Ajker Patrika

ছিন্ন ঘরে ময়লাজামায় কাটছেতাঁর দিন

খান রফিক, বরিশাল
আপডেট : ০৪ মার্চ ২০২২, ১১: ৩৫
ছিন্ন ঘরে ময়লাজামায় কাটছেতাঁর দিন

পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আতঙ্কে ছিলেন মো. আনোয়ার হোসেন (৮৮)। অংশ নিয়েছেন বহু সম্মুখ সমরে। কিন্তু নানা জটিলতায় মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতিটা পাননি আজও। আর্থিক অনটনে শেষ বয়সে এসে দুর্দশায় কাটছে তাঁর দিন।

বরিশাল নগরীর লালদিঘির পারে একটি ভাড়া বাসায় থাকেন আনোয়ার হোসেন। ১৯৭১ সালে তিনি ছিলেন ইপিআরের সদস্য। ২৫ মার্চ কালরাতে পাকিস্তানি বাহিনীর হামলার পর ঢাকা থেকে হেঁটে রওনা দেন বরিশালে। টানা ৭ দিন হেঁটে তিনি ফেরেন আমতলীর বাড়িতে। বাড়ি ফিরে যোগ দেন মুক্তিযুদ্ধে।

গত মঙ্গলবার রাতে যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ারের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, খুপরি একটি ঘর। গায়ে ময়লা গেঞ্জি, খালি পায়ে বসে আছেন তিনি। একাত্তরের গল্প জানতে চাইলে বলেন, সেক্টর কমান্ডার মেজর এম এ জলিল ও মঞ্জু ভারতে যাওয়ার সময় তাঁকে নলছিটি, বাকেরগঞ্জ ও বরিশাল সদর থানা এলাকার দায়িত্ব দেন। তাঁরা চলে যাওয়ার পর ১৮ জন যোদ্ধা নিয়ে নলছিটির দপদপিয়ায় ঘাঁটি স্থাপন করেন। সেখান থেকে মুক্তিযোদ্ধা সংগ্রহ ও প্রশিক্ষণ শুরু করেন। তিনি এপ্রিলের শুরুতে ৪০০ জনকে প্রশিক্ষণ দিয়ে একটি বাহিনী গড়ে তোলেন। মুক্তিযুদ্ধের ৯ নং সাব সেক্টর কমান্ডার ব্যারিস্টার শাজাহান ওমরের (বীর উত্তম) অধীন বরিশাল, নলছিটি, লেবুখালী, ঘোপেরহাট যুদ্ধে সরাসরি অংশ নেন তিনি ও তাঁর অনুসারীরা।

আনোয়ার জানান, এখন মধু বিক্রি করে সংসার চালান। কিন্তু এই বয়সে আর কুলায় না। এর মধ্যে একবার স্ট্রোকও করেছেন।

স্বাধীনতার ৫১ বছরে নানাভাবে প্রতারণার শিকার হয়েও আজও বীর মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পাননি বলে জানান আনোয়ার। এখনো মুক্তিযোদ্ধা ‘ক’ তালিকায় পড়ে আছে তাঁর নাম। যদিও বঙ্গবন্ধু তাঁকে বিরত্বগাথা চিঠিও দিয়েছিলেন।

শেষ বয়সে মানবেতর জীবনযাপন করা এই বীর যোদ্ধার কথা সম্প্রতি ছড়িয়ে পড়েছে বরিশালে। বরিশালের জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দীন হায়দার গত ১০ ফেব্রুয়ারি আনোয়ারের খোঁজখবর নিতে তাঁর বাসায় যান। এ সময় তাঁকে বীর মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি এবং প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে ঘর ও জমি দেওয়ার আশ্বাসও দেন জেলা প্রশাসক।

বরিশালের নৌ-কমান্ডার সৈয়দ আবুল বাশার বলেন, আনোয়ার ছিলেন তাঁর সহযোদ্ধা। নলছিটির দপদপিয়াসহ এ অঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে তিনি সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। বেপরোয়া যোদ্ধা আনু এত বছরেও মুক্তিযুদ্ধের স্বীকৃতি পাননি শুনে আক্ষেপ করে বলেন, তাঁর মানবেতর জীবন মেনে নেওয়া যায় না।

জানতে চাইলে বরিশালের ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক মো. শহিদুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আনোয়ার হোসেনকে মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতির জন্য আমরা কাজ করছি। তাঁকে সরকারি নিয়ম অনুযায়ী অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সুবিধা দেওয়া হচ্ছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত