Ajker Patrika

খেজুরের দাম বাড়াতে শুল্কের দোহাই

ইমান আলহাজ আলি
আপডেট : ১১ মার্চ ২০২৪, ১১: ২২
খেজুরের দাম বাড়াতে শুল্কের দোহাই

রাজধানীর বাদামতলীর ফলের আড়ত সাথী ফ্রেশ ফ্রুটস স্টোরের বোর্ডে সারি করে লেখা খেজুরের নাম। হরেক নামের খেজুরের হরেক দাম। সবই পাইকারি। গত সপ্তাহের রোববার সকালে ১০ কেজির দাব্বাস খেজুরের দাম লেখা ছিল ৩ হাজার ৮০০ টাকা। ১৫ মিনিটের মধ্যে এই প্রতিবেদকের উপস্থিতিতে সে দাম হয়ে যায় ৩ হাজার ৯০০ টাকা। দেখতে দেখতে বদলে গেল আরও সব খেজুরের দাম। এই আড়তে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করলে মনে হবে, এ যেন পুঁজিবাজারের ‘ট্রেডিং বোর্ড’, যেখানে মিনিটে মিনিটে দাম ওঠানামা করছে। 

সাথী ফ্রেশ ফ্রুটস স্টোরের স্বত্বাধিকারী সিরাজুল ইসলাম সে সময় আড়তেই ছিলেন। বাজারের এই অস্বাভাবিক ওঠানামা নিয়ে বললেন, খেজুর একটি আমদানি ফল, এর দরদাম নির্ভর করে সরবরাহের ওপরে। তার সঙ্গে যোগ হয়েছে বাড়তি শুল্ক। তবে এখন সরবরাহ বেশি থাকলেও রোজার কারণে বাজারে টান পড়েছে। সে কারণে বাজারও কিছুটা অস্থির। 

সিরাজুল ইসলামের বক্তব্যের সত্যতা পাওয়া গেল বাদামতলীর আরও কয়েকটি ফলের আড়ত ঘুরে। সব আড়তেই অন্য সব ফলের সঙ্গে খেজুর নিয়ে বেশ টানাটানি চলছে। পাইকারি বাজারে আসা প্রায় সব খুচরা ফল ব্যবসায়ীর নজর এখন খেজুরের দিকে। যেন অন্য সব ফল না কিনলেও খেজুর তাঁদের চাই-ই। 

মরু দেশের তালজাতীয় শাখাবিহীন গাছের সুমিষ্ট ফল খেজুর বাংলাদেশের মতো সবুজ দেশেও বড় বাজার ধরে নিয়েছে। দিন দিন তা বাড়ছেই। রোজার ইফতারে অন্য সব খাবারের সঙ্গে খেজুর গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ হয়ে উঠেছে। রমজান মাস ছাড়া অন্য সময়েও বিপুল পরিমাণ খেজুর কেনাবেচা হচ্ছে। অতিথির হাতে এখন মিষ্টির বদলে খেজুরের সুদৃশ্য বাক্সও শোভা পাচ্ছে। 

দেশে কত খেজুর আমদানি করা হয়, তার তথ্য পাওয়া গেছে চট্টগ্রাম বন্দর কাস্টম হাউস থেকে। সেই তথ্যে দেখা গেছে, ২০২০ (করোনার কারণে আংশিক) থেকে ২০২৪ সালের দুই মাস মিলে মোট চার বছরে দেশে ২ লাখ ৯৬ হাজার ৪৪৪ টন খেজুর আমদানি হয়েছে। এসব খেজুরের কাস্টমসের বেঁধে দেওয়া দাম ছিল প্রায় ৪২ হাজার কোটি টাকা। যদিও আমদানিকারকেরা শুরুতে দাম প্রায় ২০ গুণ কম দেখিয়ে আমদানি করেছিলেন। 

কোন বছরে কত আমদানি
চট্টগ্রাম বন্দর কাস্টমস সূত্র জানিয়েছে, চার বছরে সবচেয়ে বেশি খেজুর এসেছে ২০২১ সালে, ১ লাখ ১৬৬ টন। আর চলতি বছরের ৩ মার্চ পর্যন্ত এসেছে ৩১ হাজার ৯৩ টন। 

সবচেয়ে বেশি খেজুর এসেছে ইরাক থেকে, ৮৩ হাজার ৭৩২ টন। এই সময়ে আরব আমিরাত থেকে এসেছে ৪৬ হাজার ৫৮৩ টন আর ২৩ হাজার ৬৯১ টন এসেছে সৌদি আরব থেকে। 

রপ্তানিকারক দেশ ও বাংলাদেশের বাজার পর্যালোচনা করে কাস্টমস এসব খেজুরের দাম নির্ধারণ করে ৪৩৩ কোটি ডলার বা ৪২ হাজার কোটি টাকা (ডলারের গড় দর ৯৭ টাকা ধরে)। এ দাম মেনেই ব্যবসায়ীরা পণ্য খালাস করেছেন, যদিও শুরুতে তাঁরা দর অনেক কম দেখিয়েছিলেন। 

তবে বিপুল পরিমাণ আমদানি হলেও দেশের বাজারে খেজুরের দাম কিছুতেই কমছে না। ২৫০ টাকার নিচে খাওয়ারযোগ্য কোনো খেজুরই পাওয়া যায় না। ভালো মানের খেজুরের দাম ১ হাজার থেকে ৪ হাজার টাকা পর্যন্ত। 

দাম বাড়াতে শুল্কের দোহাই
ব্যবসায়ীরা বলছেন, আগে সব খেজুরে মোট শুল্ক-কর ছিল ১০ শতাংশ। চলতি অর্থবছর শুল্ক-কর বাড়িয়ে ৫৮ শতাংশ করা হয়। পরে আবার ১০ শতাংশ কমানো হয়। বর্তমানে ৪৮ শতাংশ শুল্ক দিতে হচ্ছে। এর সঙ্গে আছে বন্দর মাশুল, পরিবহন, এলসি মাশুলসহ আরও অনেক খরচ। এসব কারণে দাম কয়েক গুণ বেড়ে যাচ্ছে। 

চট্টগ্রাম কাস্টমস সূত্র জানায়, আমদানি করা খেজুরের পাঁচ ধরনের মূল্য শ্রেণিবিন্যাস করা হয়েছে। এর মধ্যে শীতাতপনিয়ন্ত্রিত কনটেইনারে (রেফার) আমদানি করা আজোয়া, মরিয়ম, মেডজুল ও মাবরুম খেজুরের প্রতি কেজির আমদানিমূল্য ৪ ডলার ধরে শুল্কায়ন করা হয়। এ ছাড়া কার্টনে আনা খেজুরের দাম ইনার প্যাক (আড়াই কেজির কম) ২ দশমিক ৭৫ ডলার, কার্টনে আনা বাকি সব খেজুরের আমদানিমূল্য আড়াই ডলার, এ ছাড়া বস্তায় আনা শুকনা খেজুর (ভেজা/গলা) ১ ডলার আমদানিমূল্য ধরে ছাড় করা হয়। তবে এভাবে আমদানিমূল্য ঠিক করে দেওয়ার ঘোর বিরোধী ব্যবসায়ীরা। 

বাংলাদেশ ফ্রেশ ফ্রুট আমদানিকারক সমিতির সভাপতি সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘আমদানিকারকেরা খেজুরের দাম ঘোষণা করেছে প্রতি টন ৯০০ ডলার। কাস্টমস সেটা মানছে না। তারা আড়াই হাজার ডলার করে ঘোষণা দিয়েছে। কোনো কোনোটির দাম আবার ৪ হাজার ডলারও ধরছে। এতে দামের হেরফের হচ্ছে। 

তবে আমদানিমূল্য ঠিক করে দিয়ে শুল্কায়নের পক্ষে কাস্টমস কর্মকর্তাদেরও যুক্তি আছে। চট্টগ্রাম কাস্টমসের উপকমিশনার কাজী ইরাজ ইশতিয়াক আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ব্যবসায়ীরা অনেক উন্নত মানের খেজুর এনেও শুল্ক ফাঁকি দিতে কম দামি খেজুরের সমান আমদানিমূল্য দেখাচ্ছেন। বাজারে দেখা যায় একেক রকমের খেজুরের একেক দাম। সেই তফাতটা কাস্টমস বিবেচনায় নিয়েছে।’ 

সংশ্লিষ্টদের ধারণা, আমদানিমূল্য কম দেখিয়ে শুধু খেজুর আমদানি করতে গিয়েই কম করে হলেও ৪০ হাজার কোটি টাকা পাচার করা হয়েছে। জানতে চাইলে শুল্ক গোয়েন্দা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এম ফখরুল আলম বলেন, ‘খেজুরের প্রকৃত দর গোপন করে একটি অংশ ব্যাংকের মাধ্যমে শোধ করেছে। আর বাকিটা পাঠানো হয়েছে হুন্ডিতে। এর আসল উদ্দেশ্য হলো শুল্ক ফাঁকি দেওয়া।’ 

কাস্টমসের বেঁধে দেওয়া দরের সঙ্গে আন্তর্জাতিক বাজারের দর যাচাই করতে খেজুর কেনাবেচার ওয়েবসাইট সেলিনা ওয়ামুচি, ওয়ার্ল্ড অব ডেটস, কেএসএ ডেটস ডটকম, সিয়াফা ডেটস, আমিরাতের সাহারি ডেটস ডটকম থেকে তথ্য নেওয়া হয়েছে। এতে দেখা গেছে, সৌদি আরবে সাধারণ মানের খেজুরের দাম প্রতি কেজি শূন্য দশমিক ৮৩ ডলার থেকে শূন্য দশমিক ৮৪ ডলার। বাংলাদেশি টাকায় (ডলারপ্রতি ১১০ টাকা হিসাবে) তা হয় ৯১-৯২ টাকা। আজোয়া খেজুরের দর পাইকারিতে ৩ দশমিক ৫৭ ডলার থেকে ৪ দশমিক ৪৭ ডলার। মাবরুম খেজুর ৪ দশমিক ৪৩ ডলার, মেডজুল খেজুর ৪ দশমিক ৪৩ ডলার, সাফাউই খেজুর ৩ দশমিক ৯৪ ডলার। ভালো মানের প্রতি কেজি ইরাকি খেজুরের দর পাইকারিতে ৪ দশমিক ৪৮ ডলার, যা বাংলাদেশি টাকায় ৪৯২ টাকা।

অন্যদিকে সংযুক্ত আরব আমিরাতে পাইকারিতে আজোয়া খেজুর ২ দশমিক ৩৯ ডলার থেকে ৩ দশমিক ৪৬ ডলার। মাবরুম খেজুর ৫ কেজি ১৬৫ দিরহাম, যা বাংলাদেশি টাকায় প্রতি কেজি ১ হাজার ৮৯ টাকা। অর্থাৎ কাস্টমস যে দর ধরেছে, তার সঙ্গে অনেকটাই মিলে যায়। 

কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) চেয়ারম্যান গোলাম রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘খেজুরের কেনা দর কম দেখানো মানেই এতে আন্ডার ইনভয়েসিং হচ্ছে, তা বোঝাই যাচ্ছে। তবে খেজুরের পেছনে খরচ বেড়ে যাওয়া বা আমদানি বেড়ে যাওয়ার অর্থ হলো মানুষ এটা বেশি খাচ্ছে।’ 

বাজারে যা দেখা গেল
গত সপ্তাহের রোববার রাজধানীর বাদামতলীর পাইকারি আড়ত ‘দুই ভাই এন্টারপ্রাইজে’ দেখা যায়, আজোয়া খেজুর প্রতি ৫ কেজির প্যাকেট ৪ হাজার ৮০০ টাকা, মরিয়ম ৪ হাজার ৭০০ টাকা, কালমি ৪ হাজার টাকা, মাশরুক ২ হাজার ৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাশের বিসমিল্লাহ ফ্রেশ ফ্রুটে দেখা যায়, আজোয়া ৪ হাজার ৬২৫ টাকা, মরিয়ম ৪ হাজার ৪০০ টাকা, কালমি ৪ হাজার ২০০ টাকা, মাশরুক ৪ হাজার টাকা, মাবরুম ৫ হাজার ২৫০ টাকা ও মেডজুল ৫ হাজার ৩০০ টাকায় বিক্রি হয়। আর সব আড়তেই নিম্নমানের খেজুরের বস্তাপ্রতি পাইকারি দর দেখানো হয়েছে ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা কেজি। 

পরে দেশের অন্যতম শীর্ষ আমদানিকারক সাথী ফ্রেশ ফ্রুটসের আড়তে গিয়ে তাদের খেজুরের মূল্যতালিকায় দেখা যায়, দাব্বাস, বারনি, জাহেদি, লুলু, খালাসসহ আরও অনেক নামের খেজুরের দাম অন্য আড়তের তুলনায় ২০০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত বেশি। 

পাইকারি বাজারের পর রাজধানীর কয়েকটি খুচরা বাজারেও খেজুরের দাম পর্যবেক্ষণ করেছে আজকের পত্রিকা। দেখা যায়, একেক বাজারে একেক দামে খেজুর বিক্রি হচ্ছে। একই খেজুর ভিন্ন ভিন্ন দোকানে ভিন্ন ভিন্ন দামে বিক্রি হতে দেখা যায়। ৪ মার্চ কারওয়ান বাজারের আল্লাহর দান ফল বিতানে আজোয়া খেজুর প্রতি কেজি ১ হাজার ৪০০ টাকা, সৌদি মরিয়ম ১ হাজার, মাবরুম ১ হাজার ৩০০ ও ১ হাজার ৬০০ এবং কালমি খেজুর ১ হাজার টাকায় বিক্রি করতে দেখা যায়। অন্যদিকে, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় সুপার শপ আপন ফ্যামিলি মার্টে দেখা যায়, আজোয়া খেজুর ১ হাজার ৯০০ টাকা, মরিয়ম ১ হাজার ৯০০ এবং মেডজুল (জাম্বু) খেজুর ২ হাজার ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এরপর ৯ মার্চ রাজধানীর খিলক্ষেত বাজারে সাড়ে ৪০০ টাকার কমে কোনো খেজুরই বিক্রি করতে দেখা যায়নি। যদিও সুপার শপে দামের হেরফের রয়েছে।  

খেজুরের ওপর বাড়তি নির্ভরতাকে বিলাসিতা হিসেবে অভিহিত করেছেন ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘খেজুরের এখন অনেক দাম। অতি লাভের আশায় অনেক বড় ব্যবসায়ীও খেজুরের দিকে ঝুঁকেছেন। রাজধানীর অভিজাত এলাকায় এখন অতি উচ্চমূল্যে খেজুর বিক্রি হয়। অনেকে খেজুর উপহার দেয়। আমি মনে করি, খেজুর বাজারের একটা নিয়ন্ত্রণ দরকার।’ 

বাজার কাদের নিয়ন্ত্রণে
দেশের বড় বড় শিল্প গ্রুপের চোখ এখন খেজুর বাজারের দিকে। তারাই এখন খেজুরের বাজারের বড় নিয়ন্ত্রক। কাস্টম হাউস সূত্র বলছে, চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে দেশের অন্যতম শীর্ষ খেজুর আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান হলো ঢাকার হাজি সেলিমের মালিকানাধীন মেসার্স মদিনা ফ্রুটস, বাংলাদেশ ফ্রেশ ফুড ইম্পোর্টার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. সিরাজুল ইসলামের মালিকানাধীন সাথী ফ্রেশ ফ্রুটসসহ একাধিক প্রতিষ্ঠান। এ ছাড়া ঢাকার আমদানিকারক মদিনা ডেটস অ্যান্ড নাটসও বৃহৎ আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের একটি। মূলত বিপুল আমদানির কারণে এরাই খেজুরের বাজারের একচেটিয়া নিয়ন্ত্রক।

 জানতে চাইলে সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম)-এর গবেষণা পরিচালক অর্থনীতিবিদ ড. সায়মা হক বিদিশা আজকের পত্রিকাকে বলেন, অবস্থা এখন এমন অবস্থায় এসে দাঁড়িয়েছে যে খেজুরকে সবাই নিত্যপণ্য বানিয়ে নিয়েছে। এটা না করলেই বরং ভালো হতো। দিনে দিনে খেজুরের চাহিদা বাড়ার কারণে একটি অসাধু ব্যবসায়ী চক্র অতি মুনাফার সুযোগও নিচ্ছে। সব মিলে ক্ষতিগ্রস্ত ক্রেতা। তাকে বেশি দামেই কিনতে হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

বাসস, ঢাকা  
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।

আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।

এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।

পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্‌ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।

মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

  • এবার ভারতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার।
  • গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলে পল্লিগুলোতে ব্যস্ততা।
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।

বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’

জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’

নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’

সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’

পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।

কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।

একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।

কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

  • ক্রয়াদেশের চালান নিয়ে বাড়ছে দুশ্চিন্তা
  • সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা
  • আজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডেকেছে জরুরি বৈঠক
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২০ মে ২০২৫, ০২: ৪৪
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।

ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।

গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।

বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।

জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’

বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।

এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।

স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।

সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।

আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।

এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।

গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।

সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?

১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।

ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত