Ajker Patrika

পতাকা হাতে পাহাড়চূড়ায়

শায়লা বীথি
আপডেট : ১৭ ডিসেম্বর ২০২১, ১০: ৫৯
পতাকা হাতে পাহাড়চূড়ায়

আইল্যান্ড পর্বে মূল অভিযান শুরু হয়েছিল চলতি বছরের ২৮ অক্টোবর সকালে। এ বছরটা একেবারে বিশেষ। অভিযানও তাই বিশেষ।

শুরুতে কাঠমান্ডু থেকে লুকলা হয়ে ২ হাজার ৬১০ মিটার উচ্চতায় ফাকদিন নামের একটি গ্রামে পৌঁছাই। পরদিন সেখান থেকে ৩ হাজার ৪৪০ মিটার উচ্চতায় নামচে পৌঁছাই। নামচে বাজার আসার পর জানতে পারি, আমি আইল্যান্ড পর্বত অভিযানের সঙ্গে সঙ্গে হিমালয়ের বিখ্যাত থ্রি-পাস ট্রেকিংও করতে যাচ্ছি। সে সংবাদে আমার বিস্ময়ের সীমা রইল না।

মূল ঘটনা হলো, আমি যে এজেন্সির মাধ্যমে পর্বত অভিযানে এসেছি, তার কর্ণধার নেপালের বিখ্যাত পর্বতারোহী মিংমা। তাঁর সঙ্গে অনেক আগে আলাপ হয়েছিল যে আমি অন্য একটা পর্বত অভিযানের সঙ্গে থ্রি-পাস ট্রেক করতে চাই। সে সময় এজেন্সি আমাকে যে বাজেট দিয়েছিল, সেটা আমি জোগাড় করতে পারিনি।

এবারও শুধু আইল্যান্ড পর্বত অভিযানের খরচ দিয়েছি। কিন্তু মিংমা আইল্যান্ড পর্বত অভিযানের সঙ্গে থ্রি-পাস ট্রেকের ব্যবস্থাও করেছেন। মিংমার প্রতি সে জন্য আমি কৃতজ্ঞ। নামচে থেকে পরদিন আমরা থামে নামের একটা গ্রামে আসি। তার উচ্চতা ৩ হাজার ৮০০ মিটার। সেখানে এক দিন থাকি।

লুকলা, নেপালপরদিন আরও উঁচুতে থাকা লুংদেন গ্রামে পৌঁছাই। সেখানে রাত কাটিয়ে পরদিন সকাল সাড়ে ৬টার মধ্যে বেরিয়ে পড়ি রেঞ্জোলা পাস অতিক্রম করার উদ্দেশ্যে। পথে তেমন অভিযাত্রীর দেখা পেলাম না। বেলা ১১টায় আমরা দুপুরের খাবারের বিরতি নিলাম। বেলা ২টা নাগাদ রেঞ্জোলা পাস অতিক্রম করে গোকিয় গ্রামের দিকে নামতে থাকি। সেখানে পৌঁছাতে আরও দুই ঘণ্টা লাগল। ৩ তারিখ গোকিয়, সেখান থেকে থাগনাকে আসি। ৪ তারিখ থাগনাক থেকে চোলা পাস অতিক্রম করে জোংলা নামের একটি গ্রামে পৌঁছাই। সেদিনের পথ রেঞ্জোলা পাসের চেয়ে কিছুটা সহজ ছিল। এই পথে বেশ কিছু অভিযাত্রীর দেখা পাওয়া গেল। চোলা পাস অতিক্রম করার পরের পথটুকু ভারি সুন্দর! মনে হচ্ছিল বরফের সমুদ্র দিয়ে হাঁটছি। জোংলা গ্রামে রাত কাটিয়ে পরদিন আমরা আসি লবুচে গ্রামে। সেখান থেকে ৬ তারিখে আমরা কংমালা পাস অতিক্রম করি।

কংমালা পাস রেঞ্জোলা ও চোলা থেকে কিছুটা কঠিন। ওঠার ও নামার পথে আছে এবড়োখেবড়ো বড় পাথরের বোল্ডার। একটু অসচেতনতায় যেকোনো বড় দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। বিকেল ৪টা নাগাদ আমরা চুকুং গ্রামে পৌঁছাই।

আইল্যান্ড পর্বত অভিযান
উচ্চতা ৬ হাজার ১৬০ মিটার বা ২০ হাজার ২১০ ফুট। আইটেনারি অনুযায়ী, ৭ তারিখ আমার এক্লাটামাইজেশন ডে; অর্থাৎ উচ্চতার সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর জন্য এক দিনের বিশ্রাম। কিন্তু ৬ তারিখ সন্ধ্যায় আমি পরিকল্পনা করলাম, বিরতি নেব না। আমার উচ্চতাজনিত কোনো অসুস্থতা ও ক্লান্তি নেই। আমি গাইডের সঙ্গে কথা বললাম। তিনি আবহাওয়া আপডেট নিয়ে রাজি হয়ে গেলেন। ৭ তারিখ সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ আমরা আইল্যান্ড পর্বত বেসক্যাম্পের দিকে বেরিয়ে পড়লাম। পরিকল্পনা ছিল, বেসক্যাম্পে না থেকে সরাসরি হাইক্যাম্পে চলে যাওয়া। বেসক্যাম্পের পথে পরিচয় হলো এক ভারতীয় নারী পর্বতারোহীর সঙ্গে। তিনি একই সঙ্গে আমাদাব্লাম পর্বত ও আইল্যান্ড পর্বত অভিযানে এসেছেন। আমরা একসঙ্গে ৫ হাজার ৮৭ মিটার উচ্চতার বেসক্যাম্পে পৌঁছালাম।

আমি ও গাইড বেসক্যাম্পে দুপুরের খাবার খেয়ে হাইক্যাম্পের উদ্দেশে বেরিয়ে পড়লাম। ভারতীয় অভিযাত্রী বেসক্যাম্পে থেকেই সামিট পুশ করবেন বলে থেকে গেলেন। ৫ হাজার ৫০০ মিটার উচ্চতার হাইক্যাম্পে পৌঁছে গাইড তাঁবু ফেললেন। সেখানে ছোট-বড় পাথরের বোল্ডার এদিক-সেদিক ছড়ানো। তারই ফাঁকফোকরে কোথাও একটু বরফ জমেছে। গাইড তা-ই সংগ্রহ করে আনলেন খাবার পানি তৈরি করতে।

সন্ধ্যা ৭টার মধ্যে রাতের খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম। উঠলাম রাত ১২টার মধ্যে। গাইড সামিট পুশে বের হওয়ার আগে পানি ও চা বানিয়ে নিলেন। আমি প্রয়োজনীয় পোশাক পরে তৈরি হয়ে নিলাম। একটা দলকে দেখলাম ওপরের দিকে যাচ্ছে। কিছুক্ষণের মধ্যে ভারতীয় সেই অভিযাত্রীর দলও চলে এল। আমরা একসঙ্গে ওপরে ওঠা শুরু করলাম। ভোরের দিকে ক্রাম্পন পয়েন্টে পৌঁছালাম।

ধীরে ধীরে সকালের আলো ফুটতে শুরু করল। বরফের বিশাল ময়দানের ভেতর দিয়ে হাঁটছি। চূড়ার কাছাকাছি তিনজনের একটি দল দেখতে পেলাম। ময়দান পেরিয়ে পথ ধীরে ধীরে খাড়া হতে শুরু করল। আমরা ফিক্সড রোপ ধরে ওপরের দিকে উঠছি। যতই ওপরে উঠছি পথ আরও খাড়া হচ্ছে। একপর্যায়ে মনে হলো আর এগোতে পারব না।

পেছনে থেকে সবাই উৎসাহ জানাল। একটার পর একটা বরফের খাড়া দেয়াল বেয়ে রিজের মতো একটা জায়গায় পৌঁছালাম। সেখান থেকে চূড়া আর কয়েক মিনিটের পথ। প্রথমে আমার গাইড চূড়ায় আরোহণ করেন, তারপর আমি।

সকাল সাড়ে ৮টা নাগাদ আমরা আইল্যান্ড পর্বতে লাল-সবুজের পতাকা ওড়াই। আগের সব অভিযানের চেয়ে এবারের অভিযান কিছুটা ব্যতিক্রম। এবার একাই অভিযান সম্পন্ন করেছি।

লেখক: পর্যটক ও পর্বতারোহী, ঢাকা ট্র্যাভেল অ্যান্ড ট্রেকিং ক্লাব

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

টাকা দিয়ে নারীর চাবুকের ঘা খাচ্ছিলেন পুরুষ, দুজন গ্রেপ্তার

ভারতের সঙ্গে সংঘাতে পাকিস্তানের ভাগ্যনিয়ন্তা সেনাপ্রধান জেনারেল মুনির

প্রবাসীর রেমিট্যান্সের অর্থ আত্মসাৎ, নারী ব্যাংক কর্মকর্তা কারাগারে

পাকিস্তানে কীভাবে হামলা চালাতে পারে ভারত, ইতিহাস যা বলছে

জনবল-সরঞ্জাম বেশি হলেও সমরশক্তিতে ভারত কি পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত