Ajker Patrika

সেতু ভেঙে দুর্ভোগে লাখো মানুষ

মো. মিজানুর রহমান রিয়াদ, নোয়াখালী
আপডেট : ১২ জুন ২০২২, ১০: ৩৯
সেতু ভেঙে দুর্ভোগে লাখো মানুষ

নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার একলাশপুর-শরীফপুর ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী ‘হাসানহাট সেতুটি’ ৭ মে শনিবার বিকেলে ভেঙে পড়ে। পারাপারের সময় একটি বালুবাহী পিকআপ ভ্যানসহ হঠাৎ সেতুটি খালে ভেঙে পড়ে যায়। এ সময় আহত হন গাড়িতে থাকা চালক ও তাঁর সহকারী। শুধু হাসানহাট সেতু নয়, গত দুই বছরে জেলার গুরুত্বপূর্ণ অন্তত আরও ৪টি সেতু ভেঙে গেছে। এতে জেলা ও উপজেলা শহরের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে দুর্ভোগে পড়েছে কয়েক লাখ মানুষ।

এদিকে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) তথ্যমতে, ভাঙনঝুঁকিতে রয়েছে আরও ৫টি সেতু। ঝুঁকিপূর্ণ এসব সেতু ভেঙে যেকোনো মুহূর্তে প্রাণহানিসহ ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা। ভেঙে পড়া সেতুগুলো পুনর্নির্মাণসহ ঝুঁকিপূর্ণ সেতুর তালিকা করে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

হাসানহাট সেতুটি ভেঙে যাওয়ায় জেলা শহর মাইজদীসহ আশপাশের বাজারের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে শরীফপুর, নেয়াজপুর, একলাশপুর ও কাদিরপুরসহ কয়েকটি ইউনিয়নের বাসিন্দাদের যাতায়াতে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।

বর্তমানে ঝুঁকি নিয়ে বাঁশের সাঁকো দিয়ে মানুষজন, শিক্ষার্থী ও শিশুরা চলাচল করলেও যানবাহন নিয়ে কয়েক কিলোমিটার ঘুরে জেলা শহরে যেতে হচ্ছে তাঁদের। বেইলি সেতু নির্মাণের পর কিছুটা সমস্যার সমাধান হয়েছে। তবে স্থায়ী সমাধান চান স্থানীয়রা।

এলজিইডি সূত্রমতে, জেলার তিনটি উপজেলায় ৫টি ঝুঁকিপূর্ণ সেতুর তালিকা করা হয়েছে। সেগুলো হলো—বেগমগঞ্জ উপজেলার দফাদার বাড়ি-বারিরহাট এলাকার প্রয়াত সামছুল আলম সড়কের ওপর একটি, জমিদারহাট-বগাদিয়া সোনাইমুড়ী ও কাজীরহাট-কাশিপুর সড়কে একটি, একলাশপুর ইউনিয়নের মুজিব সড়কের একলাশপুর মাজার গেট-খালপাড়া এলাকায় একটি, সদর উপজেলার মাইজদী-ওটারহাট-ভূইয়ারহাট-মাইজদী পুরাতন হসপিটাল সড়কে একটি এবং হাতিয়া উপজেলার বন্দরটিলা-নিঝুম দ্বীপ সড়কের নামার বাজার এলাকায় একটি সেতু ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ইতিমধ্যে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানানো হয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, দেড় বছর আগে থেকে ভেঙে পড়ে আছে কবিরহাট উপজেলার চাপরাশি খালের ওপর থাকা ৪টি ব্রিজ। এতে চরএলাহী, ধানসালিকসহ ৩টি ইউনিয়নের মানুষের দুর্ভোগের যেন শেষ নেই। বর্তমানে ঝুঁকিপূর্ণ সেতুগুলোর মধ্যে অন্যতম জেলা শহরের কাছাকাছি থাকা মাইজদী-ওটারহাট-ভূইয়ারহাট-মাইজদী সড়কের ‘ফিরিঙ্গি সেতু’। এ সেতুর ওপর দিয়ে জেলা শহর মাইজদী, বেগমগঞ্জ, কোম্পানীগঞ্জ ও কবিরহাট উপজেলার লাখো মানুষ এবং হাজারো যানবাহন চলাচল করছে। ৫০ বছর আগে নির্মিত ফিরিঙ্গি সেতুটিতে ইতিমধ্যে ইট ও পলেস্তারা খসে পড়ছে। যেকোনো মুহূর্তে ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা।

ঝুঁকিপূর্ণ এসব সেতুর দৈর্ঘ্য ৪০-৭০ মিটার পর্যন্ত। যার মধ্যে সুবর্ণচর, কবিরহাট, হাতিয়া ও বেগমগঞ্জে রয়েছে বেশি। স্থানীয়দের মতে, সম্প্রতি খাল খনন প্রকল্পের কাজের কারণে এসব সেতুর চারপাশের মাটি সরে গেছে। তার ওপর সেতুগুলোর মেয়াদকালও শেষ হয়েছে। এখনই এসব সেতু পুনর্নির্মাণ করা না হলে বড় ধরনের দুর্ঘটনায় চরম মূল্য দিতে হবে জনগণকে।

হাসানহাট এলাকার বাসিন্দা আবুল কাশেম বলেন, হাজারো মানুষের যাতায়াতের কথা চিন্তা করে দ্রুত সেতুটি নির্মাণ করা জরুরি। খালের পূর্বপাশে প্রাথমিক বিদ্যালয় ও কিন্ডারগার্টেন রয়েছে, কিন্তু সেতু ভেঙে যাওয়ায় পশ্চিম পাশের শিশুশিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে আসতে পারছে না।

জেলার এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ইকরামুল হক বলেন, ‘আমরা উপজেলার প্রকৌশলীদের কাছ থেকে তথ্য নিয়ে ইতিমধ্যে ৫টি ঝুঁকিপূর্ণ সেতুর তালিকা প্রস্তুত করেছি। এসব তথ্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। এ ছাড়া বর্ষা মৌসুমের পর বোঝা যাবে আরও কোনো ঝুঁকিপূর্ণ সেতু আছে কি না। পর্যায়ক্রমে ভেঙে পড়া সেতুগুলো পুনর্নির্মাণ ও ঝুঁকিপূর্ণগুলোর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত