Ajker Patrika

চিকিৎসক ও জনবল সংকটে ব্যাহত সেবা

নাটোর প্রতিনিধি
আপডেট : ২৬ মে ২০২২, ১৬: ২৮
চিকিৎসক ও জনবল সংকটে ব্যাহত সেবা

নাটোর আধুনিক সদর হাসপাতালে রয়েছে চিকিৎসক ও জনবলের সংকট। ফলে এখানে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে চিকিৎসা কার্যক্রম। শয্যাসংকট থাকায় রোগীদের চিকিৎসা নিতে হয় ওয়ার্ডের মেঝে ও বারান্দায় থেকে। সেখানের পরিবেশ অপরিচ্ছন্ন। কাঙ্ক্ষিত সেবা না পাওয়ার অভিযোগও তাঁদের।

রোগীদের অভিযোগ, বহির্বিভাগে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বসে থেকেও দেখা পাওয়া যায় না চিকিৎসকদের। প্রয়োজনীয় ওষুধ না পেয়ে প্রায়ই ফিরে যেতে হয় অনেককে। এই সংকটের জন্য হাসপাতালের অব্যবস্থাপনাকে দায়ী করেছেন তাঁরা। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, হাসপাতালে চিকিৎসকের সংকট রয়েছে। ফলে রোগীদের চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হয় তাঁদের। তাই অনেক সময় রোগীরা কাঙ্ক্ষিত সেবা পান না। তারপরও যে জনবল আছে তা দিয়েই হাসপাতালে সব ধরনের সেবা নিশ্চিত করা হচ্ছে।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, রোগীর স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য প্যাথলজিতে একজন মাত্র টেকনোলজিস্ট কাজ করেন। তাই দুপুর ১২টার পরে আর কোনো পরীক্ষার নমুনা সংগ্রহ করা সম্ভব হয় না।

সদর উপজেলার দস্তানাবাদ থেকে চিকিৎসা নিতে আসা সুমাইয়া বেগম বলেন, সকাল ৮টা থেকে তাঁর ছয় মাসের শিশুকে নিয়ে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের চেম্বারের সামনে বসে আছেন। দুপুর হয়ে গেলেও দেখা মেলেনি।

নলডাঙ্গা উপজেলার কেশবপুর থেকে আসা মারিয়া বেগম বলেন, বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার খরচ বেশি। তাই পাঁচ টাকা দিয়ে টিকিট কেটে সকাল থেকে বসে আছেন তিনি। তিন ঘণ্টা পার হলেও দেখা মেলেনি চিকিৎসকের।

হাসপাতালের বহির্বিভাগে চর্মরোগের চিকিৎসা নিতে আসা কাদের আলী বলেন, চিকিৎসক ভেতরে বসে ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধির সঙ্গে আলাপ করেন। আর মাঝেমধ্যে একজন করে রোগী দেখেন।

সদর উপজেলার কাফুরিয়া থেকে শিশু ফাহিমকে নিয়ে রোববার সকালে হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ভর্তি হন কেয়া। তিনি বলেন, সব সেবা ঠিকমতো দিলেও রাইস স্যালাইন ও বায়োকিট নামের দুটি ওষুধ বাইরে থেকে কিনতে হয়েছে।

হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডের ইনচার্জ চন্দনা দেব নাথ বলেন, যে ওষুধের সরবরাহ নেই শুধু সেই ওষুধ বাইরে থেকে আনতে হয়। এ ছাড়া ওষুধের মজুত আছে।

মল্লিকহাটি এলাকার সাহানা খাতুন বলেন, ‘আমাকে শুধু পাঁচটি করে ওষুধ দিয়েছে। বাকি ওষুধ কোথায় পাব।’

হাসপাতালের বহির্বিভাগ ও ফার্মেসি বিভাগের ইনচার্জ রেবেকা সুলতানা বলেন, ওষুধের সরবরাহ কম থাকায় রোগীদের কম করে ওষুধ দেওয়া হচ্ছে। সরবরাহ বাড়লে চাহিদামতো দেওয়া হবে।

হাসপাতালের চিকিৎসক সুমনা সরকার বলেন, সকাল ৮টায় হাসপাতালে এসে ওয়ার্ড পরিদর্শন করতে হয়। তারপর নতুন রোগীর সমস্যা দেখে চিকিৎসা দিতে হয়। এতে করে বহির্বিভাগের চেম্বারে বসতে দেরি হয় তাঁদের। চিকিৎসকের সংখ্যা না বাড়ালে সঠিক সময়ে স্বল্পসংখ্যক চিকিৎসক দিয়ে সেবা দেওয়া সম্ভব হবে না বলে জানান তিনি।

হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা এম এ মোমিন বলেন, জেলার সদর হাসপাতালের বহির্বিভাগে প্রতিদিন গড়ে ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৩০০ রোগীকে বিভিন্ন রোগের চিকিৎসাসেবা দিতে হয়। হাসপাতালের অভ্যন্তরে ১০০ শয্যার বিপরীতে প্রতিদিন রোগী ভর্তি থাকে ২০০ জন। বাধ্য হয়ে বারান্দা ও মেঝেতে চিকিৎসা দিতে হয় তাঁদের। হাসপাতালের প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করতে রোগীদের পরামর্শ দিতে দেরি হয়। ফলে চেম্বারের সামনে ভিড় হয় রোগীর।

হাসপাতালের সহকারী পরিচালক পরিতোষ কুমার রায় বলেন, হাসপাতালে দীর্ঘদিন থেকে জনবলের সংকট রয়েছে। ৩১ জন চিকিৎসকের মধ্যে ১১ জন কম রয়েছে। একজন প্যাথলজিস্ট দিয়ে চলছে প্যাথলজি বিভাগ। এ ছাড়া ৩৬ জন পরিচ্ছন্নতাকর্মী নেই। একজন চিকিৎসককে ওয়ার্ডে ও বহির্বিভাগে রোগী দেখতে হয়। হাসপাতালটি ২৫০ শয্যায় উন্নীত হলে এসব সমস্যার সমাধান হবে। এ ছাড়া সরকারি ইডিসিএল চাহিদা মোতাবেক ওষুধ সরবরাহ না করায় রোগীর ব্যবস্থাপত্রের চাহিদামতো ওষুধ সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না। তারপরও হাসপাতালে সব ধরনের সেবা নিশ্চিত করা হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত