Ajker Patrika

অভিজাতদের অনাস্থাতেই এ অবস্থা

ড. ইমতিয়াজ আহমেদ
আপডেট : ১১ মে ২০২২, ০৯: ৪৭
অভিজাতদের অনাস্থাতেই  এ অবস্থা

নিজ দেশের ওপর ভরসা রাখতে পারেনি শ্রীলঙ্কার অভিজাত শ্রেণি। ফলে তারা যে পরিমাণ অর্থ বৈধ ও অবৈধভাবে উপার্জন করেছে না কেন, তা দেশের বাইরে পাচার করেছে। যার পরিণতি দেশটির বর্তমান পরিস্থিতি।

দীর্ঘদিন ধরে শ্রীলঙ্কায় একটি যুদ্ধ পরিস্থিতি বিরাজ করেছে। আর এ যুদ্ধ ছিল গৃহযুদ্ধ। বাইরের কোনো শক্তি বা দেশের বিরুদ্ধে যদি যুদ্ধ হতো, তাহলে অভ্যন্তরীণভাবে একটি দেশাত্মবোধ তৈরি হতো। যেহেতু যুদ্ধটি ছিল অভ্যন্তরীণ এবং নিজ জনগণের মধ্যে, ফলে দেশটির এলিট বা অভিজাত শ্রেণি শ্রীলঙ্কার সরকার ব্যবস্থার ওপর আস্থা রাখতে পারেনি। এর ফলে দেশটি থেকে প্রচুর পরিমাণে অর্থ পাচার হয়েছে।

দেশের অভিজাত শ্রেণির মধ্যে তামিলরা সবচেয়ে বেশি অর্থ পাচার করেছে। কারণ তারা দীর্ঘ সময় ধরে একটি সংঘাতের মধ্যে ছিল। এর বাইরেও অন্য নাগরিকেরাও বিশেষ করে আমলা, রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়িক অভিজাতরা প্রতিনিয়তই অর্থ বিদেশে পাচার করেছে। এ অভিজাত শ্রেণির লোকজন তাদের পরিবারকে দেশের বাইরেই রেখেছে, আর নিজেরা যাওয়া-আসার মধ্যে থাকে। একটি দেশের অভিজাত এ শ্রেণিটি যদি দেশের ওপর ভরসা না রাখতে পারে, তাহলে সে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া কঠিন। শ্রীলঙ্কার বর্তমান পরিস্থিতির এটি অন্যতম একটি কারণ।

এর বাইরে ২০১৯ সালে শ্রীলঙ্কায় সন্ত্রাসী হামলা দেশটির অর্থনীতির মোড় ঘুরিয়েছে। এ সময় শ্রীলঙ্কার মালিকানাধীন পাঁচ তারকা হোটেলগুলোতে হামলার ঘটনা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। সেখানে বহুজাতিক কোনো পাঁচ তারকা হোটেলে হামলা হয়নি। এতে করে দেশটিতে দামি পর্যটক কমে গিয়েছে। ওই দেশের বৈদেশিক আয়ের অন্যতম উৎস হচ্ছে পর্যটন ও দামি মূল্যের পাথর বিক্রি। তাই দামি (হাই ভ্যালুড) পর্যটক কমে যাওয়ায় দামি মূল্যের পাথর বিক্রিও কমে গিয়েছে।

আর এরপর এসেছে করোনা, যা পুরো বিশ্বকেই স্থবির করে দিয়েছে। এ পরিস্থিতি থেকে শ্রীলঙ্কা উতরে যেতে পারত যদি সে দেশের অভিজাত শ্রেণি দেশটির ওপর আস্থা রাখত।

শ্রীলঙ্কা বর্তমান পরিস্থিতিতে চীনের দায় নেই। যেহেতু গণমাধ্যমের ওপর পশ্চিমা প্রভাব খুব বেশি। তাই মানুষের মধ্যে দৃষ্টিভঙ্গিকে চীনের বিরুদ্ধে নিয়ে যাওয়াটা খুবই সহজ। তবে বাস্তবতা হচ্ছে দেশটিতে চীনের ঋণের যে পরিমাণ রয়েছে তার থেকে জাপানের ঋণ বেশি। তবে জাপানের নাম একবারের জন্যও গণমাধ্যমে আসেনি। দুটি দেশের দেওয়া ঋণ মোট ঋণের ১০ ভাগ করে হবে। ফলে চীন কিছুটা কোণঠাসা হয়ে পড়লেও এ পরিস্থিতি থেকে ভারত সুবিধা নিতে পারবে না। কারণ ভারতের নিজেরই অভ্যন্তরীণ সমস্যা রয়েছে। আর ভারতের চীনের মতো বিনিয়োগের সে পরিমাণ অর্থ নেই।

(অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ শিক্ষকতার পাশাপাশি ২০১৬ থেকে দুই বছরের জন্য শ্রীলঙ্কায় কলম্বোভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান রিজওনাল সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের (আরসিএসএস) নির্বাহী পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেছেন।)

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত