Ajker Patrika

ঠগবাজদের রোখার কেউ নেই?

সম্পাদকীয়
আপডেট : ৩০ জানুয়ারি ২০২২, ০৯: ১৬
ঠগবাজদের রোখার কেউ নেই?

এই একবিংশ শতাব্দীতেও কেউ এসব বিশ্বাস করেন, এটা ভেবে প্রথমে একটু খারাপ লাগলেও পরে সবাই এটা ভেবে আশ্বস্ত হবেন যে, এই হলো এখনো আমাদের বাংলাদেশের সমাজ  বাস্তবতা। একদিকে ডিজিটাল বাংলাদেশের গৌরবের কাহিনি প্রচার, অন্যদিকে অন্ধকারে ঢাকা অসংখ্য মানুষের জীবন। কেউ উন্নত চিকিৎসার জন্য উড়াল দিতে পারেন যেকোনো দেশে। আবার অনেককেই রোগব্যাধি থেকে মুক্তি পেতে ঝাড়ফুঁক, পানিপড়ার ওপর নির্ভর করতে হয়।

চট্টগ্রামের হাটহাজারী থেকে মোহাম্মদ আলী ওরফে ‘পানিবাবা’ নামের এক কবিরাজকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মোহাম্মদ আলী নিজেকে ভুয়া কবিরাজ বলে স্বীকার করেছেন। প্রতারণার মাধ্যমে মানুষকে তিনি তাবিজ ও পানিপড়া দিতেন। এরপর কৌশলে নারীদের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করতেন। তাঁদের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিতেন।

আজকের পত্রিকায় প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, প্রবাসী স্বামীর সঙ্গে তিন মাস যোগাযোগ ছিল না এক নারীর। তাঁকে কেউ স্বামীর খোঁজ দিতে পারেনি। একপর্যায়ে প্রতিবেশীর পরামর্শে স্বামীর খোঁজে দ্বারস্থ হন পানিবাবা নামের ওই কবিরাজ বা বৈদ্যের কাছে। ওই বৈদ্য তাঁর কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেওয়াসহ কৌশলে ধর্ষণ করেন।

ওই নারীর ১৮ বছর আগে বিয়ে হয়েছে। তাঁদের ঘরে একটি সন্তান আছে। তাঁর স্বামী ছয় বছর ধরে প্রবাসে থাকেন। কিন্তু গত তিন মাস স্বামীর সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায় তাঁর। স্বামীর সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য এক প্রতিবেশীর পরামর্শে বৈদ্য মোহাম্মদ আলীর কাছে যান।

২২ জানুয়ারি পানিপড়া খেতে নিজের আখড়ায় ওই নারীকে যেতে বলেন মোহাম্মদ আলী। সেখানে কৌশলে পানির ভেতর ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে দেন। সেই পানি খেয়ে ওই নারী অজ্ঞান হয়ে পড়েন। জ্ঞান ফিরে এলে একটি খাটের ওপর নিজেকে অর্ধ উলঙ্গ অবস্থায় দেখে তিনি বুঝতে পারেন, তাঁকে ধর্ষণ করা হয়েছে।

এ ধরনের প্রতারণার ঘটনা এই প্রথম ঘটেছে, তা নয়। বাংলাদেশের অনেক এলাকাতেই দিনের পর দিন নানা উপায়ে মানুষ ঠকানোর ব্যবসা চলে আসছে। যাঁরা লেখাপড়া জানেন না, যাঁরা আধুনিকতার ছোঁয়াবঞ্চিত, তাঁরাই শুধু ঠগবাজদের খপ্পরে পড়েন, তা নয়। শিক্ষিত মানুষও এমন প্রতারক চক্রের জালে পড়েন। আর যদি তা না-ও পড়েন, তাহলে না বুঝে হলেও তাঁদের পৃষ্ঠপোষকতা বা প্রশ্রয় দিয়ে থাকেন।

পানিবাবা মোহাম্মদ আলী যে একজন ভুয়া বৈদ্য বা চিকিৎসক, সেটা নিশ্চয়ই তাঁর এলাকার মানুষের কাছে অজানা নয়। স্থানীয় সচেতন মানুষ, জনপ্রতিনিধি, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী—কারও কাছেই কি তাঁর অপকীর্তি বা অপকর্মের কোনো খবর, তথ্য ছিল না? একজন নারী প্রবঞ্চিত হয়ে অভিযোগ না করলে ওই ব্যক্তি তো তাঁর মানুষ ঠকানোর বাণিজ্য চালিয়ে যেতেন। এখন গ্রেপ্তার হলেও তাঁর শাস্তি হবে, তিনি ভালো হয়ে যাবেন, তারও কোনো নিশ্চয়তা নেই। এ অবস্থার অবসান হওয়া দরকার।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত