Ajker Patrika

কুয়াকাটায় মরছে গাছ

মীর মো. মহিব্বুল্লাহ, পটুয়াখালী
আপডেট : ২৮ মার্চ ২০২২, ১০: ১৮
কুয়াকাটায় মরছে গাছ

কুয়াকাটা সৈকতের সংরক্ষিত বনাঞ্চলের গাছ দিন দিন মরে যাচ্ছে। আর এসব মরা গাছে কে বা কারা রাতের আঁধারে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে ওই এলাকার পরিবেশ হুমকির মুখে পড়েছে। তবে স্থানীয় বাসিন্দাদের ধারণা বন্য প্রাণী শিকার, জ্বালানি কাঠ সংগ্রহ কিংবা সৈকতে চলাচলের পথ সহজ করতেই এমনটি করা হচ্ছে। এদিকে এ বিষয়ে তদন্ত করা হবে বলে জানিয়েছে উপকূলীয় বন বিভাগ কর্তৃপক্ষ।

জানা যায়, কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকতের দীর্ঘ ১৮ কিলোমিটারের বড় একটি অংশজুড়েই রয়েছে ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট। বন বিভাগের তথ্যমতে, বছরে লেম্বুরবন, গঙ্গামতি ও কুয়াকাটা এলাকায় ঝাউ, কেওড়া, বাইন, আকাশমণিসহ বিভিন্ন প্রজাতির প্রায় ১০০ হেক্টর জমিতে বনায়ন করা হয়। তবে তাদের দাবি এগুলোর মধ্যে অনেক গাছই বিভিন্ন ঝড়ে সমুদ্রে বিলীন হয়ে গেছে। তবে এখন বড় দুশ্চিন্তা, হঠাৎ করেই এই বনভূমির গঙ্গামতি অংশে প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকার গাছ মরে যাচ্ছে।

গঙ্গামতি সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্ট ঘুরে দেখা যায়, মারা যাওয়া গাছগুলোর মধ্যে অনেকগুলোর গোড়া পুড়ে পড়ে আছে, আবার কিছু গাছ অর্ধেক পোড়া অবস্থায় পরে আছে। এতে বনে বসবাস করা বিভিন্ন প্রজাতির বন্য প্রাণী হুমকির মুখে পড়ছে বলে আশঙ্কা স্থানীয় বাসিন্দাদের। এদিকে মরা এসব গাছের পাশ দিয়েই পর্যটকদের বহনকারী মোটরসাইকেল ও গাড়ি চলাচল করে। যেকোনো সময় গাছ ভেঙে পরে বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলেও মনে করেন তাঁরা।

গঙ্গামতি এলাকার জেলে মো. ইমরান বলেন, ‘এক সময় মানুষ বন থেকে গাছ চুরি করে নিত। কিন্তু এখন আর সেরকম কিছু হয় না। কিন্তু এখন এই গাছে আগুন দেয় কারা দেয় তা আমরা জানি না। আমরা মনে করি মরা গাছে তক্ষক থাকে। আগুন দিলে বের হয়ে যায় ওই তক্ষক। এগুলোকে ধরার জন্য আগুন দিতে পারে।’

কুয়াকাটা আন্ধারমানিক ট্যুরিস্টের পরিচালক কে এম বাচ্চু বলেন, ‘কয়েক বছর যাবৎ জঙ্গলের গাছ মারা যাচ্ছে। বড় গাছগুলো অনেক দিন আগে মরে যাওয়ার কারণে ভেঙে, পচে যাচ্ছে। তাই এলাকার জেলেরা মাঝে মধ্যে সেই পড়ে থাকা গাছগুলো নিয়ে বাড়িতে রান্না করে। তবে এই গাছগুলো কারা পুড়ছে তা আমরা জানি না। এ ছাড়া এসব মরা গাছের পাশ দিয়েই পর্যটকদের বহনকারী মোটরসাইকেল ও গাড়ি চলাচল করে। যেকোনো সময় গাছগুলো ভেঙে পড়ে বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। বন বিভাগের এখনই উদ্যোগ নেওয়া উচিত।’

বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) বরিশাল বিভাগীয় সমন্বয়কারী লিংকন বাহের বলেন, ‘সৈকতের গাছগুলো মূলত দুটি কারণে মারা যাচ্ছে। এক জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে প্রাকৃতিকভাবে। দ্বিতীয়ত সৈকত ছোট হয়ে যাওয়ার মৌসুমে গাছের শিকড়ে বালি জমে মারা যায়। তবে গাছে আগুন দেওয়াটা মানুষেরই কাজ। আর এ সংরক্ষিত বনাঞ্চলের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব বন বিভাগের। বন বিভাগের উচিত শিগগিরই যারা বন উজাড়ে চেষ্টা করছে তাদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনা।’

উপকূলীয় বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুনের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবের কারণে সৈকতের এসব গাছ মারা যাচ্ছে। কিন্তু কী কারণে গাছে আগুন দেওয়া হচ্ছে, সে বিষয়ে তদন্ত করা হবে। ওই এলাকায় নতুন করে বনাঞ্চল করা হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত