Ajker Patrika

মেলায় খাজনা তুলছেন ইউপি চেয়ারম্যান

তাড়াশ (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি
আপডেট : ১৭ এপ্রিল ২০২২, ১৪: ৪৮
Thumbnail image

সিরাজগঞ্জের তাড়াশে এবারও বৈশাখ উপলক্ষে বারুহাস গ্রামে তিন দিনব্যাপী মেলা বসেছে। এ মেলায় ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান অবৈধভাবে বিক্রেতাদের কাছ থেকে খাজনা আদায় করছেন। সেই সঙ্গে ক্রেতাদের থেকেও চাঁদা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

দোকানিরা বলছেন, খাজনা না দিলে দোকানের জিনিসপত্র নষ্ট করার হুমকি দেওয়া হয়। তাই বাধ্য হয়ে তাঁরা খাজনা দিচ্ছেন।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, খাস কালেকশন সরকারি আয়। তা কেবল ভূমি অফিসের লোকজন দিয়ে আদায় করা হয়। কিন্তু ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যরা এ খাজনা আদায় করতে পারবেন না। তবে ইউপি চেয়ারম্যান বলছেন, তিনি এই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান। সে জন্য খাজনা আদায় করবেন।

জানা যায়, প্রায় দেড় শ বছর আগে জমিদার আমলে গড়ে ওঠে চলনবিলের ঐতিহ্যবাহী এ বারুহাস মেলা। মেলাটি বাঙালি সংস্কৃতি-ঐতিহ্যের মেলবন্ধনের প্রতীক হয়ে আছে। তিন দিনের মেলা হলেও আসলে তা সপ্তাহ গড়ায়। গত দুই বছরে করোনা মহামারির জন্য মেলা বন্ধ থাকায় এ বছর জাঁকজমকপূর্ণভাবে মেলা বসেছে।

মেলার দোকানিদের সূত্রে জানা গেছে, বারুহাস ইউনিয়নের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান স্বাক্ষরিত টোকেন ব্যবহার করে তাঁর নিজস্ব লোকজন দিয়ে সরকারি নির্দেশ উপেক্ষা করে অবৈধভাবে খাজনা আদায় করছেন। অনেক ক্ষেত্রে চেয়ারম্যানের লোকজনের কাছে সাধারণ ক্রেতা-বিক্রেতারা হেনস্তা ও লাঞ্ছিত হচ্ছেন। এ নিয়ে ভুক্তভোগীরা অভিযোগও করেছেন।

ক্রেতাদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে জানা গেছে, মেলায় সরকারিভাবে ডাক না হলেও বারুহাস ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও তাঁর নিজস্ব লোকজন স্থানীয় প্রশাসনকে হাত করে বিভিন্ন এলাকা থেকে মেলায় আসা বিভিন্ন দোকানির কাছ থেকে চেয়ারম্যান ময়নুল হকের স্বাক্ষরিত টোকেনের মাধ্যমে অবৈধভাবে খাজনার নামে জোর করে চাঁদা আদায় করা হচ্ছে।

এতে করে বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা দোকানিরা অতিরিক্ত খাজনার ভয়ে বারুহাস গ্রামের আশপাশে যেমন বিনোদপুর বাজার, সাচানদিঘী গ্রাম, কোহিত মোড়, হেদারখাল, মনোহরপুর, দিঘরিড়া বাজারসহ তাড়াশ-সিংড়া রাস্তার পাশে দোকান বসিয়েছেন।

সলঙ্গা থেকে আসা ঝুড়ি ব্যবসায়ী মো. আব্দুর রহিম বলেন, ‘আমার ছোট দোকান থেকে জোর করে ১ হাজার ২০০ টাকা চেয়ারম্যানের লোকজন খাজনা আদায় করেছেন।’

তালম গ্রামের মিষ্টি ব্যবসায়ী মো. ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘সরকারি রসিদ নাই, চেয়ারম্যানের স্বাক্ষরিত টোকেন দিয়ে ১ হাজার ৫০০ টাকা খাজনা নিয়েছেন। এতে বাধা দিলে আমাকে প্রাণের ভয় দেখায় এবং আমার দোকানের জিনিসপত্র নষ্ট করার হুমকি দেয়।’

এ বিষয়ে বারুহাস ইউনিয়ন ভূমি অফিসের অফিস সহায়ক মো. খায়রুল ইসলাম বলেন, ‘এ বিষয়ে আমার কোনো বক্তব্য নেই। চেয়ারম্যান তাঁর লোকজন দিয়ে খাজনা আদায় করছেন।’

স্থানীয় চেয়ারম্যান ময়নুল হকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি এই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান। আমি আমার লোকজন দিয়ে মেলার খাজনা আদায় করব। তবে অতিরিক্ত খাজনা আদায় করা হচ্ছে না।’

এ বিষয়ে তাড়াশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শহিদুল ইসলাম বলেন, মেলা বসানোর অনুমতি দেওয়া হয়নি।

এ বিষয়ে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) লায়লা জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, ‘খাস কালেকশন সরকারি আয়। ভূমি অফিসের লোকজন দিয়ে আদায় করা হয়। এতে ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যদের কোনো প্রকার অংশগ্রহণ নেই।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত