Ajker Patrika

মহাকাশে নতুন যুগ

মইনুল হাসান, ফ্রান্স
আপডেট : ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০৮: ২৭
মহাকাশে নতুন যুগ

মানবসভ্যতার ইতিহাসে আরেকটি অবিস্মরণীয় ঘটনা ঘটে গেল মহাকাশে, গতকাল বাংলাদেশ সময় ভোর ৫টা ১৪ মিনিটে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ডে নাসার নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রের ঘড়িতে তখন ২৬ সেপ্টেম্বর, সন্ধ্যা ৭টা ১৪ মিনিট। গ্রহাণুর আঘাতে বিশ্বকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষার আগাম প্রস্তুতি হিসেবে নাসা এবং ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থা এই প্রথমবারের মতো মহাকাশে একটি চাঞ্চল্যকর এবং সফল পরীক্ষা চালাল।

পৃথিবী থেকে ১ কোটি ১০ লাখ কিলোমিটার দূরে বৃহস্পতি ও মঙ্গল গ্রহের মাঝখানে অবস্থিত গ্রহাণু বেষ্টনীতে লাখ লাখ গ্রহাণুর মধ্যে এক জোড়ার নাম ডাইডায়মস ও ডাইমরফস। ডাইডায়মস নামের ৭৮০ মিটার ব্যাসের গ্রহাণুটিকে কেন্দ্র করে ঘুরছে ডাইমরফস। এর ব্যাস ১৬০ মিটার। জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা ২০১০ সাল থেকে গ্রহাণু দুটিকে পর্যবেক্ষণ করে আসছেন।

জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা গ্রহাণু দুটিকে বেছে নিয়েছিলেন পরীক্ষা চালিয়ে ভবিষ্যতে পৃথিবীকে গ্রহাণুর আঘাত থেকে রক্ষা করার উপায় বের করার জন্য। এই গ্রহাণু যুগলের গতিপথ পরিবর্তনের জন্য নাসা গত বছরের ২৪ নভেম্বর ডাবল অ্যাস্টেরয়েড রিডাইরেকশন টেস্ট বা ডার্ট নামক একটি মহাকাশযান উৎক্ষেপণ করে। 
বিজ্ঞানীরা যেমনটি আশা করেছিলেন, তেমনটিই ঘটেছে। আগে থেকে ঠিক করা সময়ে ৫৫০ কিলোগ্রাম ওজনের ডার্ট নভোযানটি ঘণ্টায় ২২ হাজার ৫০০ কিলোমিটার বা ১৪ হাজার মাইল গতিতে আছড়ে পড়েছে ৫০ লাখ টন ওজনের গ্রহাণু ডাইমরফসের ওপর। ফলে গ্রহাণুটির গতিবেগে সেকেন্ডে শূন্য দশমিক চার মিলিমিটার পরিবর্তন ঘটেছে। খানিকটা বদলে গেছে ডাইমরফসের কক্ষপথ। এই পরিবর্তন খুব সামান্য হলেও দুটি গ্রহাণুর গতিপথে দীর্ঘমেয়াদি এবং বেশ বড় ধরনের পরিবর্তন হবে। মোটকথা বিজ্ঞানীরা সফল হয়েছেন একসঙ্গে দুটি গ্রহাণুকে ভিন্ন পথে পাঠাতে।

ডার্টের সঙ্গে যুক্ত উচ্চ প্রযুক্তির ক্যামেরাটি আগে থেকে আলাদা হয়ে সংঘর্ষের আগের এবং পরের মুহূর্তের দৃশ্য ধারণ করে পাঠিয়ে দিয়েছে ম্যারিল্যান্ডে নাসার নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রে। সেখানে রুদ্ধশ্বাসে অপেক্ষারত বিজ্ঞানী ও প্রযুক্তিবিদেরা সেসব দৃশ্য দেখে নিজেদের সাফল্যে চমকে গেছেন। ডার্ট নভোযানের এই জটিল কিন্তু সফল অভিযানে ব্যয় হয়েছে প্রায় ৩৩ কোটি মার্কিন ডলার।

প্রায় সাড়ে ৬ কোটি বছর আগে প্রায় ১২ কিলোমিটার ব্যাসের একটি গ্রহাণু তীব্র বেগে পৃথিবীর বুকে আছড়ে পড়েছিল। ফলে প্রায় ১৮০ কিলোমিটারজুড়ে একটি গর্ত সৃষ্টি হয়। মহাবিপর্যয় ঘটে পৃথিবীতে। আনুমানিক ১৭ কোটি বছর পৃথিবী দাপিয়ে বেড়ানো অতিকায় ডাইনোসররা বিলুপ্ত হয়ে যায়।

জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা ধারণা করেন, পৃথিবী থেকে মানুষের অস্তিত্ব বিলীন করে দিতে পারে এমন ১ থেকে ১০ কিলোমিটার ব্যাসের হাজারখানেক গ্রহাণু রয়েছে মহাকাশে। তবে স্বস্তির ব্যাপার হলো, প্রতি পাঁচ লাখ বছরে এমন একটি দানব গ্রহাণু আমাদের গ্রহে আছড়ে পড়তে পারে। মোটকথা বিজ্ঞানীরা আমাদের আশ্বস্ত করেছেন যে অদূর ভবিষ্যতে বড় আকারের গ্রহাণু পৃথিবীকে আঘাত করবে না। তবে শহর বা বড় জনপদ ধ্বংস করার মতো মহাকাশে প্রচণ্ড গতিতে ছুটে বেড়ানো গ্রহাণু পৃথিবীতে যে কখনোই আছড়ে পড়বে না, সে নিশ্চয়তা নেই।

ডার্ট নভোযানের এ সফল পরীক্ষাটিতে প্রমাণিত হলো, ভবিষ্যতের মানুষেরা পৃথিবীর সঙ্গে কোনো গ্রহাণুর সংঘর্ষ অনিবার্য হয়ে উঠলে আগে থেকেই তার গতিপথ পরিবর্তনের কৌশল খাঁটিয়ে পৃথিবীকে মহাবিপর্যয়ের হাত থেকে বাঁচাতে সক্ষম হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত