Ajker Patrika

ভোটের আইন মানেন না এমপি আয়েন

রিমন রহমান, রাজশাহী
ভোটের আইন মানেন না এমপি আয়েন

ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) থেকে শুরু করে জেলা পরিষদ নির্বাচন—কোথাও নির্বাচনী আচরণবিধি মানছেন না রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) আসনের এমপি আয়েন উদ্দিন। এলাকায় যে নির্বাচনই হোক না, আইন ভেঙে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে প্রচারের অভিযোগ ওঠে তাঁর বিরুদ্ধে। ফলে তাঁর কাছে অসহায় হয়ে পড়েন নির্বাচনের প্রতিদ্বন্দ্বী অন্য প্রার্থীরা।

নির্বাচনী আচরণবিধি অনুযায়ী, কোনো এমপি নির্বাচনের প্রচারে অংশ নিতে পারবেন না। ১৭ জুলাই পবা উপজেলার হরিয়ান ইউপির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হোসেন। স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতার অভিযোগ, আবুল হোসেনকে বছরখানেক আগে সভাপতি বানিয়েছেন এমপি আয়েন উদ্দিন। এর আগে তিনি দলে সক্রিয়ই ছিলেন না। এমপির কারণেই তিনি ভোটে দলের মনোনয়ন পেয়েছেন।

এবারও এমপি আয়েনের বিরুদ্ধে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে প্রচারের অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি হরিয়ান সুগার মিল অতিথি ভবনে দলীয় নেতা-কর্মীদের নিয়ে নির্বাচনী সভা করেন তিনি।

গত সোমবার শ্যামপুর বালুঘাটে পদ্মার ওপারের চর খিদিরপুরের ভোটারদের নিয়ে সমাবেশ করে ভোট চেয়েছেন। আর গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় হরিয়ান বাজারে নির্বাচন উপলক্ষে বিশেষ বর্ধিত সভায় বক্তব্য দেন এমপি আয়েন উদ্দিন। সেখানে বক্তব্য দেন দলীয় চেয়ারম্যান প্রার্থী আবুল হোসেনও। সভায় আয়েন উদ্দিন বলেন, নৌকার প্রার্থীর জন্য কাজ করতে হবে। তাঁকে ভোটে জিতিয়ে আনতে হবে।

এই নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে মোট প্রার্থী ছয়জন। তাঁদের একজন মোটরসাইকেল প্রতীকের প্রার্থী এবং ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জেবর আলী। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এমপি আয়েন উদ্দিন আচরণবিধি লঙ্ঘন করে নির্বাচনী সভা-সমাবেশ করে যাচ্ছেন। আজও (মঙ্গলবার) তিনি নির্বাচনী এলাকায় সমাবেশ করেছেন। এর আগে হরিয়ান সুগার মিলে সভা করলে আমি রিটার্নিং কর্মকর্তাসহ নির্বাচন কমিশনে লিখিত অভিযোগ করেছি। কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।’

তবে লিখিত অভিযোগ পাওয়ার কথা অস্বীকার করেছেন নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও পবা উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা শহিদুল হক প্রামানিক। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এমপি সাহেব নির্বাচনী এলাকায় সভা করতে পারবেন না। হরিয়ান এলাকাটি ইউনিয়নের মধ্যে নাকি কাটাখালী পৌরসভার ভেতরে, সেটা দেখতে হবে। অভিযোগ পেলে বিষয়টি দেখা হবে।’

খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, পবা ও মোহনপুর উপজেলায় যে নির্বাচনই হোক না কেন, এমপি আয়েন উদ্দিনের বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘন করে প্রচারে অংশ নেওয়ার অভিযোগ ওঠে। গত বছরের অক্টোবরে জেলা পরিষদ নির্বাচনে তিনি দলীয় চেয়ারম্যান প্রার্থী মীর ইকবালের হয়ে মাঠে নেমেছিলেন। তিনি এই নির্বাচনে পবা ও মোহনপুরের ভোটারদের নিয়ে ভূরিভোজ ও সভা করেন। এ কারণে নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা তাঁকে চিঠি দিয়ে সতর্ক করেন।

এর আগে ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে জেলা পরিষদ নির্বাচনের সময়ও আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে প্রতিদ্বন্দ্বী এক প্রার্থীর পক্ষ থেকে তাঁর বিরুদ্ধে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়। আর ২০২১ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত পবার নওহাটা পৌরসভার নির্বাচনের সময় আচরণবিধি ভেঙে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে একাধিক সভায় অংশ নেন বলেও অভিযোগ ওঠে। এ নিয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ করেও ফল পাননি প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী আবদুল বারী খান। 
একইভাবে ২০২১ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত পবা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদের উপনির্বাচন এবং ওই বছরই অনুষ্ঠিত কাটাখালী ও কেশরহাট পৌরসভা নির্বাচনেও এমপি আয়েন উদ্দিন দলীয় প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী প্রচারে নামেন বলে অভিযোগ ওঠে। তখন তাঁর বিরুদ্ধে মোট আটটি অভিযোগ জমা পড়ে নির্বাচন কমিশন ও রিটার্নিং কর্মকর্তাদের কাছে। নির্বাচন কমিশন তখন এমপিকে চিঠি দিয়ে সতর্কও করে।

অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য জানতে গতকাল সন্ধ্যায় এমপি আয়েন উদ্দিনকে একাধিকবার ফোন করা হয়। তবে তিনি ফোন ধরেননি। এর আগে গত অক্টোবরে জেলা পরিষদ নির্বাচনের সময় আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিষয়ে জানতে চাইলে আয়েন উদ্দিন আজকের পত্রিকাকে বলেছিলেন, নৌকার পক্ষের লোক হিসেবে নৌকার প্রার্থীর জন্য ভোট চাওয়া তাঁর দায়িত্ব।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত