Ajker Patrika

বৃষ্টিতে শুঁটকির ব্যাপক ক্ষতি

শরণখোলা (বাগেরহাট) প্রতিনিধি
আপডেট : ০৭ ডিসেম্বর ২০২১, ১৭: ০৪
বৃষ্টিতে শুঁটকির ব্যাপক ক্ষতি

ঘূর্ণিঝড় ‘জাওয়াদ’-এর প্রভাবে টানা বৃষ্টির সঙ্গে জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পেয়েছে সমুদ্র উপকূলে। বৃষ্টিতে নষ্ট হয়ে গেছে সুন্দরবনের চারটি চরের দুই কোটি টাকার শুঁটকি। মৌসুমের শুরুতে বড় ধাক্কায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন জেলে ও শুঁটকি ব্যবসায়ীরা। তবে মাছ ধরার নৌকাসহ জেলেরা সুন্দরবনের খালে নিরাপদ আশ্রয়ে রয়েছে। লাগাতার বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে ক্ষতির পরিমাণ বাড়তে পারে বলে জানিয়েছেন সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন।

সুন্দরবনের আলোরকোল, মাঝের চর, নারকেলবাড়ীয়া ও শেওলার চর এলাকায় কমপক্ষে প্রায় ১৫ হাজার জেলে শুঁটকি আহরণ করছেন। বৃষ্টি ও বৈরী আবহাওয়ায় গেল পাঁচ দিন ধরে সাগর উত্তাল থাকায় জেলেরা মাছ ধরতে পারছেন না। পাশাপাশি টানা বৃষ্টির ফলে শুঁটকি পল্লিতে জেলে ব্যবসায়ীদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এর ফলে শুঁটকিপল্লি থেকে রাজস্ব আয়ও কমবে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

দুবলার মাঝেরকেল্লা থেকে শরণখোলার জেলে ইউনুস আলী ফকির মোবাইল ফোনে জানান, গত শনিবার রাতে ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের ঝড় দুবলারচর অঞ্চলের ওপর দিয়ে বয়ে যায়। প্রবল বর্ষণের সঙ্গে বঙ্গোপসাগরের পানি ৩ / ৪ ফুট বেড়ে যায়।

সুন্দরবনের আলোর কোল শুঁটকি পল্লি থেকে মুঠোফোনে ব্যবসায়ী আবু তাহের বলেন, গেল পাঁচ দিন ধরে বৃষ্টি ও জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় শুঁটকির মাচা ছুঁই ছুঁই পানি হয়েছে। এ ছাড়া অবিরাম বৃষ্টিতে ভিজে নষ্ট হয়ে গেছে চরের অসংখ্য মাচার শুঁটকি। তাঁরই প্রায় সাত লাখ টাকার শুঁটকি নষ্ট হয়ে গেছে। এ ছাড়া সাত দিন ধরে তাঁর ২৬ জন জেলে ট্রলার নিয়ে সাগরে যেতে পারছেন না। ফলে তাঁরা ব্যাপক আর্থিক ক্ষতির শিকার হচ্ছেন। গেল বছর করোনার কারণে ২৫ লাখ টাকার লোকসান গুনেছেন। এবার শুরুতেই বড় ধরনের বাধা আসল।

শুঁটকিপল্লির জেলে আজাদ শেখ বলেন, শুঁটকি আহরণ করতে তাঁরা মোট ১৮ জন জেলে এসেছেন। পাঁচ দিন ধরে হাত-পা গুটিয়ে বসে আছেন, সাগরে নামতে পারছেন না। এভাবে চলতে থাকলে শুঁটকি পল্লিতে আসার জন্য করা ঋণের টাকাই শোধ করতে পারবেন না, লাভ তো দূরে থাক।

শনিবার রাতে আলোরকোলে জেলেদের মাছ শুকানোর মাচা ও খোলা (মাঠ) ৩ / ৪ ফুট পানির নিচে ডুবে যাওয়ায় শত শত জেলের মাছ ভেসে যায় ও ভিজে নষ্ট হয়ে যায়। জেলেদের থাকার এবং রান্নার জায়গা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় তাঁরা দুর্ভোগে পড়েছেন বলে জানিয়েছেন জেলেরা।

দুবলা ফিশারম্যান গ্রুপের সভাপতি মো. কামাল উদ্দিন আহমেদ শনিবার ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদে দুবলারচরে জেলেদের অনেক ক্ষতি হয়েছে বলে জানান। তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড় আম্ফান ও ইয়াসের জলোচ্ছ্বাসে মাটি ধুয়ে দুবলারচরের মাছ শুঁকানোর খোলা (মাঠ) নিচু হয়ে যাওয়ায় অমাবস্যা-পূর্ণিমার জোয়ারের পানিতে মাছ শুঁকানোর এই জায়গা ডুবে যায়।

এ সময় সমুদ্র থেকে বালু উত্তোলন করে চরের ভূমি উঁচু করে দেওয়ার জন্য কর্তৃপক্ষের প্রতি দাবি জানান তিনি। অনুমতি পেলে নিজেরাই বালু উত্তোলন করে নিতে পারেন বলে জানিয়েছেন ফিশারম্যান গ্রুপের সভাপতি।

পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের জেলেপল্লি দুবলা ফরেস্ট টহল ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা প্রহলাদ চন্দ্র রায় মুঠোফোনে জানান, জলোচ্ছ্বাসে দুবলার আলোরকোল, মাঝেরকেল্লা, নারিকেলবাড়ীয়া ও শ্যালারচর তিন ফুটেরও বেশি পানির নিচে ডুবে যায়। ফলে জেলেদের বিপুল পরিমাণ শুঁটকি সাগরে ভেসে গেছে এবং অনেক মাছ ভিজে নষ্ট হয়ে গেছে।

প্রাথমিক অনুমানে জেলেদের দুই কোটিরও বেশি টাকার ক্ষতি হয়েছে। সাগর উত্তাল থাকায় অনেক ফিশিংবোট ও জেলে নৌকা সুন্দরবনের বিভিন্ন খালে নিরাপদ আশ্রয়ে রয়েছে বলে জানান এই কর্মকর্তা।

সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন বলেন, বৃষ্টিতে সুন্দরবনের বিভিন্ন চরে গত রোববার থেকে তিন ফুট পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। বন্য প্রাণী ও গাছগাছালির ক্ষতি না হলেও শুঁটকিপল্লির বেশ ক্ষতি হয়েছে। জেলেদের তথ্য অনুযায়ী টানা বর্ষণে চর গুলোতে প্রায় দুই কোটি টাকার শুঁটকির ক্ষতি হয়েছে। এর ফলে রাজস্বও কমে আসবে শুঁটকি পল্লি থেকে। তবে মৌসুমের বাকি সময়গুলো আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে জেলেরা এই ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে পারবেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত