Ajker Patrika

নিয়োগ পরীক্ষায় জালিয়াতি হয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকেও

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ১৪ নভেম্বর ২০২১, ১২: ২৩
নিয়োগ পরীক্ষায় জালিয়াতি হয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকেও

প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ ওঠায় রাষ্ট্রায়ত্ত পাঁচ ব্যাংকের একটি নিয়োগ পরীক্ষা সম্প্রতি বাতিল করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটি। স্থগিত করা হয়েছে আরও তিন ব্যাংকে নিয়োগের লিখিত পরীক্ষা। এসবের মধ্যেই বেরিয়ে এল নতুন তথ্য। আর তা হলো খোদ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়োগ পরীক্ষাতেই জালিয়াতির অভিযোগ। এ কারণে বাংলাদেশ ব্যাংকের সিসিটিভি অপারেটর পদে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত নিয়োগ পরীক্ষা ইতিমধ্যে বাতিল করা হয়েছে। আর বাতিলকৃত লিখিত পরীক্ষা পুনরায় গ্রহণ করার সিদ্ধান্তও নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

জানা গেছে, এই জালিয়াতিতে সহায়তা করার অভিযোগে চলতি বছরের ১৩ জুন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দুজন যুগ্ম পরিচালককে সাময়িক বহিষ্কারও করা হয়েছে। বরখাস্ত হওয়া দুই কর্মকর্তা হলেন যুগ্ম পরিচালক মো. আলমাছ আলী ও আবদুল্লাহ আল মাবুদ। জালিয়াতির ঘটনাটি তদন্তে একটি কমিটি গঠন করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তদন্তে এই দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাঁদের স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হবে এবং তাঁদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র ও মানবসম্পদ বিভাগের দায়িত্বে থাকা নির্বাহী পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম এ বিষয়ে আজকের পত্রিকাকে বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের সিসিটিভি অপারেটর পদে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত নিয়োগ পরীক্ষাটি জালিয়াতির অভিযোগে বাতিল করা হয়েছে। তবে জালিয়াতির মাধ্যমে নিয়োগ কাউকেই

দেওয়া হয়নি। জালিয়াতিতে সহায়তার প্রাথমিক তথ্য পাওয়ায় দুই কর্মকর্তাকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে। আরও তদন্ত চলছে। তদন্ত প্রতিবেদন হাতে পেলে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তাঁদের সম্পৃক্ততা প্রমাণিত হলে তাঁদের স্থায়ীভাবে বহিষ্কার এবং আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

সিসিটিভি অপারেটর পদের ২৬টি শূন্যপদের জন্য ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। পরবর্তী সময়ে ২০২০ সালের ২৭ মার্চ ওই পদের জন্য লিখিত পরীক্ষার তারিখ নির্ধারণ করা হয়। তবে করোনার কারণে সেই পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। এরপর একই বছরের ১৬ অক্টোবর বাংলাদেশ ব্যাংক স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এতে ৭০০ আবেদনকারীর মধ্যে ১৪২ জন অংশ নেন। উত্তীর্ণদের মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া হয় চলতি বছরের ৬ জানুয়ারি। মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নেওয়া চাকরিপ্রার্থীদের তথ্য যাচাইকালে আবু বকর সিদ্দিক নামে একজন পরীক্ষার্থীর হাতের লেখার গরমিল ধরা পড়ে। অর্থাৎ লিখিত পরীক্ষার উত্তরপত্র ও নিজের হাতের লেখার মধ্যে সাদৃশ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি। তখন মৌখিক পরীক্ষায় থাকা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তাদের নানা জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে আবু বকর সিদ্দিক স্বীকার করেন, তাঁর পক্ষে অন্য কেউ পরীক্ষা দিয়েছেন। এরপর ১৩ জানুয়ারি বিশেষ তদন্তের নির্দেশ দেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির।

এদিকে রাষ্ট্রায়ত্ত পাঁচ ব্যাংকের নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগে গ্রেপ্তার আহছানউল্লাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি টেকনিশিয়ান মুক্তারুজ্জামান রয়েল ও জনতা ব্যাংকের গুলশান শাখার অফিসার শামসুল হক শ্যামল স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়ে দায় স্বীকার করেছেন। গতকাল শনিবার ঢাকার মহানগর হাকিম বেগম মাহমুদা আক্তারের কাছে তাঁরা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। জবানবন্দি শেষ হওয়ার পর আদালত দুজনকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

মুক্তারুজ্জামান রয়েল আদালতে বলেন, ব্যাংকের নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র তৈরি এবং নিয়োগ পরীক্ষা গ্রহণের সমস্ত দায়দায়িত্ব ছিল আহছানউল্লাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের। তিনি ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি টেকনিশিয়ান। প্রশ্নপত্র তৈরি করার দায়দায়িত্ব ছিল তাঁর ওপর। তিনি প্রশ্নপত্র সরবরাহ করে মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে অন্যদের সহযোগিতায় পরীক্ষার্থীদের কাছে ছড়িয়ে ছিলেন।

জনতা ব্যাংকের গুলশান শাখার অফিসার শামসুল হক শ্যামল আদালতকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি কর্মকর্তা মুক্তারুজ্জামানের সঙ্গে যোগাযোগ করে তিনি টাকার বিনিময়ে প্রশ্নপত্র ফাঁস করেছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত