Ajker Patrika

কত আর ভোগান্তি!

সম্পাদকীয়
আপডেট : ০৬ এপ্রিল ২০২২, ১০: ৫৭
কত আর ভোগান্তি!

রোজার মাসে মানুষ যাতে স্বস্তির সঙ্গে রোজা রাখতে পারেন, সেটা নিশ্চিত করা সরকারের দায়িত্ব। জিনিসপত্রের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখার দাবি উঠলেও তা কার্যকর করা যায় না। রমজান মাসকে সংযমের মাস বলা হলেও আমাদের দেশে অনেক কিছুতেই এই মাসেও চলে অসংযমের প্রতিযোগিতা। এবার রোজার প্রথম দিনই বড় ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে রাজধানীসহ আশপাশের এলাকার অনেক মানুষকে। গ্যাসের অভাবে অনেকের বাসায় চুলা জ্বলেনি, ইফতার-সাহ্‌রি তৈরি করা সম্ভব হয়নি। ইফতার ও সাহ্‌রির খাবারের জন্য যেতে হয়েছে দোকানে। দোকানিরা ভিড় সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন।

রোজার দ্বিতীয় দিনে এসে বাসাবাড়ির গ্যাস সংকটের সঙ্গে যোগ হয়েছে পরিবহনে গ্যাসের সংকট। সোমবার সকাল থেকে গ্যাসচালিত যানবাহনগুলো এক রিফুয়েলিং স্টেশন থেকে আরেকটিতে ঘুরেছে গ্যাসের জন্য। অনেক স্টেশনে লেগেছিল গাড়ির লম্বা লাইন।

এমনিতেই বছরে সবচেয়ে বেশি বিদ্যুতের চাহিদা থাকে গ্রীষ্ম মৌসুমে। এবার একই সময়ে রোজা হওয়ায় বিদ্যুৎ উৎপাদনে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি হিসেবে বিদ্যুৎ খাতে গ্যাস সরবরাহ বাড়ানোর নির্দেশনা দিয়েছিল জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়। এখন উল্টো সরবরাহ কমে যাওয়ায় চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে নাজেহাল হচ্ছে পিডিবি। ব্যয়বহুল তেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র চালিয়েও অনেক এলাকায় লোডশেডিং করতে হচ্ছে।

গ্যাসের এই সংকট আরও কয়েক দিন থাকতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। হঠাৎ করে কেন এই গ্যাস সংকট? দেশের সবচেয়ে বড় গ্যাস উৎপাদনক্ষেত্র মৌলভীবাজারের বিবিয়ানা। দিনে এখানে উৎপাদনক্ষমতা ১২০ কোটি ঘনফুট। গত শনিবারও এখান থেকে তোলা হয়েছে ১২৭ কোটি ৫০ লাখ ঘনফুট গ্যাস। ওই দিন মধ্যরাতের পর গ্যাস প্রক্রিয়াকরণের দুটি ইউনিটে বালু উঠে আসে। বালুর উৎস শনাক্ত করতে না পারায় রোববার ছয়টি কূপের উৎপাদন বন্ধ করা হয়। এতে ৪২ কোটি ঘনফুট উৎপাদন কমায় গ্যাসের সরবরাহে সংকট দেখা দেয়।

যথাযথভাবে উৎপাদন করা হলে কূপ থেকে বালু আসার কথা নয়। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সক্ষমতার অতিরিক্ত উৎপাদনের কারণেই এমন হতে পারে। বিবিয়ানায় অতিরিক্ত গ্যাস উৎপাদন নিয়ে বিভিন্ন সময় সতর্ক করা হলেও তা কেন অমান্য করা হচ্ছে—এই প্রশ্নের জবাব কে দেবে?

বিবিয়ানা গ্যাসক্ষেত্রে উৎপাদনের দায়িত্বে আছে মার্কিন বহুজাতিক কোম্পানি শেভরন। বিবিয়ানা থেকে উৎপাদন শুরু হয় ২০০৭ সালে। সক্ষমতার অতিরিক্ত উৎপাদন নিয়ে বিভিন্ন সময় তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর আগে অতিরিক্ত উৎপাদনের কারণে মাত্র ১১ বছরের মাথায় ২০১৩ সালে বন্ধ হয়ে যায় সমুদ্রের একমাত্র গ্যাসক্ষেত্র সাঙ্গু। এর দায়িত্বে ছিল অস্ট্রেলীয় কোম্পানি সান্তোস। এ ঘটনার পরও বিবিয়ানার ক্ষেত্রে সতর্ক হয়নি পেট্রোবাংলা।

নিরাপদ, নির্ভরযোগ্য ও অব্যাহত গ্যাস সরবরাহ করার ক্ষেত্রে কারও দায়িত্বহীনতা বা অবহেলা থাকলে তার তদন্ত এবং প্রতিকার হওয়া জরুরি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত