বৈষম্য নিরসন না করে অভিন্ন নিয়োগবিধি করলে বেতনবৈষম্য আরও বাড়বে।

উদ্যোগ আছে, বাস্তবায়ন নেই

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কর্মচারীদের দাবিদাওয়া পর্যালোচনা-সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটির ২০১২ সালের ১২ আগস্টের সভায় বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের দাবিগুলো উপস্থাপন করা হয়। সেই সভায় বেশ কিছু সিদ্ধান্ত হলেও তার বাস্তবায়ন হয়নি। ২০১৩ সালের ১৬ জানুয়ারি একই কমিটির সভায় এ বিষয়টি আবার আলোচিত হয়। এরপর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কল্যাণ শাখা থেকে সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে চিঠি দিয়ে তাদের অধীন দপ্তর, অধিদপ্তর, পরিদপ্তরকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে তথ্য পাঠাতে বলা হয়। ২৫২টি দপ্তর, অধিদপ্তর, পরিদপ্তর ও সংস্থা এ বিষয়ে তাদের বক্তব্য লিখিতভাবে জানায়। তবে এরপর মন্ত্রণালয়ের কল্যাণ শাখা আর কোনো কার্যক্রম হাতে নেয়নি।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের দাবিদাওয়া-সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটি ২০১৯ সালের ২০ অক্টোবর পদ-পদবিবৈষম্যের বিষয়ে একটি সভা করে। দশম জাতীয় সংসদের জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির ৩২তম সভায় এবং একাদশ সংসদের দ্বিতীয় ও তৃতীয় সভায় সচিবালয়ের মতো করে সচিবালয়ের বাইরের অধিদপ্তর, পরিদপ্তর, সরকারি সংস্থার প্রধান সহকারী, উচ্চমান সহকারী ও সমপদগুলোকে প্রশাসনিক কর্মকর্তা, ব্যক্তিগত কর্মকর্তা ও গেজেটেড পদমর্যাদায় ১০ম গ্রেডে উন্নীত করার সুপারিশ করা হয়। এরপর ২০১৯ সালের ২৮ মার্চ জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিবালয় শাখা একটি উপকমিটি গঠন করে।

২০২২ সালের ২৮ জুলাই জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সরকারি কর্মচারীদের দাবিদাওয়া-সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটির সভায় উপকমিটির সুপারিশ মোতাবেক সব দপ্তর থেকে পদবি পরিবর্তনের জন্য প্রস্তাব চাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। সে অনুযায়ী পদবি পরিবর্তনের প্রস্তাব চেয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ২০২২ সালের ১২ সেপ্টেম্বর সব সচিবকে চিঠি দেয়। এরপর ৩০টি অধিদপ্তর, পরিদপ্তর ও সরকারি সংস্থা প্রশাসনিক মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সংগঠন ও ব্যবস্থাপনা অনুবিভাগে তাদের প্রস্তাব পাঠায়। বিধি অনুবিভাগ এ বিষয়ে নেতিবাচক মতামত দিলে আর কোনো অগ্রগতি হয়নি।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিধি-১ অনুবিভাগের যুগ্ম সচিবকে আহ্বায়ক করে অভিন্ন নিয়োগবিধি প্রণয়নে সরকারকে সুপারিশ দিতে কমিটি করা হয়। ওই সময় বিধি-১ অনুবিভাগের দায়িত্বে ছিলেন মোহাম্মদ শামীম সোহেল। তাঁকে সম্প্রতি বিধি-১ অনুবিভাগের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে এই অনুবিভাগের অন্য দায়িত্বে বসানো হয়েছে। বিধি-১ অনুবিভাগে এখনো কাউকে পদায়ন করা হয়নি।

শামীম সোহেল গত বৃহস্পতিবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমি আর ওই দায়িত্বে না থাকায় কমিটিতে কী হচ্ছে, তা বলতে পারব না।’

তবে কমিটির একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্ত বলেন, ‘সচিবালয়ের কর্মকর্তাদের চাপের মুখে কমিটির প্রথম সভা স্থগিত করা হয়েছে। এখন আমরা সরকারের নির্দেশনার অপেক্ষায় রয়েছি।’

অভিন্ন বিধিমালায় জটিলতা বাড়বে

২০১৮ সালে জেলা প্রশাসক সম্মেলনে মাঠ প্রশাসনের কর্মচারীদের জন্য সচিবালয়ের কর্মচারীদের মতো নিয়োগবিধি প্রণয়নের প্রস্তাব উঠেছিল। তখন পর্যায়ক্রমে এই নিয়োগবিধি বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত হয়। জনপ্রশাসন এবং মাঠ প্রশাসনের নন-ক্যাডার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অভিন্ন নিয়োগ বিধিমালা প্রণয়নের সুপারিশ দিতে গত ৩০ এপ্রিল একটি কমিটি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। কমিটিকে ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছিল। তবে কর্মচারীদের আপত্তির মুখে ১৩ মে কমিটির সভা ডেকেও তা স্থগিত করা হয়।

সবার জন্য অভিন্ন নিয়োগ বিধিমালা জারি হলে মাঠ প্রশাসনের নন-ক্যাডার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সচিবালয়ে এবং সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জেলা ও উপজেলা প্রশাসনে বদলির পথ তৈরি হবে।

আন্তমন্ত্রণালয় কর্মচারী অ্যাসোসিয়েশনের সমন্বয়ক নজরুল ইসলাম বলেন, ‘সচিবালয় ও মাঠ প্রশাসনে অভিন্ন নিয়োগ বিধিমালা জারি হলে বৈষম্য বাড়বে। কারণ সচিবালয় নির্দেশমালার কাজের ধরন আর মাঠ প্রশাসনের কাজের ধরন এক নয়। আমরা অভিন্ন নিয়োগ বিধিমালা প্রণয়ন-সংক্রান্ত গঠিত কমিটি বাতিলের দাবি জানাচ্ছি। এ বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ কামনা করছি।’

বাংলাদেশ মাঠ প্রশাসনিক কর্মকর্তা কল্যাণ সমিতির সভাপতি এস এম জাহিদুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সচিবালয়ের নন-ক্যাডার কর্মকর্তারা পঞ্চম গ্রেড পর্যন্ত পদোন্নতি পাচ্ছেন, আমরাও তাঁদের মতো সুবিধা চাই। সরকার কীভাবে আমাদের সে সুবিধা দেবে, সেটা সরকারের ব্যাপার। আমাদের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে বৈষম্য করা হচ্ছে, আমরা এর অবসান চাই।’

জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ ফিরোজ মিয়া মনে করেন, সব কর্মচারীর জন্য অভিন্ন নিয়োগ বিধিমালা জারি করা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। তিনি বলেন, ‘সব দপ্তরের কাজের ধরন এক রকম নয়। নিয়োগের সময় একই ধরনের যোগ্যতাও চাওয়া হয় না। অভিন্ন নিয়োগবিধি না করে সব সরকারি দপ্তরের কর্মচারীদের সমান সুযোগ-সুবিধা তৈরি করা যেতে পারে। হুট করে এমন কিছু করলে মারাত্মক জটিলতা সৃষ্টি হবে।’

অভিন্ন নিয়োগবিধির পক্ষে নন সাবেক সচিব এ কে এম আবদুল আউয়াল মজুমদারও। আজকের পত্রিকা'কে তিনি বলেন, ‘সব কর্মচারীর জন্য অভিন্ন নিয়োগবিধি প্রণয়ন করা বাস্তবভিত্তিক নয়। সব সরকারি অফিসের কাজের ধরন এক নয়, ফলে সুযোগ-সুবিধায় ভিন্নতা থাকতেই পারে। প্রয়োজনে সবার জন্য সমান সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে।’

আরও খবর পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বইমেলা হবে কোনো সন্দেহ নেই, সময় নির্ধারণ বাংলা একাডেমির ব্যাপার: প্রেস সচিব

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘কেমন বই মেলা চাই’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। ছবি: আজকের পত্রিকা
জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘কেমন বই মেলা চাই’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। ছবি: আজকের পত্রিকা

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে এবারও বইমেলা যাতে খুব সুন্দর হয়। সময়ের ব্যাপারে আমি জানি না, বাংলা একাডেমি কি একই সময়ে করবে নাকি সময় একটু হেরফের করবে—সেটা বাংলা একাডেমির বিষয়। তবে মেলা হবে—এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই।’

আজ রোববার জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী মিলনায়তনে বৈষম্যবিরোধী সৃজনশীল প্রকাশক সমিতি আয়োজিত ‘কেমন বই মেলা চাই’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। সভায় ১৭টি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়।

শফিকুল আলম বলেন, ‘আমরা এমন একটা বইমেলা চাই, যে বইমেলায় আমাদের সব মানুষের বই থাকবে। আমরা যারা বই লিখি, যে যেইটাই লিখুক কেন, যে কোনো ভিন্ন মতের লেখাই থাকুক না কেন, সবার বই যেন বইমেলায় থাকে। পাঠক বেছে নেবেন—উনি যেটা পড়তে চান, যে বই তাঁকে টানে উনি ওই বইটা কিনবেন।’

তিনি যোগ করেন, ‘আমরা চাই এমন একটা মেলা, অবশ্যই সেটা বৈষম্যবিরোধী। কারও প্রতি যেন বৈষম্য না করা হয়। কেউ যেন এসে না বলেন যে না, আমার প্রতি বৈষম্য করা হচ্ছে। আমি যে বইটা প্রকাশ করতে চাচ্ছি বা বিক্রি করতে চাচ্ছি, এটা এখানে করা যাচ্ছে না। এই কথাটা যেন না শোনা হয়।’

প্রেস সচিব বলেন, ‘আমরা অবশ্যই এমন কোনো বইমেলা চাই না যেখানে ৪০ শতাংশ বই হচ্ছে একটা লোকের ওপরে। এমন একটা বইমেলার সময় গেছে, সামনে আপনি বই দেখবেন, সবই হচ্ছে শেখ পরিবারের বই। উনি টুঙ্গিপাড়ায় পুকুরের পাশে বসে আছেন, সেটা নিয়েও একটা বড় বই কেউ লিখে ফেলেছে। ওই বইগুলো ছিল—কোনোভাবে প্রতারণা করে কিছু টাকা-পয়সা কামানোর জন্য।’

সভায় জাতীয় কবিতা পরিষদের সভাপতি মোহন রায়হান বলেন, ‘বইমেলাকে দলীয় বইমেলা হিসেবে রূপান্তরিত করা হয়েছে। প্রতিটি স্টল, প্যাভেলিয়ন আওয়ামী দালালদের দেওয়া হয়েছিল। প্রকাশকেরা ছিল ফ্যাসিস্টদের দোসর। তবে এবারের বইমেলা হবে সবার।’

নির্বাচনের কারণে বইমেলা বন্ধের কোনো কারণ নেই উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘ফেব্রুয়ারিতে বইমেলা হোক। নির্বাচনের কয়েক দিন বইমেলা বন্ধ রেখে। তা আবার কয়েক দিন বর্ধিত করা যেতে পারে। তা-ও যাতে ফেব্রুয়ারিতে বইমেলা বন্ধ না থাকে। এবারের বইমেলা না হলে মনে করা হবে, ফ্যাসিস্ট শক্তির দোসররা এটা জন্য জড়িত। তারাই ষড়যন্ত্র করে বইমেলা বন্ধ করতে চাইছে। সরকারের কাছে আবেদন বইমেলা যাতে ফেব্রুয়ারির ১ তারিখেই হয়।’

আয়োজক সংগঠনের সভাপতি সাঈদ বারীর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন কবি গাজীউল হাসান খান, ফয়েজ আলম।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

এক ব্যক্তির নামে অনুমোদিত সিমের সংখ্যা কমিয়ে আনা হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। ছবি: সংগৃহীত
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। ছবি: সংগৃহীত

আসন্ন জাতীয় ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের আগে এক ব্যক্তির নামে অনুমোদিত সিমকার্ডের সংখ্যা কমিয়ে আনা হবে। আজ রোববার সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠক শেষে এ তথ্য জানান স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘একজনের সিমকার্ড ব্যবহার করে অন্যজন অপরাধ করে। এতে করে প্রকৃত দোষী ব্যক্তি অনেক সময় ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকে। এ জন্য ব্যক্তি পর্যায়ে রেজিস্ট্রেশন করা সিমকার্ড কমিয়ে আনা হবে। কোনো ঘটনা ঘটার পর দেখা যায় সিমটি সেই ব্যক্তির নয়। নির্বাচনের আগে সিমকার্ড কমিয়ে আনা হবে। আমরা চেষ্টা করছি জাতীয় নির্বাচনের আগে একজন ব্যক্তি সর্বোচ্চ সাতটি সিমকার্ড নিজের এনআইডি দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করতে পারবেন।’

ব্রিফিংয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনি, পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম, বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী ও মেজর জেনারেল আবদুল মোতালেব সাজ্জাদ মাহমুদ।

গত মে মাসে বিটিআরসি জানায়, একজন গ্রাহক এখন থেকে নিজের নামে সর্বোচ্চ ১০টি সিম নিতে পারবেন। এর আগে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি), ড্রাইভিং লাইসেন্স, জন্মনিবন্ধন সনদ ও পাসপোর্ট দিয়ে সব অপারেটর মিলিয়ে ১৫টি সিম নেওয়া যেত।

২০১৭ সালে বিটিআরসি একজন গ্রাহকের নামে সর্বোচ্চ ১৫টি সিম নিবন্ধন করা যাবে বলে নির্দেশনা দেয়। এরপর ২০২২ সালের অক্টোবরে বিটিআরসি আরেক নির্দেশনায় জানিয়েছিল, একজন গ্রাহক জাতীয় পরিচয়পত্র, ড্রাইভিং লাইসেন্স, জন্মনিবন্ধন সনদ ও পাসপোর্ট দিয়ে সর্বোচ্চ ১৫টি সিম নিবন্ধন করতে পারবেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জাতীয় নির্বাচনের সার্বিক প্রস্তুতি নিয়ে বৈঠকে বসছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
জাতীয় নির্বাচনের সার্বিক প্রস্তুতি নিয়ে বৈঠকে বসছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

সন্ন জাতীয় নির্বাচন উপলক্ষে সার্বিক প্রস্তুতি, সারাদেশে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও অভিযান পরিচালনা এবং সহিংসতা সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণসহ বিভিন্ন বিষয়ে নিয়ে বৈঠকে বসছে আইন-শৃঙ্খলা সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি।

আজ রোববার সকাল ১১টায় সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।

আইন-শৃঙ্খলা সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির ১৫তম বৈঠকে সভাপতিত্ব করবেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে এই বৈঠকের আলোচিত বিষয়গুলোর মধ্যে রয়েছে—

১. দেশব্যাপী চুরি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, দখলবাজি, সংঘবদ্ধ দুষ্কৃতিকারীদের কর্মকাণ্ড রোধে ব্যবস্থা গ্রহণ।

২. জুলাই হত্যাকাণ্ডের শহীদদের মামলার রেকর্ড, তদন্ত ও অগ্রগতি বিষয়ক আলোচনা, দেশে অস্থিরতা সৃষ্টিকারী উসকানিমূলক সাইবার প্রচারণার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ।

৩. নারী ও শিশু নির্যাতন এবং ধর্ষণের বিরুদ্ধে আইনগত ও সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলা।

৪. মাদকের অপব্যবহার রোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ সম্পর্কিত আলোচনা।

৫. শীর্ষ সন্ত্রাসীদের জামিন পরবর্তী সন্ত্রাসী কার্যক্রম ও প্রতিরোধ, নির্মূল ও নিয়ন্ত্রণ এবং নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠনসমূহের অপতৎপরতা রোধে ব্যবস্থা গ্রহণ।

৬. গার্মেন্টস বা শিল্পকারখানার শ্রমিকদের বেতন-বোনাস পরিশোধ নিশ্চিত করা।

৭. গার্মেন্টস কারখানা, ঔষধ শিল্পসহ বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠানে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির তৎপরতা বিষয়ে আলোচনা।

৮. অস্ত্র জমা ও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার অভিযান পরিচালনা সংক্রান্ত আলোচনা।

৯. সীমান্ত ও পার্বত্যাঞ্চল পরিস্থিতি বিষয়ক আলোচনা।

১০. রোহিঙ্গা ক্যাম্পের আইন-শৃঙ্খলাসহ সার্বিক পরিস্থিতি বিষয়ক আলোচনা।

১১. মা ইলিশ সংরক্ষণ সংক্রান্ত আলোচনা।

জানা গেছে, বৈঠকে উপস্থিত থাকবেন আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক এবং প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল, শিল্প-ও গৃহায়ণ মন্ত্রণালয় বিষয়ক উপদেষ্টা আদিলুর রহমান, খাদ্য ও ভূমি বিষয়ক উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু এবং রেলপথ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, যুব ও ক্রীড়া এবং স্থানীয় সরকার উপদেষ্ট আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ, ধর্ম বিষয়ক উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমাসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

কমিশন-বিশেষজ্ঞ বৈঠক: বাস্তবায়নের নিশ্চয়তা নিয়ে জট কাটেনি

  • বৈঠকে সময়সীমা নিশ্চিত করার উপায় মেলেনি
  • কয়েকটি মত এলেও বাস্তবসম্মত মনে করেননি কেউ
  • ঝুলন্ত পার্লামেন্টের সম্ভাবনাসহ নানা প্রশ্নের জবাব নেই
  • আজ সকালে আবার বসছে কমিশন
‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ২৬ অক্টোবর ২০২৫, ০৭: ৪৯
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

আগামী জাতীয় সংসদ নিয়মিত সংসদের পাশাপাশি সংবিধান সংস্কার পরিষদ হিসেবে ২৭০ দিনের (৯ মাস) মধ্যে জুলাই সনদের সংবিধানসংক্রান্ত বিষয়গুলো সংবিধানে যুক্ত করবে বলে মতৈক্য হয়েছে। তবে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তা সম্পন্ন করার বিষয়টি কীভাবে নিশ্চিত হবে, গতকাল শনিবার পর্যন্ত তার কিনারা করতে পারেনি জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। বৃহস্পতিবারের পর ঐকমত্য কমিশন গতকালও বিশেষজ্ঞদের নিয়ে বৈঠক করলেও কোনো সমাধান মেলেনি। এমন প্রেক্ষাপটে আজ রোববার কমিশন আবার নিজেরা বৈঠক করবে এবং প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আবার বসবে।

ঐকমত্য কমিশনের জাতীয় সংসদ ভবনের কার্যালয়ে গতকাল বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে বৈঠকটি বেলা দেড়টার পর শুরু হয়ে সন্ধ্যা ৬টার পরে শেষ হয়। প্রায় চার ঘণ্টার বৈঠকেও সংবিধান নিয়ে সময়সীমার মধ্যে কাজ শেষ করার উপায় বের হয়নি।

সূত্র জানায়, এখন পর্যন্ত জুলাই সনদ বাস্তবায়নে কমিশনের সিদ্ধান্ত হলো, গণ-অভ্যুত্থানকে ভিত্তি ধরে প্রথমে ‘জুলাই সনদ বাস্তবায়ন (সংবিধান সংস্কার) আদেশ’ নামে একটি আদেশ জারি করা হবে। তার অধীনে জারি হবে গণভোট-বিষয়ক একটি অধ্যাদেশ। এর ভিত্তিতেই হবে গণভোট। একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত (২৭০ দিন বা প্রথম ৯ মাস) আগামী সংসদ কাজ করবে সংবিধান সংস্কার পরিষদ হিসেবে। এ সময়ের মধ্যেই সংবিধান-সংক্রান্ত সংস্কার প্রস্তাবগুলো সংসদে অনুমোদন করা হবে। প্রসঙ্গত, একই সময় এ পরিষদ নিয়মিত সংসদ হিসেবেও কাজ করবে। সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠতায়ই সংবিধান সংস্কার হবে।

গতকালের আলোচনা বিষয়ে একজন বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘সংসদ সদস্যরা ২৭০ দিনের মধ্যে বাস্তবায়ন না করলে সনদে থাকা বিষয়গুলো কী হবে—সেখানেই আটকে যাচ্ছে আলোচনা। কারণ আমরা তেমন সমাধান দিতে পারছি না। দেশে অতীতে এ-সংক্রান্ত কোনো উদাহরণ নেই। দেশের বাইরেও এ ধরনের উদাহরণ পাইনি।’

কোনো দল আগামী নির্বাচনে সরকার গঠনে প্রয়োজনীয় দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেলে সংবিধান সংস্কার কীভাবে হবে, এ প্রশ্নও আছে। বিষয়টি তখন মূলত নির্ভর করবে বেশি আসন পাওয়া কয়েকটি দলের সদিচ্ছার ওপর। কিন্তু কমিশন চাইছে এ অনিশ্চয়তার অবকাশ না রেখে এমন কোনো বিধান করা, যা সনদ বাস্তবায়নের নিশ্চয়তা দেবে।

গতকালের বৈঠকে বিশেষজ্ঞরা একাধিক মত দিয়ে বলেছেন, সেগুলো আইনগত ও রাজনৈতিকভাবে পুরোপুরি গ্রহণযোগ্য বলে মনে করেন না তাঁ। একটি মত হলো,নির্ধারিত সময়ে সংস্কার বাস্তবায়ন করা না হলে সংসদ বিলুপ্ত হয়ে যাবে। এটি আইনগতভাবে ঠিক হলেও রাজনৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য হবে না বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা। সংসদ এভাবে বিলুপ্ত হলে নতুন সংকট তৈরি হতে পারে বলে মনে করেন তাঁরা।

আরও যে কয়েকটি মত গতকাল এসেছে তার মধ্যে রয়েছে, প্রথমত, পরিষদে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সনদের বিষয়গুলো বাস্তবায়ন না হলে তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংবিধানে যুক্ত হয়ে যাওয়া এবং দ্বিতীয়ত, আগে সংবিধান সংস্কার পরিষদ বৈঠকে বসে সনদের সংযুক্তি বাস্তবায়ন করবে এবং তারপর সংসদ বসবে। কিন্তু এগুলোও কার্যকর বা বাস্তবসম্মত মনে করেননি বিশেষজ্ঞদের সবাই।

একজন বিশেষজ্ঞ বলেন, সময়সীমার মধ্যে না সম্পন্ন করলে আপনা থেকেই সংবিধানে বিষয়গুলো যুক্ত হওয়ার ধারণা বাস্তবসম্মত না। কারণ বিলগুলোর খসড়া তৈরি করা নেই। এটা করা বিশেষজ্ঞদের কাজ না। সংসদে আলোচনা করে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরাই এ সিদ্ধান্ত নেবেন। তিনি আরও বলেন, সনদের একটি বিধান হচ্ছে, মৌলিক অধিকার সম্প্রসারণ করা হবে। কিন্তু কোন মৌলিক অধিকারটি সম্প্রসারণ করা হবে, তা বলা নেই। সংসদ সদস্যদের আলোচনা করে এ সিদ্ধান্ত নিতে হবে। ওই বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘এসব কারণে আমরা সিদ্ধান্ত দিতে পারিনি। কমিশন জানিয়েছে, বিষয়টি নিয়ে তাঁরা বৈঠক করবেন, প্রয়োজনে আমাদের সহযোগিতা নেবেন।’

গতকালের বৈঠকে আগে সংবিধান সংস্কার পরিষদ বসে বিষয়গুলো বাস্তবায়ন করার যে প্রস্তাব আসে তার পক্ষে বলা হয়, এতে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা দ্রুত সনদ বাস্তবায়নে কাজ করবেন। কারণ তাঁরা বিলম্ব না করে সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নিতে চাইবেন। একজন বিশেষজ্ঞ বলেন, প্রস্তাবটি নিয়ে আলোচনা হলেও বেশির ভাগের মত, এটিও বাস্তবসম্মত নয়। কারণ জনপ্রতিনিধিদের শপথের মাধ্যমে সংসদ গঠিত না হওয়া পর্যন্ত অন্তর্বর্তী সরকারকে দায়িত্বে থেকে যেতে হবে। এটা প্রধান উপদেষ্টাই মানবেন না।

এ অবস্থায় সমাধান কী হতে পারে, এমন প্রশ্নের জবাবে ওই বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘আমরা আদৌ কোনো বাধ্যবাধকতা তৈরি করে দিতে পারব কি না, তা নিয়ে সন্দেহ আছে। কারণ এমন আইনি ও রাজনৈতিক গ্রহণযোগ্য সমাধান পাইনি। তাই বিষয়টি আমাদের সুপারিশে না-ও থাকতে পারে।’

সনদ-বিষয়ক আদেশের খুঁটিনাটি নিয়েও আলোচনা হয়েছে। গণভোটের দিনক্ষণ সরকারের ওপর ছেড়ে দেওয়ার বিষয়ে মত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

কমিশন সূত্র জানায়, আজ সকালে নিজেরা বৈঠক করার পর প্রয়োজন হলে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গেও আবার বৈঠক করা হবে। ৩১ অক্টোবরের মেয়াদের মধ্যেই সনদ বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে সুপারিশ চূড়ান্ত করতে চায় কমিশন।

এনসিপির সঙ্গে বৈঠক

গতকাল বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে বসার আগে কমিশনের সদস্যরা জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সঙ্গে বৈঠক করেন। ১৭ অক্টোবর জুলাই সনদের স্বাক্ষর অনুষ্ঠান হলেও দলটি সই করেনি। এনসিপি বলেছিল, বাস্তবায়নের আদেশের চূড়ান্ত খসড়া না দেখে তারা স্বাক্ষর করবে না।

কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেছেন, গতকালের বৈঠকে এনসিপির প্রতিনিধিরা ‘স্পষ্টভাবে’ জানিয়েছেন যে তাঁরা স্বাক্ষর করতে চান। তাঁরা কিছু প্রস্তাব দিয়েছেন, যা কমিশন আইনি বিশেষজ্ঞদের কাছে পাঠিয়েছে। এনসিপির প্রস্তাবে ইতিবাচক ও নেতিবাচক দুই দিকই আছে। সেই বিষয়গুলো বিবেচনা করে কমিশন এগোচ্ছে। মূল লক্ষ্য হচ্ছে, যেন সবাই স্বাক্ষরের দিকে আসে।

বিশেষজ্ঞ হিসেবে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এম এ মতিন, সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ড. শরিফ ভূইয়া, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের ডিন মোহাম্মদ ইকরামুল হক, ব্যারিস্টার ইমরান সিদ্দিক ও ব্যারিস্টার তানিম হোসেইন শাওন।

আলোচনায় কমিশনের পক্ষে অংশ নেন সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ, সদস্য ড. বদিউল আলম মজুমদার, বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, ড. ইফতেখারুজ্জামান ও ড. মোহাম্মদ আইয়ুব মিয়া। প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দারও এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত