Ajker Patrika

৪০ শতাংশ করতেই মেয়াদ শেষ

টাঙ্গাইল প্রতিনিধি
আপডেট : ২৯ মে ২০২২, ১০: ১৬
৪০ শতাংশ করতেই মেয়াদ শেষ

নির্ধারিত মেয়াদ পার হলেও টাঙ্গাইল-বেলকুচি সড়কে লৌহজং নদীর ওপর নির্মাণাধীন সেতুর কাজ শেষ করতে পারেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। কাজের মেয়াদ শেষ হয়েছে গত ১১ মে, অথচ শেষ হয়েছে মাত্র ৪০ শতাংশ। ফলে বাঁশের সাঁকো ও ঝুঁকিপূর্ণ বিকল্প সেতু ব্যবহার করছে পথচারীরা। এতে ভোগান্তিতে পড়েছে এই অঞ্চলের কয়েক লাখ মানুষ।

অন্যদিকে সেতুতে ব্যবহৃত রডে ঢালাই না দেওয়ায় মরিচা পড়ে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে এবং নিম্নমানের কাজের অভিযোগ তুলেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তাঁরা বলেন, ধীরগতিতে কাজ করায় এ ভোগান্তির সৃষ্টি হয়েছে। তবে পৌরসভার প্রকৌশলী বলছেন, কাজ শেষ করার জন্য ঠিকাদারকে নোটিশ দেওয়া হয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দারা আরও জানান, টাঙ্গাইল শহরের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য এ নদী পার হয়ে পৌরসভার দুটি ওয়ার্ড ও উপজেলার পশ্চিমাঞ্চলের তিন ইউনিয়নের কয়েক লাখ মানুষ যাতায়াত করে। আগের বেইলি সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় দুই বছর আগে সেটি ভেঙে নতুন সেতু নির্মাণের কাজ শুরু করে পৌরসভা। ফলে এক কিলোমিটার ঘুরে যাতায়াত করতে হচ্ছে তাঁদের। এতে চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছেন এ সড়ক ব্যবহারকারীরা।

পৌরসভা সূত্রে জানা গেছে, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের অধীনে ৩ কোটি ৯৫ লাখ ৬৬ হাজার ৮৬ টাকা ব্যয়ে লৌহজং নদীর ওপর ৪০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ৮ মিটার প্রস্থের এ সেতু নির্মাণের দরপত্র আহ্বান করে টাঙ্গাইল পৌরসভা। পরে আলিফ ট্রেডার্সকে ২০২০ সালের ১২ নভেম্বর থেকে কাজ শুরুর অনুমতি দেয় টাঙ্গাইল পৌরসভা। কাজের মেয়াদ শেষ হয়েছে গত ১১ মে। এই দেড় বছরে ৪০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে বলে জানিয়েছেন পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী শিব্বির আহমেদ আজমী।

সরেজমিনে দেখা গেছে, সেতুটির চারটি পিলার নদীর মাঝে দাঁড়িয়ে রয়েছে। পথচারীরা সেতুর উত্তর পাশের ঝুঁকিপূর্ণ বাঁশের সাঁকো ব্যবহার করে পার হচ্ছে। ছোট যানবাহনের আরোহীরা দক্ষিণ পাশের ঝুঁকিপূর্ণ বিকল্প বেইলি সেতু ব্যবহার করছে। সেতুর পূর্ব ও পশ্চিম পাশে নির্মাণসামগ্রী পড়ে রয়েছে, কিন্তু কাউকে কাজ করতে দেখা যায়নি।

সেখানে কথা হয় অটোরিকশাচালক ফরিদ মিয়া, সুজন ও জুলহাস ফকিরের সঙ্গে। তাঁরা বলেন, দীর্ঘদিন ধরে এ সেতুর কাজ চলছে। চলাচলের জন্য যে বিকল্প সেতু বানানো হয়েছে, সেটা অনেক নিচু। বৃষ্টি হলে ঢাল বেয়ে উঠতে-নামতে অনেক কষ্ট হয়। এতে বেশ কয়েকবার দুর্ঘটনাও ঘটেছে। অনেকেই আহত হয়েছেন। সেতুটির নির্মাণকাজ দ্রুত শেষ হলে তাঁদের আর এ কষ্ট হতো না।

পথচারী লাল মিয়া বলেন, ‘প্রায় দুই বছর ধরে সেতুর কারণে আমাদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। সেতুর পরিবর্তে বিকল্প সড়ক করা হলেও তাতে তেমন কাজ হচ্ছে না। দ্রুত সময়ের মধ্যে সেতুর কাজ শেষ করার দাবি জানাচ্ছি।’

স্থানীয় বাসিন্দা সাব্বির আহমেদ বলেন, বেশি লাভের আশায় ঠিকাদার সেতু নির্মাণে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করেছে। প্রায় দেড় মাস ধরে ঢালাই করার জন্য রড লাগিয়ে রেখেছে, কিন্তু বৃষ্টিতে রডে মরিচা পড়ে নষ্ট হচ্ছে। সরকারি মালামাল অপচয় ও পৌরবাসীর দুর্ভোগ দেখার যেন কেউ নেই।

অপর বাসিন্দা মারুফ হোসেন বলেন, ‘দেড় বছর ধরে এ সড়ক দিয়ে বড় কোনো যানবাহন চলাচল করতে পারে না। এক কিলোমিটার ঘুরে আমার বাড়িতে যাতায়াত করতে হয়। এতে খরচও পড়ে বেশি। এ সড়কে সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ভ্যান ও মোটরসাইকেল ছাড়াও ভারী কোনো যানবাহন চলাচল করতে পারে না।’

এ বিষয়ে টাঙ্গাইল পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী শিব্বির আহমেদ আজমী বলেন, সেতুটির ৪০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। গত বছর বন্যার কারণে কাজের মেয়াদ শেষ হলেও আরও তিন মাস বাড়ানো হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, নতুন করে ধার্য করা সময়ের মধ্যেই সেতুর নির্মাণকাজ শেষ করবে ঠিকাদার।

পৌরসভার মেয়র এস এম সিরাজুল হক আলমগীর বলেন, জনগণের দুর্ভোগ লাঘবে সেতুটি নির্মাণ করা হচ্ছে। সেতুর কাজ শেষ করতে ঠিকাদারকে বারবার তাগিদ দেওয়া হয়েছে। সর্বশেষ চিঠির মাধ্যমেও তাঁকে অবগত করা হয়েছে। অন্যথায় ঠিকাদারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আলিফ ট্রেডার্সের প্রোপ্রাইটর এম আর খান টুটুল বলেন, ‘সেতুটির ডিজাইন তিনবার পরিবর্তন করেছে কর্তৃপক্ষ। যে কারণে প্রথম ছয় মাস আমরা কাজ শুরু করতে পারিনি। তার ওপর সেতু নির্মাণে ব্যবহৃত প্লেট ও পাইপ চট্টগ্রাম থেকে আনা হয়েছে। চীন থেকেও বেশ কিছু নির্মাণসামগ্রী আনা হয়েছে। এগুলো সেট করতে সময় লাগে। আশা করছি দ্রুততম সময়ের মধ্যে নির্মাণকাজ শেষ করতে পারব।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত