Ajker Patrika

নাজিরপুরে পরীক্ষামূলক আপেল চাষে সাফল্য

নাজিরপুর (পিরোজপুর) প্রতিনিধি
আপডেট : ৩১ মার্চ ২০২২, ১০: ২৩
নাজিরপুরে পরীক্ষামূলক আপেল চাষে সাফল্য

পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলার মধুভাঙ্গা গ্রামের প্রণব হালদার এই প্রথম পরীক্ষামূলকভাবে আপেল চাষ করে সফল হয়েছেন। তিনটি জাতের ৬০টি চারা দিয়ে শুরু করেন পরীক্ষামূলক আপেল চাষ। তাতেই সফলতা ধরা দিয়েছে তাঁর হাতে।

মেডিকেল টেকনোলজিতে পড়াশোনা শেষ করে বাড়িতেই শুরু করেন আপেল চাষ। দুই বছর আগে বাগানে রোপণ করা গাছে ফুল ও ফল ধরেছে। ভবিষ্যতে বাগান বড় করে বাণিজ্যিকভাবে আপেল চাষের স্বপ্ন দেখছেন প্রণব।

কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, নাজিরপুর উপজেলায় এটিই প্রথম আপেলের বাগান।

গতকাল বুধবার সরেজমিনে আপেলবাগানে গিয়ে দেখা গেছে, বাড়ির সামনে ৫৫ শতাংশ জমিতে তিনটি জাতের আপেলসহ মিশ্র ফলের বাগান করেছেন প্রণব। তাঁর বাগানে ৬০টি আপেল গাছ রয়েছে। এ ছাড়া রয়েছে ছোট ছোট অসংখ্য আপেলের চারা। এসব গাছে ফুল ধরেছে, অনেক গাছে ফুল থেকে ফলও এসেছে। আপেলের পাশাপাশি বাগানে বেদানা, আলুবোখারা ও আমের চাষ করা হয়েছে। বাগানে ফুলের পরাগায়নের জন্য বাড়িতে মৌমাছির চাষও করা হচ্ছে।

প্রণব হালদার বলেন, আর্মড ফোর্সেস মেডিকেল ইনস্টিটিউট থেকে ডিপ্লোমা ইন মেডিকেল টেকনোলজিতে পড়াশোনা শেষ করেছেন তিনি। প্রণব কয়েক বছর আগে সবুজ বাগান সোসাইটি নামে একটি বাগান-সম্পর্কিত ফেসবুক গ্রুপ থেকে প্রথম জানতে পারেন, বাংলাদেশেও আপেল চাষ করা সম্ভব। আমাদের দেশে ফলবে এমন কিছু আপেলের জাত এরই মধ্যে উদ্ভাবিত হয়েছে। এগুলোর মধ্যে ভারতের একটি জাত রয়েছে, যা আমাদের দেশে হরিমন ৯৯ আপেল নামে পরিচিত। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে হরিমন ৯৯ আপেল জাতের ৫০টি চারা সংগ্রহ করেন তিনি। উদ্দেশ্য ছিল পরীক্ষামূলক আপেল চাষ করা। আপেলের চাষ সম্পর্কে কোনো জ্ঞান না থাকায় গরম এলাকার আপেল চাষে গবেষক ভারতের পারভেজ নওশাদ ও হরিমন শর্মার সঙ্গে যোগাযোগ করে তাঁদের পরামর্শ নিয়ে চারাগুলোকে নার্সিং করে বড় করেন। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে তিনি ভারতের হিমাচল প্রদেশের বিলাসপুরে হরিমন শর্মার আপেলবাগানে প্রশিক্ষণের জন্য যান। প্রশিক্ষণ শেষে বাংলাদেশে উৎপন্ন হবে এমন আরও দুটি জাতের চারা ‘আনা (ইজরায়েল) ’ ও ‘ডরসেট গোল্ডেন (বাহামাস) ’ সংগ্রহ করেন। ২০২০ সালের এপ্রিলে তিনটি জাতের ৬০টি চারা বাড়ির পাশের জমিতে রোপণ করেন। ২০২১ সালের ডিসেম্বর থেকে গাছে ফুল আসা শুরু করে। বর্তমানে গাছে ছোট আপেল ও ফুল আছে। ফল সংগ্রহ করা যাবে মে থেকে জুলাই পর্যন্ত।

আপেল চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে চাইলে প্রণব হালদার বলেন, জমিতে আপেলের চারা রোপণের জন্য দুই ফুট পরপর গর্ত তৈরি করে জৈব সার মাটির সঙ্গে মিশিয়ে গর্তে ১৫ দিন রেখে দিয়ে চারাগুলো রোপণ করা হয়। সঙ্গে অন্য কোনো রাসায়নিক সার প্রয়োগ করা হয় না। আপেলগাছ আলো, বাতাসপূর্ণ এবং উঁচু জমিতে ভালো হয়। বেলে দো-আঁশ মাটি আদর্শ হলেও অন্য মাটিতেও রোপণ করা যায়। তবে আপেলগাছ কোনোভাবেই জলাবদ্ধতা সহ্য করতে পারে না।

প্রণব হালদার আরও বলেন, ‘যেহেতু বাগানটি পরীক্ষামূলকভাবে শুরু করা হয়েছে, কয়েক বছর পর্যবেক্ষণ করব। যদি লাভজনকভাবে আপেল ফলাতে সক্ষম হই, তাহলে বাগান সম্প্রসারণ করতে চাই। শুরুতে বড় পরিসরে বাগান করা উচিত নয়।’

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা দিগ্বিজয় হাজরা বলেন, সাধারণত আপেল শীতপ্রধান দেশে চাষ করা হয়। তবে আমাদের দেশে এখন আপেল চাষ করা সম্ভব। প্রণবের আবাদ করা জাতের চারাগুলো বাংলাদেশের আবহাওয়ার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে পারে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত