Ajker Patrika

বন্যা পরিস্থিতি: তিস্তার চোখরাঙানিতে দিশেহারা মানুষ

আজকের পত্রিকা ডেস্ক
Thumbnail image

 

টানা বর্ষণ ও উজান থেকে আসা ঢলে সিলেটে সৃষ্ট বন্যা পরিস্থিতির আরও কিছুটা উন্নতি হয়েছে। সুনামগঞ্জেও পরিস্থিতির সামান্য উন্নতি হয়েছে। তবে এখন পরিস্থিতি নাজুক হচ্ছে উত্তরে। এরই মধ্যে বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হওয়ায় এবং তিস্তায় ভাঙন শুরু হওয়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছে কুড়িগ্রামের মানুষ। গাইবান্ধায়ও ভাঙছে তিস্তার পাড়। রংপুরে ডুবেছে ফসলের মাঠ।

বন্যার পানিতে গোসল করতে নেমে গতকাল দুপুরে সিলেট নগরীতে অভি নামের এক স্কুল ছাত্রের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে গত দুদিনে দেশের বিভিন্ন এলাকায় বানের স্রোতে ভেসে ও পানিতে ডুবে ছয়জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেল।

কুড়িগ্রামে দিশেহারা মানুষ
‘নদী ভাঙছে। বাড়ি নাই, ঘর নাই। হামার একটেও জায়গা নাই। মাইনষের বাড়িত যাবার নাগছি। ছাগল-গরু সউগ মাইনষের বাড়িত থোয়া নাগবে।’ বলেই মুখে কাপড় গুঁজে কান্না শুরু করেন বিভা রানী। তিস্তার ভাঙনে বিলীন হয়েছে বিভা রানীর বসতভিটা। কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের চতুরা কালীরহাট গ্রামের এই বাসিন্দা গতকাল শুক্রবার দুপুরে কোনোরকমে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে অন্যত্র সরে গেছেন।

শুধু বিভা রানীই নন, তিস্তার ভাঙনে এরই মধ্যে সহায়-সম্বল হারিয়েছেন কুড়িগ্রামের নদীতীরের অনেক বাসিন্দা। ভাঙনের আশঙ্কায় অনেকে বসতি সরিয়ে নিচ্ছেন। চতুরা কালীরহাট গ্রামে কয়েক শ মিটার এলাকাজুড়ে ভাঙনের হুমকিতে দাঁড়িয়ে আছে শতাধিক পরিবার, কালীরহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মসজিদ, মাদ্রাসা, পাকা সড়কসহ কালীরহাট বাজার। নদী ভাঙতে ভাঙতে অনেক পরিবারের আঙিনায় পৌঁছে গেছে।

বিদ্যানন্দ ইউনিয়ন পরিষদের ২ নম্বর ইউপি সদস্য সেফারুল ইসলাম বলেন, ‘তিস্তার ভাঙনের কবলে পড়ে একের পর এক পরিবারের বসতি বিলীন হচ্ছে।

ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের সোনার জুম্মা এলাকা থেকে মৌলভী পাড়া পর্যন্ত তীরবর্তী শতাধিক পরিবার ভাঙনের হুমকিতে আছে।’

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কুড়িগ্রামের নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিবুল হাসান বলেন, ‘বিদ্যানন্দের কালীরহাট বাজারে ভাটির দিকে ভাঙনের তীব্রতা বেশি। আমরা আপাতত ২০০ মিটার জায়গাজুড়ে জিও ব্যাগ ফেলব। দু-এক দিনের মধ্যে কাজ শুরু হবে।’

গাইবান্ধায়ও তিস্তার পাড় ভাঙছে। নদীর পানি বিপৎসীমার ৫৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ২১ ঘণ্টায় নদীর পানি বেড়েছে ৪৩ সেন্টিমিটার। ব্রহ্মপুত্র, ঘাঘট ও করতোয়াও চোখ রাঙাচ্ছে এখানে। অনেক এলাকা এরই মধ্যে প্লাবিত হয়েছে। স্থানীয় ও পাউবো সূত্র বলেছে, গাইবান্ধা সদর উপজেলার মোল্লারচর, গিদারি, ঘাগোয়া, কামারজানি, ফুলছড়ি উপজেলার এরেন্ডাবাড়ি, ফুলছড়ি ও ফজলুপুর এবং সুন্দরগঞ্জ উপজেলার তারাপুর, কাপাসিয়া, হরিপুর ইউনিয়নসহ বিভিন্ন এলাকায় নদীভাঙন দেখা দিয়েছে।

এদিকে রংপুরের পীরগাছায় তিস্তার পানি বেড়ে দুটি ইউনিয়নের নদীতীরবর্তী নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। নদীঘেঁষা নিচু এলাকায় ২ শতাধিক কৃষকের বাদামের মাঠ এখন পানির নিচে। উপজেলার গাবুড়া এলাকার কৃষক ফয়জুর রহমান বলেন, ‘হঠাৎ পানিতে আমরা সর্বস্বান্ত হয়ে গেছি। সন্ধ্যায় জানলাম, তিস্তার পানি বাড়ছে, আর রাতে সব তলিয়ে গেল। কিছুই করার নাই। অনেক জমিতে দেড়-দুই ফুট পানি। সব বাদাম নষ্ট হয়ে গেছে।’

সিলেটে বন্যা পরিস্থিতির আরও উন্নতি
সিলেটে সুরমা, কুশিয়ারাসহ সব নদীরই পানি কমছে। প্রায় এক সপ্তাহ পর গতকাল রোদের দেখাও মিলেছে। রাত ৮টা পর্যন্ত কোনো বৃষ্টি হয়নি। সিলেট পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাশ বলেন, ‘শুক্রবার বৃষ্টি না হওয়ায় পানি কমতে শুরু করেছে। বৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢল না হলে বন্যা পরিস্থিতির দ্রুত উন্নতি হবে।’

জেলা প্রশাসন থেকে গতকাল দুপুরে পাওয়া তথ্যমতে, সিলেট জেলার ১০ লাখ ৪৩ হাজার লোক গতকাল পর্যন্ত পানিবন্দী অবস্থায় ছিল। বন্যায় সিলেট সিটি করপোরেশনের ২৯টি ওয়ার্ডসহ জেলার ১৩৬টি পৌরসভা ও গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। বর্তমানে আশ্রয়কেন্দ্রে আছে ২৫ হাজার ২৭৫ জন।

সিলেট আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ শাহ মো. সজিব বলেন, ‘শুক্রবার সকাল থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সিলেটের কোথাও বৃষ্টি হয়নি। তবে আকাশে মেঘ রয়েছে। ফলে আগামী দুদিন বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা আছে।’

এদিকে সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরে বন্যা পরিস্থিতির সামান্য উন্নতি হয়েছে। জগন্নাথপুরের ইউএনও আল-বশিরুল ইসলাম বলেন, ‘পানি কমতে শুরু করেছে। আশা করছি আর বাড়বে না। সার্বিক পরিস্থিতি আমাদের নজরে রয়েছে।’

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেছেন নিজস্ব প্রতিবেদক, সিলেট ও সিলেট, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, পীরগাছা (রংপুর) ও জগন্নাথপুর (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি]

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত