জিয়াউল হক, যশোর
বাড়ির নিরাপত্তাপ্রাচীর ঘেঁষে তাকালে, চোখে পড়বে পুরোনো একটি সমাধিস্থল। অবছা হয়ে আসা লেখা দেখে শুধু বোঝা যায়, ‘মাতা’ আর ‘বিশ্বাস’ শব্দ দুটি। যশোর সদরের নীলগঞ্জের মহাশ্মশানের জীর্ণশীর্ণ একটি অবকাঠামোই শুরু ধারণা দেয়, সেখানে চির নিদ্রায় শায়িত আছেন গুরুত্বপূর্ণ কেউ।
শুধু এতটুকুই। প্রবীণেরা ছাড়া কেউ এর ইতিহাস জানেন না। শুধু তাই নয়, সমাধিস্থলের যে মানুষটিকে ঘিরে ইতিহাস, তিনি যেখানে শহীদ হয়েছেন সেখানেও কোনো স্মৃতিচিহ্ন নেই। আছে শুধু বহুতল ভবন।
বলছি, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা চারুবালা করের কথা। যিনি একাত্তরের ৩ মার্চের এ দিনে মুক্তিকামী জনতার মিছিলে পাকিস্তানি বাহিনীর ছোড়া গুলিতে শহীদ হন। মুক্তিযুদ্ধে যশোরের প্রথম শহীদ তিনি।
একাত্তরের এ দিনে স্বাধীনতার দাবিতে সারা দেশের মতো যশোরও উত্তাল হয়ে ওঠে মুক্তিকামী মানুষের মিছিল-স্লোগানে। রাজপথ দখলে নিতে আপামর জনসাধারণ কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে নেমে আসেন। প্রতিরোধ, প্রতিশোধে অব্যাহত থাকে মিছিল ও সভা। ‘জয় বাংলা’ স্লোগানে কম্পিত হয়ে ওঠে রাজপথ, নগর, গ্রাম। গৃহবধূ চারুবালা কর-ও শামিল হয়েছিলেন সেই মিছিলে।
সে দিনের স্মৃতিচারণা করে যশোর সংবাদপত্র পরিষদের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা একরাম-উদ-দ্দৌলা বলেন, ‘মুক্তির দাবিতে সকালে যশোর শহরের ঈদগাহ ময়দান থেকে মিছিল বের করেছিল জনতা। মিছিলটি শহরের দড়াটানা চত্বর, কাপুড়িয়াপট্টি, চৌরাস্তা হয়ে ঢোকে রেল রোডে। একপর্যায়ে সরকারি খাদ্যগুদামের সামনে পাকিস্তানি বাহিনী মিছিলটি ঠেকিয়ে দেয়। এ সময় মুক্তিকামী জনতা পাকিস্তানি সৈন্যদের লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ও জুতা ছুড়তে শুরু করে। অবস্থা বেগতিক দেখে পাকিস্তানি সেনারা ফাঁকা গুলি ছুঁড়তে শুরু করে। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে উড়ন্ত একটি চিল মারা যায়। মৃত চিলটিকে নিয়ে মিছিলটি শহরের ভোলা ট্যাংক রোড, সার্কিট হাউস হয়ে আবারও ঈদগাহে আসে। এ সময় শহরের বিভিন্ন এলাকা থেকে মিছিল নিয়ে অসংখ্য মানুষ ঈদগাহে জড়ো হন।’
বীর মুক্তিযোদ্ধা একরাম-উদ-দ্দৌলা আরও বলেন, ‘তখন খবর এসেছিল, পাকিস্তানিরা টেলিফোন ভবন দখল করে নিয়েছে। আমরা তখন একত্র হয়ে টেলিফোন ভবনের সামনে এসে বিক্ষোভ করতে থাকি। কিছু সময় পর টেলিফোন ভবনের ছাদে অবস্থানরত পাকিস্তানি সেনারা গুলি চালাতে শুরু করে।’
যুদ্ধকালীন বিএলএফ যশোরের প্রধান বীর মুক্তিযোদ্ধা আলী হোসেন মনি বলেন, ‘ওই সময় টেলিফোন ভবনের পশ্চিম পাশের একটি বাড়িতে বাস করতেন পূর্ণ চন্দ্র কর ও তাঁর স্ত্রী চারুবালা কর। গুলি চলাকালে বাড়িতে অবস্থান করছিলেন চারুবালা। এ সময় পাকিস্তানিদের একটি গুলি ঘরের চাল ভেদ করে চারুবালার দেহে বিদ্ধ হয়। ঘটনাটি জানতে পেরে আমরা তাঁকে যশোর সদর হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখানকার মর্গে চারুবালার মৃতদেহ রেখে তালা মেরে দেয় পাকিস্তানি সেনারা। একপর্যায়ে সন্ধ্যার দিকে মর্গের তালা ভেঙে চারুকলার মরদেহ নিয়ে আসেন। পরে মিছিল সহকারে আমরা চারুবালার মরদেহ নীলগঞ্জের মহাশ্মশানে নিয়ে সৎকার শেষে সমাধি করা হয় তাঁকে।’
বীর মুক্তিযোদ্ধা আলী হোসেন মনি বলেন, ‘স্বাধীনতার পর চারুবালার সমাধিস্থলটি স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে রাখা হয়েছিল। ওইটুকুই। এরপর আর কেউ বা কোনো সরকার তাঁর স্মৃতিস্তম্ভটি সংস্কার ও সংরক্ষণ করেননি। এতে অযত্ন, অবহেলায় কালের আবর্তে হারিয়ে যেতে বসেছে চারুকলার শেষ স্মৃতি চিহ্নটুকুও।’
বীর মুক্তিযোদ্ধা রবিউল আলম বলেন, ‘স্বাধীনতাত্তোর সময়ে যশোরের একটি সড়ক চারুবালার নামে নামকরণ করা হয়েছিল। যেটি বর্তমানে মাইকপট্টি হিসেবে বহুল পরিচিত। প্রকৃত ইতিহাস প্রতিষ্ঠিত করতে না পারায় ধীরে ধীরে মানুষ সেটিও ভুলতে বসেছে। আমরা বিভিন্ন সময়ে উদ্যোগ নিলেও, জনপ্রতিনিধিদের উদাসীনতায় তাঁর শেষ স্মৃতিটুকুও রক্ষা পাচ্ছে না।’
যশোর পৌরসভার মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা হায়দার গনি খান পলাশ বলেন, ‘চারুবালা করের শহীদ হওয়ার স্থান এবং সমাধিস্থল ব্যক্তি মালিকানাধীন। ফলে ইচ্ছা করলেই কিছু করতে পারছি না।’
বীর মুক্তিযোদ্ধা হায়দার গনি খান পলাশ আরও বলেন, ‘যদি ঐতিহাসিক ওই স্থান বা বাজেট পাই, তাহলে অনেক কিছুই করা সম্ভব। আমরা চেষ্টা করব, স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের পাশাপাশি একটি ট্রাস্ট ও কমপ্লেক্স করার। সে জন্য আমাদের সুযোগ তৈরি করে দিতে হবে।’
বাড়ির নিরাপত্তাপ্রাচীর ঘেঁষে তাকালে, চোখে পড়বে পুরোনো একটি সমাধিস্থল। অবছা হয়ে আসা লেখা দেখে শুধু বোঝা যায়, ‘মাতা’ আর ‘বিশ্বাস’ শব্দ দুটি। যশোর সদরের নীলগঞ্জের মহাশ্মশানের জীর্ণশীর্ণ একটি অবকাঠামোই শুরু ধারণা দেয়, সেখানে চির নিদ্রায় শায়িত আছেন গুরুত্বপূর্ণ কেউ।
শুধু এতটুকুই। প্রবীণেরা ছাড়া কেউ এর ইতিহাস জানেন না। শুধু তাই নয়, সমাধিস্থলের যে মানুষটিকে ঘিরে ইতিহাস, তিনি যেখানে শহীদ হয়েছেন সেখানেও কোনো স্মৃতিচিহ্ন নেই। আছে শুধু বহুতল ভবন।
বলছি, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা চারুবালা করের কথা। যিনি একাত্তরের ৩ মার্চের এ দিনে মুক্তিকামী জনতার মিছিলে পাকিস্তানি বাহিনীর ছোড়া গুলিতে শহীদ হন। মুক্তিযুদ্ধে যশোরের প্রথম শহীদ তিনি।
একাত্তরের এ দিনে স্বাধীনতার দাবিতে সারা দেশের মতো যশোরও উত্তাল হয়ে ওঠে মুক্তিকামী মানুষের মিছিল-স্লোগানে। রাজপথ দখলে নিতে আপামর জনসাধারণ কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে নেমে আসেন। প্রতিরোধ, প্রতিশোধে অব্যাহত থাকে মিছিল ও সভা। ‘জয় বাংলা’ স্লোগানে কম্পিত হয়ে ওঠে রাজপথ, নগর, গ্রাম। গৃহবধূ চারুবালা কর-ও শামিল হয়েছিলেন সেই মিছিলে।
সে দিনের স্মৃতিচারণা করে যশোর সংবাদপত্র পরিষদের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা একরাম-উদ-দ্দৌলা বলেন, ‘মুক্তির দাবিতে সকালে যশোর শহরের ঈদগাহ ময়দান থেকে মিছিল বের করেছিল জনতা। মিছিলটি শহরের দড়াটানা চত্বর, কাপুড়িয়াপট্টি, চৌরাস্তা হয়ে ঢোকে রেল রোডে। একপর্যায়ে সরকারি খাদ্যগুদামের সামনে পাকিস্তানি বাহিনী মিছিলটি ঠেকিয়ে দেয়। এ সময় মুক্তিকামী জনতা পাকিস্তানি সৈন্যদের লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ও জুতা ছুড়তে শুরু করে। অবস্থা বেগতিক দেখে পাকিস্তানি সেনারা ফাঁকা গুলি ছুঁড়তে শুরু করে। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে উড়ন্ত একটি চিল মারা যায়। মৃত চিলটিকে নিয়ে মিছিলটি শহরের ভোলা ট্যাংক রোড, সার্কিট হাউস হয়ে আবারও ঈদগাহে আসে। এ সময় শহরের বিভিন্ন এলাকা থেকে মিছিল নিয়ে অসংখ্য মানুষ ঈদগাহে জড়ো হন।’
বীর মুক্তিযোদ্ধা একরাম-উদ-দ্দৌলা আরও বলেন, ‘তখন খবর এসেছিল, পাকিস্তানিরা টেলিফোন ভবন দখল করে নিয়েছে। আমরা তখন একত্র হয়ে টেলিফোন ভবনের সামনে এসে বিক্ষোভ করতে থাকি। কিছু সময় পর টেলিফোন ভবনের ছাদে অবস্থানরত পাকিস্তানি সেনারা গুলি চালাতে শুরু করে।’
যুদ্ধকালীন বিএলএফ যশোরের প্রধান বীর মুক্তিযোদ্ধা আলী হোসেন মনি বলেন, ‘ওই সময় টেলিফোন ভবনের পশ্চিম পাশের একটি বাড়িতে বাস করতেন পূর্ণ চন্দ্র কর ও তাঁর স্ত্রী চারুবালা কর। গুলি চলাকালে বাড়িতে অবস্থান করছিলেন চারুবালা। এ সময় পাকিস্তানিদের একটি গুলি ঘরের চাল ভেদ করে চারুবালার দেহে বিদ্ধ হয়। ঘটনাটি জানতে পেরে আমরা তাঁকে যশোর সদর হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখানকার মর্গে চারুবালার মৃতদেহ রেখে তালা মেরে দেয় পাকিস্তানি সেনারা। একপর্যায়ে সন্ধ্যার দিকে মর্গের তালা ভেঙে চারুকলার মরদেহ নিয়ে আসেন। পরে মিছিল সহকারে আমরা চারুবালার মরদেহ নীলগঞ্জের মহাশ্মশানে নিয়ে সৎকার শেষে সমাধি করা হয় তাঁকে।’
বীর মুক্তিযোদ্ধা আলী হোসেন মনি বলেন, ‘স্বাধীনতার পর চারুবালার সমাধিস্থলটি স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে রাখা হয়েছিল। ওইটুকুই। এরপর আর কেউ বা কোনো সরকার তাঁর স্মৃতিস্তম্ভটি সংস্কার ও সংরক্ষণ করেননি। এতে অযত্ন, অবহেলায় কালের আবর্তে হারিয়ে যেতে বসেছে চারুকলার শেষ স্মৃতি চিহ্নটুকুও।’
বীর মুক্তিযোদ্ধা রবিউল আলম বলেন, ‘স্বাধীনতাত্তোর সময়ে যশোরের একটি সড়ক চারুবালার নামে নামকরণ করা হয়েছিল। যেটি বর্তমানে মাইকপট্টি হিসেবে বহুল পরিচিত। প্রকৃত ইতিহাস প্রতিষ্ঠিত করতে না পারায় ধীরে ধীরে মানুষ সেটিও ভুলতে বসেছে। আমরা বিভিন্ন সময়ে উদ্যোগ নিলেও, জনপ্রতিনিধিদের উদাসীনতায় তাঁর শেষ স্মৃতিটুকুও রক্ষা পাচ্ছে না।’
যশোর পৌরসভার মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা হায়দার গনি খান পলাশ বলেন, ‘চারুবালা করের শহীদ হওয়ার স্থান এবং সমাধিস্থল ব্যক্তি মালিকানাধীন। ফলে ইচ্ছা করলেই কিছু করতে পারছি না।’
বীর মুক্তিযোদ্ধা হায়দার গনি খান পলাশ আরও বলেন, ‘যদি ঐতিহাসিক ওই স্থান বা বাজেট পাই, তাহলে অনেক কিছুই করা সম্ভব। আমরা চেষ্টা করব, স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের পাশাপাশি একটি ট্রাস্ট ও কমপ্লেক্স করার। সে জন্য আমাদের সুযোগ তৈরি করে দিতে হবে।’
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫পাকিস্তানে ভারতের হামলার সমালোচনা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। চীনও এই হামলাকে ‘দুঃখজনক’ বলে অভিহিত করেছে। উদ্বেগ জানিয়েছে জাতিসংঘও। উত্তেজনা যেন আরও না বাড়ে, সে জন্য দুই পক্ষকে সংযত থাকার আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ, ফ্রান্সসহ বিভিন্ন দেশ। এদিকে ভারতের অবস্থানকে সমর্থন করেছে...
০৮ মে ২০২৫