Ajker Patrika

চট্টগ্রামে কাউন্সিলরের কারসাজি: অধিগ্রহণের টাকা আত্মসাতে একাধিক ওয়ারিশ সনদ

সোহেল মারমা, চট্টগ্রাম
চট্টগ্রামে কাউন্সিলরের কারসাজি: অধিগ্রহণের টাকা আত্মসাতে একাধিক ওয়ারিশ সনদ

চট্টগ্রাম নগরের বায়েজিদ এলাকায় মোহাম্মদ হোসেন নামের এক ব্যক্তির মৃত্যুর পর ওয়ারিশ হিসেবে তাঁর স্ত্রীসহ তিন সদস্যের নামে সনদ দিয়েছিল সিটি করপোরেশনের ২ নম্বর জালালাবাদ ওয়ার্ড কার্যালয়। কিন্তু একই কার্যালয় থেকে একই ব্যক্তির নামে আরেকটি ভিন্ন ওয়ারিশ সনদ ইস্যু হয়, যেখানে ওয়ারিশ দেখানো হয় ৯ সদস্যকে।

এক ঠিকানায় এক ব্যক্তির নামে ভিন্ন সনদ দেওয়ার ঘটনাটি ধরা পড়ে একটি প্রকল্পে ভূমি অধিগ্রহণ চলাকালে। কুলগাঁও এলাকায় একটি জায়গার অধিগ্রহণের টাকা পেতে দুই পক্ষই জেলা প্রশাসনের ভূমি অধিগ্রহণ শাখায় আবেদন করেছে। ক্ষতিপূরণ হিসেবে ওই জায়গার দাম প্রায় দেড় কোটি টাকা।

একই ওয়ার্ডের কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে কুলগাঁও এলাকার পরান সোনা খাতুন নামের আরেক মৃত নারীর ভুয়া ওয়ারিশ সনদ তৈরিরও অভিযোগ উঠেছে। এই দুটি ঘটনায় কাউন্সিলরসহ একাধিক ব্যক্তিকে আসামি করে আদালতে আলাদা মামলা করেছেন ভুক্তভোগীরা। বর্তমানে মামলা দুটি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) তদন্ত করছে।

পিবিআই সূত্রে জানা গেছে, প্রথম ঘটনাটির বিষয়ে গত ১ নভেম্বর জালালাবাদ ওয়ার্ড কাউন্সিলরসহ ১৬ জনের নামে চট্টগ্রাম আদালতে ফৌজদারি মামলা করেন ক্ষতিগ্রস্ত দেলোয়ার হোসেন নামের এক দিনমজুর। মামলার আরজিতে বলা হয়, অভিযোগকারীর প্রয়োজনে ২০০৬, ২০১০, ২০১৯ ও ২০২২ সালে জালালাবাদ ওয়ার্ড কাউন্সিলর কার্যালয় থেকে ওয়ারিশ সনদপত্র নেন। সে সময় মরহুম মোহাম্মদ হোসেনের ওয়ারিশ হিসেবে স্ত্রী আলিজান খাতুন, এক ছেলে মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন (বাদী) ও এক মেয়ে নুর জাহান বেগমের কথা উল্লেখ করা হয়।

বাদী অভিযোগ করেন, কাউন্সিলর সাহেদ ইকবাল বাবু সব জানার পরও জালিয়াতির মাধ্যমে ২০১৮ সালের ২৬ এপ্রিল মোহাম্মদ হাশেম নামের এক ব্যক্তিকে মোহাম্মদ হোসেন দেখিয়ে ৯ জন ওয়ারিশের নামের আলাদা সনদ দেন। পরে ওই সনদ দিয়ে জালিয়াতির মাধ্যমে হাটহাজারী ভূমি অফিসে গিয়ে বাদীর একটি জায়গার নামজারি ও খতিয়ান তৈরি করে চক্রটির সদস্যরা। জায়গাটি পরে মোহাম্মদ হানিফ নামের এক ব্যক্তির কাছে বিক্রিও করে দেয়।

বাদী দেলোয়ার হোসেন বলেন, জেলা প্রশাসনের এলএ শাখা থেকে তিনি জানতে পারেন, আসামিরা তাঁর জায়গা দেখিয়ে ভূমি অধিগ্রহণের টাকা পেতে আবেদন করেছে। পরে মামলা করায় তারা নানাভাবে হুমকি দিচ্ছে।

বিতর্কিত ওয়ারিশ হিসেবে যে ৯ জনকে দেখানো হয়েছে, তাঁদের একজন নুরুল ইসলাম দাবি করেন, ‘আমরা কোনো জাল ওয়ারিশ সনদ করিনি। যে অভিযোগ করছেন, সেই মিথ্যা অভিযোগ করছেন।’

তবে নথিপত্র ঘেঁটে দেখা গেছে, ২০১৮ সালে দেওয়া বিতর্কিত ওয়ারিশ সনদে মরহুম মোহাম্মদ হোসেন ওরফে মোহাম্মদ হাশেমকে যুক্ত করা হয়েছে। এরপর ওই ব্যক্তির ওয়ারিশ হিসেবে তাঁর স্ত্রী ও আট ছেলে-মেয়েকে দেখানো হয়। তবে ওই ব্যক্তির সন্তানদের সবার জাতীয় পরিচয়পত্রে বাবার নাম মৃত মোহাম্মদ হাশেম হিসেবে উল্লেখ রয়েছে।

অভিযোগের বিষয়ে জালালাবাদ ওয়ার্ড কাউন্সিলর সাহেদ ইকবাল বাবু বলেন, ‘আগে কমিশনার মোবাশ্বের হাশেমী এবং পরে কাউন্সিলর ফরিদ আহমেদ চৌধুরী ওনাদের (দেলোয়ার হোসেনের পরিবার) ওয়ারিশ সনদ দিয়েছে। আমিও ধারাবাহিকভাবে স্মারক নম্বর অনুযায়ী তাঁদের সনদ ইস্যু করেছি।’ দেলোয়ার হোসেনের করা মামলাটি সম্পূর্ণ মিথ্যা বলে তিনি জানান।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই পরিদর্শক মো. হুমায়ন কবীর বলেছেন, ইতিমধ্যে বিভিন্ন দালিলিক বিষয়ে চিঠিপত্র দিয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোতে তাগাদা দেওয়া হয়েছে। সেসব চিঠির জবাব এখনো পাওয়া যায়নি।

ওয়ারিশ সনদ জালিয়াতির দ্বিতীয় ঘটনাটির বিষয়ে গত বছর ৫ ফেব্রুয়ারি কাউন্সিলর সাহেদ ইকবাল বাবুকে আসামি করে আরেকটি মামলা করেছেন নগরের বায়েজিদের কুলগাঁও এলাকার বাসিন্দা নুর মোহাম্মদ শামশু (৬৫)।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

পদোন্নতি দিয়ে ৬৫ হাজার সহকারী প্রধান শিক্ষক নিয়োগের পরিকল্পনা: ডিজি

দিনাজপুরে হিন্দু নেতাকে অপহরণ করে হত্যা: ভারত সরকার ও বিরোধী দল কংগ্রেসের উদ্বেগ

সমালোচনার মুখে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্রের নিয়োগ বাতিল

আজ থেকে ৫০০ টাকায় মিলবে ১০ এমবিপিএস গতির ইন্টারনেট

মির্জা ফখরুলের কাছে অভিযোগ, ১৬ দিনের মাথায় ঠাকুরগাঁও থানার ওসি বদলি

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত