Ajker Patrika

চালক পালালে প্রাণহানি বাড়ে

বরগুনা প্রতিনিধি
আপডেট : ২৯ ডিসেম্বর ২০২১, ১২: ৪৩
Thumbnail image

চার মাস আগে ঢাকা থেকে বরগুনায় যাওয়ার পথে ঝালকাঠির বিষখালী ডুবোচরে আটকে যাওয়ার পর যাত্রীদের রেখে পালিয়েছিলেন অভিযান-১০ লঞ্চের চালক ও কর্মচারীরা। পরে নিজ খরচ ও ব্যবস্থাপনায় গন্তব্য পৌঁছেছিলেন যাত্রীরা।

সে সময় ওই লঞ্চে ছিলেন এমন কয়েকজন যাত্রী জানান, চলতি বছরের ১২ আগস্ট অভিযান-১০ লঞ্চটি ঢাকা থেকে যাত্রী নিয়ে বরগুনায় যাওয়ার পথে ঝালকাঠির রাজাপুরে বিষখালী নদীর ডুবোচরে আটকে যায়। গভীর রাতে যাত্রীদের লঞ্চে রেখেই পালিয়ে যান চালক ও কর্মচারীরা। ১২ আগস্টের ওই ঘটনার পর লঞ্চে আটকে পড়া যাত্রীরা অভিযোগ করেন, শাহরুখ-২ নামের একটি লঞ্চের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে যাচ্ছিল অভিযান-১০। পাশ কাটিয়ে যাওয়ার সময় তা ডুবোচরে আটকে যায়। চার শতাধিক যাত্রীকে তখন গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা না করেই চালক ও কর্মচারীরা পালিয়ে যান।

ওই দিন যাত্রীরা বরগুনা নৌবন্দরে পৌঁছে লঞ্চ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বাগ্‌বিতণ্ডা করেন এবং ভাড়া ফেরত চান। চরে আটকা পড়া লঞ্চের যাত্রী ছিলেন বরগুনা সদর উপজেলা ক্রোক এলাকার বশির পঞ্চায়েত। তিনি জানান, ওই দিন গভীর রাতে ধাক্কায় ঘুম ভাঙে যাত্রীদের। তিনিও ঘুম থেকে জেগে দেখতে পান, লঞ্চ চরে আটকে আছে। অনেক চেষ্টার পরও লঞ্চ ডুবোচর থেকে নামানো সম্ভব হয়নি। চালক-কর্মচারীরা ভোররাতেই যাত্রীদের রেখে পালিয়ে যান। পরে তাঁরা ট্রলার ভাড়া করে গন্তব্য পৌঁছান।’

বশিরের মতো অন্য যাত্রীরা লঞ্চ থেকে নেমে নিজ খরচে গন্তব্যে যান। ডুবোচরে লঞ্চটি ১০ দিন আটকা থাকার পর ডকইয়ার্ডে নিয়ে নতুন ইঞ্জিন সংযোজনসহ আধুনিকায়ন করা হয়।

২৩ ডিসেম্বর রাতে লঞ্চটিতে আগুন লাগার সময়ও চালক-কর্মচারীরা মাঝনদীতে লঞ্চ রেখে ঝালকাঠি সদরের চরভাটারকান্দা গ্রামে পালিয়ে যান।

প্রত্যক্ষদর্শী ও চরভাটারকান্দা গ্রামের কৃষক বেলায়েত হোসেন বলেন, ‘গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত তিনটার দিকে লঞ্চটিতে আগুন ছড়িয়ে পড়লে চালক চরভাটারকান্দা গ্রামের চরে ভেড়ানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু উচ্চ জোয়ারের চাপে লঞ্চটি সেখানে ভিড়তে পারেনি। পরে সেখানে দুই শতাধিক যাত্রী নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়েন। সঙ্গে সঙ্গে লঞ্চটির চালক ও কর্মচারীরা সেখানে নেমে পালিয়ে যান। পরে চালকবিহীন লঞ্চটি নদীতে ভেসে ওপারের দিয়াকুল গ্রামে গিয়ে থেমে যায়। সেখানে ভিড়তে প্রায় ৪০ মিনিট সময় লেগে যায়। এ সময়ের মধ্যে প্রাণহানি অনেক বেড়ে যায়।’

এ ঘটনার তদন্ত করছে ফায়ার সার্ভিসের একটি দল। গত রোববার ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক (অপারেশন) লেফটেন্যান্ট কর্নেল জিল্লুর রহমান ঝালকাঠি লঞ্চঘাটে পুড়ে যাওয়া লঞ্চটি পরিদর্শন করেন। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীটি তেমন বড় নয়। আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গে চালক একটি পাড়ে নোঙর করতে পারতেন। তখন মানুষ লাফিয়ে তীরে আসত। কিন্তু চালক তা না করে যাত্রীদের আগুনের মধ্যে ফেলে রেখে চলে যান।’

বরগুনা জেলা যাত্রী অধিকার সংরক্ষণ কমিটির সভাপতি সঞ্জীব দাস বলেন, ‘যাত্রীদের সঙ্গে লঞ্চ কর্তৃপক্ষের এমন অবহেলাপূর্ণ আচরণ দুঃখজনক। একজন নাগরিক হিসেবে নিরাপদ চলাচলের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্বের অংশ। নাগরিকেরা যদি যানবাহন ও নৌযান মালিক ও কর্মচারীদের কাছে অসহায় হয়ে পড়েন, সেখানে মৌলিক অধিকার বলতে কিছু থাকে না। আমরা এ ঘটনার এমন শাস্তি দাবি করছি, যাতে সড়ক, নৌসহ সব সেক্টরের পরিবহনসংশ্লিষ্টরা শিক্ষা গ্রহণ করেন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত