Ajker Patrika

ভোলার আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস

শিমুল চৌধুরী, ভোলা
আপডেট : ২৭ মে ২০২২, ১২: ১৪
ভোলার আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস

ভোলার আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে দালালদের দৌরাত্ম্য বেড়েছে। করোনার কারণে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর আন্তর্জাতিক শ্রমবাজার কিছুটা চাঙা হওয়ার পর থেকে ভিড় বেড়েছে আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে। সেই সুযোগে একশ্রেণির অসাধু দালাল অবৈধভাবে পাসপোর্ট করে দেওয়ার নামে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে। পুলিশ অভিযান চালালেও দালালদের দৌরাত্ম্য কমেনি।

গতকাল বৃহস্পতিবার ভোলা পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে দেখা গেছে, সেখানে গড়ে উঠেছে বেশ কয়েকটি ফটোকপির দোকান। ফটোকপি দোকানের মালিক ও পাসপোর্ট অফিসের কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী, কর্মরত কয়েকজন আনসার সদস্যের যোগসাজশে গড়ে উঠেছে দালাল চক্র। অতিরিক্ত টাকা দিলে অল্প সময়ের মধ্যেই পাসপোর্টের কাজ হয়ে যায়। আর টাকা না দিলে ভোগান্তির শিকার হতে হয় আবেদনকারীদের।

সেবাপ্রত্যাশীদের অভিযোগ, দালালদের মাধ্যমে ফরম জমা দিলে দ্রুতই ফরম জমা দেওয়া যায়। কিন্তু দালালদের সাহায্য না নিলে পাসপোর্ট অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা হয়রানি করেন। তাঁরা পাসপোর্ট ফরমে সংকেত ব্যবহার করেন। ঘুষ না দিলে ফরম পূরণের তথ্য ভুলে ভরা বলে হয়রানি করা হয়। আর ঘুষ দিলে সেই ভুলগুলো নির্ভুল হয়ে যায়।

পাসপোর্ট করতে আসা সদর উপজেলার মো. বেল্লাল নাফিজ জানান, তাঁর চাচাশ্বশুর স্কুলশিক্ষক মো. শাহজাহান জান্টুর দুটি কিডনি নষ্ট হয়ে গেছে। তাঁর উন্নত চিকিৎসার জন্য ভারতে নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকেরা। ফলে দ্রুত পাসপোর্ট করার জন্য জেলা শিক্ষা অফিস থেকে এনওসি নেওয়া হয়। প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ ২০ এপ্রিল পাসপোর্ট অফিসে গেলেও জাতীয় পরিচয়পত্রের ভেরিফায়েড কপির জন্য তা জমা নেওয়া হয়নি। পরে অসুস্থ অবস্থায় চাচাশ্বশুর নির্বাচন অফিসে গিয়ে ভেরিফায়েড কপি সংগ্রহ করে আবার পাসপোর্ট অফিসে যান। কিন্তু বেলা ২টা বেজে যাওয়ায় ওই দিন আর কাগজপত্র জমা নেননি পাসপোর্ট অফিসের সহকারী পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম। জরুরি পাসপোর্ট না পাওয়ায় তাঁকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ভারতে নেওয়া সম্ভব হয়নি। শেষে চিকিৎসার অভাবে ২৫ মে তাঁর চাচাশ্বশুর মারা যান।

ভোলার এক সাংবাদিক ফরিদুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, ‘দালালদের দৌরাত্ম্য ও প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অনিয়ম-দুর্নীতির তথ্য সংগ্রহ করতে ২৫ এপ্রিল পাসপোর্ট অফিসে গেলে সহকারী পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম এবং অফিস সহকারী রাসেল ক্যামেরা ও মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেন। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দিই। জেলা প্রশাসক অভিযোগ আমলে নিয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সুজিত হাওলাদারকে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেন। এডিসি ২৩ মে সরেজমিনে গিয়ে তদন্ত করেন। ওই দিনই পাসপোর্ট অফিসের সহকারী পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম ডিসির কাছে আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ ও হুমকি দেন।’

এ ঘটনায় ২৪ মে ভোলা পাসপোর্ট অফিসের সহকারী পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম ও অফিস সহকারী রাসেলের বিরুদ্ধে সদর মডেল থানায় জিডি করেন সাংবাদিক ফরিদুল ইসলাম।

বৃহস্পতিবার বোরহানউদ্দিন উপজেলার কুঞ্জেরহাট এলাকা থেকে পাসপোর্ট করতে আসেন শফিউল্লাহ। তিনি বলেন, ‘দালাল চক্রের সদস্যদের কাছে না গিয়ে আমি ব্যাংক ড্রাফটের মাধ্যমে ৫ হাজার ৭৫০ টাকা জমা দিয়ে এখনো পাসপোর্ট হাতে পাইনি। চার দিন ধরে এখানে আসছি। শুধু এই লাগবে, সেই লাগবে বলে হয়রানি করছে। হয়তো দালাল চক্রের সদস্যদের মাধ্যমে জমা না দেওয়ায় এ হয়রানি করা হচ্ছে।’

ভোলা সদর মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আরমান হোসেন বলেন, ‘পাসপোর্ট অফিসের দালাল চক্রের সদস্যদের ধরতে প্রায়ই অভিযান চালানো হয়।’

এ বিষয়ে ভোলা আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের সহকারী পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে বলেন, ‘এ অফিসে দালাল ঢোকার কোনো সুযোগ নেই। অফিসের চারদিকে সিসি ক্যামেরা রয়েছে।’

একজন সেবাপ্রত্যাশীর চাচাশ্বশুরের মৃত্যুতে সমবেদনা প্রকাশ করে জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘ওই ব্যক্তি ফরম জমা দিয়েছেন ২১ এপ্রিল। তাঁর পাসপোর্ট হয়েছে ২৮ এপ্রিল। ২৯ এপ্রিল থেকে ঈদের ছুটি শুরু হয়ে যায়। তাঁর পাসপোর্ট আমরা হাতে পেয়েছি ৫ জুন। পাসপোর্ট রিসিভ করার পর স্বয়ংক্রিয়ভাবে ওই ব্যক্তির মোবাইল ফোনে এসএমএস চলে যাওয়ার কথা। এরপর আর তিনি অফিসে আসেননি। এতে আমার কী অপরাধ ছিল? তবে অফিসের কেউ দালালি বা কোনো অনিয়মের সঙ্গে জড়িত থাকলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত