Ajker Patrika

শয্যা কম, মেঝেতে চিকিৎসা

খান রফিক, বরিশাল
আপডেট : ২৭ ডিসেম্বর ২০২১, ১০: ৪৪
শয্যা কম, মেঝেতে চিকিৎসা

বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (শেবাচিম) বেডের সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করেছে। প্রতিদিন শত শত রোগীকে এখানে বারান্দা ও মেঝেতে কাটাতে হয়। শেবাচিম হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এ তথ্য স্বীকার করে বলেছেন, হাসপাতালটির এখন সবচেয়ে বড় সমস্যা অবকাঠামো সংকট। ধারণক্ষমতার তিন গুণ রোগী দৈনিক শেবাচিম হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা নিচ্ছে।

শেবাচিমে গিয়ে কথা হয় রিনা বেগমের সঙ্গে। জানালেন কদিন ধরে বারান্দার মেঝেতে পড়ে আছেন। এরপরও বেডের ব্যবস্থা হয়নি তাঁর। হাসপাতালের এই মহিলা মেডিসিন ওয়ার্ডের বাইরের বারান্দায় মেঝেতে গত ৩ তিন ধরে অর্ধশত রোগীর ঠাঁই হতে দেখা গেছে। এমন একাধিক ওয়ার্ডে রোগীর স্থান হচ্ছে মেঝেতে। সুগন্ধা নদীতে লঞ্চে আগুনে পোড়া রোগী শেবাচিম হাসপাতালে ভর্তি হলে এমন দুর্ভোগের চিত্র আরও বেশি করে নজরে পড়ে সবার। কিন্তু হাসপাতালের মেঝেতে মেঝেতে থাকা এমন শত শত নানা ধরনের রোগীর চিকিৎসাসেবার ভাগ্যে পরিবর্তন আসেনি।

শেবাচিম হাসপাতালের প্রশাসনিক শাখা সূত্রে জানা গেছে, ৫০০ শয্যার হাসপাতালকে মুখে মুখে ১০০০ শয্যা করা হয়েছে। সেখানে রোগী থাকে দৈনিক ১৫০০ থেকে ২০০০। এদের একটি বড় অংশ বেড না পেয়ে হাসপাতালের বারান্দায় মেঝেতে চিকিৎসা সেবা নেন।

হাসপাতালের তৃতীয় তলার প্রসূতি ওয়ার্ডের রোগীদের একটি বড় অংশের শুরুর ঠিকানা হয় বারান্দায় মেঝেতে। এরপর ওই বারান্দায় বিছানো কিছু বেডে স্থান পান তারা। প্রসূতি ওয়ার্ডে বেড পেতে তদবির কিংবা ভাগ্য থাকতে হয় এমনটাই জানান সেখানকার একাধিক রোগী ও স্বজন। গত শনিবার প্রসূতি ওয়ার্ডে ঘুরে বারান্দায় থাকা নারীদের নিদারুণ কষ্টের চিত্র দেখা গেছে। বেড না পেয়ে মেঝেতেই অনেকে সব জিনিসপত্র বিছিয়ে থাকছেন।

বাকেরগঞ্জ থেকে আসা এক রোগীর স্বামী আব্দুল রহমান জানান, প্রথম বাবা হয়েছেন তিনি। কিন্তু সন্তান ও মায়ের বেডে স্থান হয়নি। সদর উপজেলার চরবাড়িয়া থেকে আসা অপর এক রোগীর স্বজন কামাল হোসেন জানান, ওয়ার্ডের মতো বাইরে এতটা সেবা মেলে না। তা ছাড়া রাতে শীতে কুকরে থাকতে হয়।

প্রসূতি ওয়ার্ডের একাধিক সেবিকা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, রোগীর চাপের অপেক্ষা বেডের সংখ্যা কম। এ ওয়ার্ডে দৈনিক ১৭০-১৮০ জন রোগী সেবা নেয়। এর মধ্যে ৪০-৫০ জনের স্থান হয় বারান্দায়। করোনাকালীন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বারান্দায় অস্থায়ী বেড স্থাপন করে।

হাসপাতালের ৪র্থ তলার মহিলা মেডিসিন ওয়ার্ডে ৪টি ইউনিট রয়েছে। যেখানে সর্বোচ্চ ৪০০ রোগী দৈনিক চিকিৎসা সেবা নেয়। এর মধ্যে বেড রয়েছে ৬০টি। বারান্দায় মেঝেতে থাকছে ১০০ থেকে ১৫০ জনকে।

একই অবস্থা ৩ তলার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের মহিলা সার্জারি, দ্বিতীয় তলার শিশু ওয়ার্ড এবং ৫ তলার পুরুষ সার্জারি ওয়ার্ডে। এসব ওয়ার্ডে কখনো রোগী বারান্দায় আবার কখনো বারান্দা থেকে ওয়ার্ডে ঢুকলেও ঠাঁই হয় মেঝেতে।

৫০০ শয্যার নতুন করোনা ভবনে কোনো কোনো ওয়ার্ডকে স্থান দিলে দুর্ভোগ কমবে বলে মনে করেন সেবিকারা। এ ছাড়া ৩টি পুরুষ মেডিসিন ওয়ার্ডের একটি ছেড়ে দিলে নারী মেডিসিন ওয়ার্ড দুটি হবে। তাতে রোগীর ভোগান্তি কমতে পারে বলে ওই সব ওয়ার্ডের স্টাফরা জানান।

সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) বরিশাল জেলা সভাপতি অধ্যাপক শাহ সাজেদা বলেন, অগ্নিকাণ্ডের মতো বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটলেই শেবাচিম হাসপাতালের বেহাল স্বাস্থ্য সেবার কথা সবার মনে পড়ে। কিন্তু দিনের পর দিন রোগীদের যে বেড দেওয়ার ব্যবস্থা হচ্ছে না তা দেখার কেউ নেই। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকেই এ দুরবস্থা আর সংকট কাটিয়ে রোগীর চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে হবে।

এ ব্যাপারে শেবাচিম হাসপাতালের পরিচালক ডা. সাইফুল ইসলাম বলেন, স্বাধীনতার আগে এ হাসপাতাল নির্মিত হয়। তখনকার জনসংখ্যার বিবেচনায় হাসপাতালের ভবন ও জনবল কাঠামো করা হয়েছিল। সেটা দিয়ে এখনো চলছে। ফলে সংকট এখানে নিয়মিত ঘটনা। সবচেয়ে বড় সংকট হচ্ছে হাসপাতালের ভবন সংকট। নতুন ভবন নির্মাণ করা গেলে রোগী ও দর্শনার্থীদের স্থানের সংকট দূর হবে বলে মনে করেন পরিচালক ডা. সাইফুল।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

কুয়েটে ক্লাস বর্জন নিয়ে শিক্ষক সমিতিতে মতবিরোধ, এক শিক্ষকের পদত্যাগ

এনবিআর বিলুপ্তির জেরে প্রায় অচল দেশের রাজস্ব কর্মকাণ্ড

দুটি নোবেলের গৌরব বোধ করতে পারে চবি: প্রধান উপদেষ্টা

আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধের প্রশ্নে যে প্রতিক্রিয়া জানাল যুক্তরাষ্ট্র

২ ম্যাচ খেলেই মোস্তাফিজ কীভাবে ৬ কোটি রুপি পাবেন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত