Ajker Patrika

১৯ বছর পর সনির নামে বুয়েটের হল

অর্চি হক, ঢাকা
আপডেট : ০৮ নভেম্বর ২০২১, ১৬: ০৬
১৯ বছর পর সনির নামে বুয়েটের হল

সনির কথা মনে আছে? বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) কেমিকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন সাবিকুন নাহার সনি। ২০০২ সালের ৮ জুন টেন্ডারবাজিকে কেন্দ্র করে বুয়েট ক্যাম্পাসে ছাত্রদলের দুই গ্রুপের গোলাগুলির মধ্যে গুলিবিদ্ধ হয়ে সনি নিহত হন। সেই ঘটনার পর পেরিয়ে গেছে ১৯টি বছর। আলোচিত সেই হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের বিচার এখনো বাস্তবায়ন হয়নি। তবে শিক্ষার্থীদের অব্যাহত দাবির মুখে অবশেষে সনির নামে বুয়েটের একটি ছাত্রী হলের নামকরণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

এ নিয়ে কথা হয় সনির মা অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তা দিলারা বেগমের সঙ্গে। অকালে হারিয়ে যাওয়ার সন্তানের স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে আবেগাপ্লুত এই মা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ও (সনি) মারা যাওয়ার পর আমার চোখে পানি আসে নাই। কিন্তু এখন ওর জন্য আমি কাঁদি। একা থাকলেই ওর কথা আমার মনে পড়ে। অনেক কষ্টে কান্না চেপে রাখি। ওর নামে বুয়েটের হলের নামকরণ হবে, এই খবরটা পড়তে পারি নাই আমি, চোখে পানি এসে গেছে।’

সনি নিহত হওয়ার পর বিচারের দাবি এবং সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন তাঁর সহপাঠীরা। দেশের সেরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাটিতে একজন মেধাবী শিক্ষার্থীর এমন হৃদয়বিদারক মৃত্যুতে শোকে স্তব্ধ হয়েছিল সারা দেশ। তখন থেকেই সনির নামে বুয়েটের একটি হলের নামকরণের দাবি উঠেছিল। অবশেষে গত ২ নভেম্বর বুয়েট সিন্ডিকেটের ৫২৬তম সভায় পুরোনো ছাত্রী হলটিকে ‘সাবিকুন নাহার সনি হল’ হিসেবে নামকরণের সিদ্ধান্ত অনুমোদন করা হয়। ১৯৮৭ সালে নির্মিত এই হলটি চারতলা ছাত্রী হল নামে পরিচিত ছিল।

বুয়েট কর্তৃপক্ষের এমন সিদ্ধান্তে সন্তোষ প্রকাশ করলেও সনির বাবা হাবিবুর রহমান ভুঁইয়া বলেন, কীভাবে সনির মৃত্যু হয়েছে, সেই ঘটনাও হলের সামনে বা সনি স্মৃতিস্তম্ভের পাশে লিখিত আকারে থাকা উচিত। এ প্রসঙ্গে সনির মা বলেন, সনির জন্য বুয়েটে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়েছে। হলেরও নাম দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু কেন, কীভাবে ওর মৃত্যু হলো, সেটা কোথাও না লেখা থাকলে নতুন প্রজন্ম তো এই নামকরণের কারণ বুঝবে না।

তাদের এমন দাবির যথার্থতা বোঝা গেল, বুয়েটের প্রথম বর্ষের কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে। অন্তত চারজন শিক্ষার্থী জানালেন, সনির নামের সঙ্গে তাঁরা পরিচিত। কিন্তু কীভাবে সনি মারা গেছে, সে কথা তাঁদের জানা নেই।

এ প্রসঙ্গে বুয়েটের ছাত্র কল্যাণ দপ্তরের পরিচালক অধ্যাপক মিজানুর রহমান বলেন, পুরোনো ছাত্রী হলটির কোনো নাম ছিল না। শিক্ষার্থীদের দীর্ঘদিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে হলটির নাম সাবিকুন নাহার সনির নামে রাখা হয়েছে। আর কীভাবে তাঁর মৃত্যু হলো, সেটা স্তম্ভ বা হলের সামনে লিখিত আকারে রাখার বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হলে সেটাও ভেবে দেখা হবে।

সনির নামে হলের নামকরণ হওয়ায় সন্তুষ্টি প্রকাশ করলেও মেয়ে হত্যা বিচার নিয়ে আক্ষেপ রয়েছে হাবিবুর রহমানের। বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশনস কোম্পানি লিমিটেডের (বিটিসিএল) অবসরপ্রাপ্ত এই কর্মকর্তা বললেন, ‘সনির মৃত্যুর আগেও শিক্ষাঙ্গনে ছাত্রদের মৃত্যু হয়েছে। এরপরেও এমন ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু কোনোটিরই বিচার কার্যকর হয়নি। বিচার না হলে এ রকম মৃত্যু হতেই থাকবে।’

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সনি হত্যা মামলার প্রধান তিন আসামি—বুয়েট ছাত্রদলের তৎকালীন সভাপতি মোকাম্মেল হায়াত খান মুকিত, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের ক্যাডার সূর্য সেন হলের টগর এবং নুরুল ইসলাম সাগর ওরফে শুটার নুরুকে মৃত্যুদণ্ডের রায় দিয়েছিলেন নিম্ন আদালত। ২০০৬ সালে মৃত্যুদণ্ডাদেশ বাতিল করে তিন আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এ ঘটনায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পাওয়া এস এম মাসুম বিল্লাহ ও মাসুম হাইকোর্টে খালাস পেয়ে যান। প্রধান তিন আসামির মধ্যে টগর এখন জেলে রয়েছেন। কিন্তু মোকাম্মেল হায়াত খান মুকিত অস্ট্রেলিয়া পালিয়ে গেছেন। শুটার নুরুও পলাতক রয়েছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত