Ajker Patrika

শিল্প দিয়ে অটিজম জয়

শাকিলা ববি, সিলেট
শিল্প দিয়ে অটিজম জয়

১৪ বছর বয়সী আফরোজা আক্তার লামিসা। বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশু। গত বছর প্রধানমন্ত্রীর পাঠানো বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা কার্ডে জায়গা করে নেয় লামিসার আঁকা ছবি। সে সিলেট আর্ট অ্যান্ড অটিস্টিক স্কুলের বিশেষ বিভাগের শিক্ষার্থী। অটিজম-আক্রান্ত শিশুদের জন্য পুরো দেশের ৭৩টি বিশেষ স্কুলের মধ্যে এটি অন্যতম।

২০০৯ সালে সিলেট নগরীর কুমারপাড়া ঝরনারপাড় এলাকার পান্না বেগম ও সৈয়দ মোহাম্মদ ইমনের ঘর আলো করে জন্ম নেয় আফরোজা আক্তার লামিসা। প্রথম সন্তান লামিসাকে নিয়ে মা-বাবার উচ্ছ্বাসের কমতি ছিল না। কিন্তু বছর পাঁচেক যেতেই তাঁরা বুঝতে পারেন, শিশুটি অন্য শিশুদের মতো স্বাভাবিক নয়। কিন্তু তারপরও লামিসার মা-বাবা তাকে মাদ্রাসা, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া করানোর চেষ্টা করেন। কোথাও লামিসা সুবিধা করে উঠতে পারছিল না। ২০২১ সালে সিলেট আর্ট অ্যান্ড অটিস্টিক স্কুলে ভর্তি করানো হয় তাকে। লামিসা ছবি আঁকতে পছন্দ করে। প্রথমে নিজে থেকেই সে ছবি আঁকা শিখে নেয়। পরে সিলেট আর্ট অ্যান্ড অটিস্টিক স্কুলে গিয়ে চারুকলা সম্পর্কে আরও ধারণা পায় সে। শুধু তা-ই নয়, লামিসার মতো এই স্কুলের ১৬ বছরের আরেক শিক্ষার্থী জিজাজ ই রসুল চৌধুরী। ২০১৭ সালে ও লেভেল এবং ২০২০ সালে এ লেভেল আর্ট অ্যান্ড ডিজাইন সম্পন্ন করে বর্তমানে সিলেট আর্টস কলেজে চারুকলা বিভাগে পড়ছে সে।

আমাদের দেশে অটিজম নিয়ে মানুষের ধারণা খুবই কম। বছর দশেক আগে দেশের অন্যান্য অঞ্চলের মতো সিলেটের মানুষেরও অটিজম নিয়ে তেমন কোনো ধারণা ছিল না। ছিল না এ-সংশ্লিষ্ট কোনো প্রতিষ্ঠানও। সে সময় সিলেটের শিল্পমনা কয়েকজন তরুণ চারুকলা এবং অটিজমকে সমন্বয়ের চিন্তা করেন। ২০১১ সালে সে সময়কার জেলা প্রশাসক খান মোহাম্মদ বিল্লালের সভাপতিত্বে একটি মিটিংয়ে সিলেট আর্ট অ্যান্ড অটিজম ফাউন্ডেশনের যাত্রা শুরু হয়। ইসমাইল গনি হিমন, ঈশিতা রায়, প্রীতি দেব প্রমুখ এই প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন। ৫ জন শিক্ষক, ১৬ জন অটিজম-আক্রান্ত শিশুকে নিয়ে নগরীর উপশহরের একটি ভাড়া বাড়িতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি কার্যক্রম শুরু করে। সিলেট আর্ট অ্যান্ড অটিস্টিক স্কুলে বর্তমানে শিক্ষক ও কর্মচারীর সংখ্যা ২৬, ছাত্র-ছাত্রীর ৭৫ জন। বিদ্যালয়টি ২০১৫ সালে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের বিশেষ স্কুল হিসেবে স্বীকৃতি পায়। ২০২০ সালে এটি সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের বিশেষ বিদ্যালয় হিসেবে এমপিওভুক্ত হয়। সাংস্কৃতিক বিকাশে বিশেষ অবদানের জন্য ২০১৮ সালে জয় বাংলা অ্যাওয়ার্ডও অর্জন করে এই প্রতিষ্ঠান। বর্তমানে বিদ্যালয়টি সিলেট শহরের কুমারপাড়ায় একটি সরকারি বাড়িতে পরিচালিত হচ্ছে।

সিলেট আর্ট অ্যান্ড অটিজম ফাউন্ডেশনের সদস্যসচিব ইসমাইল গনি হিমন জানিয়েছেন, সিলেট আর্ট অ্যান্ড অটিজম ফাউন্ডেশনের কয়েকটি লক্ষ্যের একটি ছিল চারুকলার বিকাশ। বিষয়টি বিবেচনায় রেখে ২০২০ সালে যাত্রা শুরু করে সিলেট আর্টস কলেজ। এটি নিজস্ব ভবনের জন্য সিলেট সদর উপজেলায় জমি বরাদ্দ পেয়েছে। সিলেট আর্ট অ্যান্ড অটিজম ফাউন্ডেশনের অধীনে শাহ আলম গ্যালারি অব ফাইন আর্টস নামে আরও একটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে।

গত ১০ বছরে অটিজম নিয়ে মানুষের ভাবনায় পরিবর্তন এসেছে। এখন সিলেট অঞ্চলের অসংখ্য অভিভাবক তাঁদের বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের ভর্তি করিয়ে দিচ্ছেন সিলেট আর্ট অ্যান্ড অটিজম স্কুলে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত