Ajker Patrika

রেলের পাম্প নষ্ট রেখে পানি বিক্রির ব্যবসা

জমির উদ্দিন, চট্টগ্রাম
আপডেট : ২৫ জানুয়ারি ২০২২, ০৮: ৫১
রেলের পাম্প নষ্ট রেখে পানি বিক্রির ব্যবসা

বাংলাদেশ রেলওয়ের অন্তত ৫০ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী ও ভাড়াটের বাস নগরের সিআরবি, বাটালি রোড, গোয়ালাপাড়া, মতিঝরনা, আমবাগান, ঝাউতলার রেল কলোনিতে। একসময় অন্তত ১২টি গভীর নলকূপ দিয়ে এসব মানুষের পানি দেওয়া হতো। এখন সেসব পাম্প নষ্ট রেখে বেসরকারি খাতে পানি বিক্রির অবৈধ কারবার চালাচ্ছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সাবেক ও বর্তমান অন্তত চারজন ওয়ার্ড কাউন্সিলর এবং তাঁদের অনুসারীরা। তাঁরা ওয়াসার মতো রীতিমতো পাইপলাইন বসিয়ে পানি দিচ্ছেন রেল কলোনিতে। অবৈধভাবে গভীর নলকূপও বসিয়েছেন অন্তত ৭টি। মাসে অন্তত এক কোটি টাকার পানির ব্যবসা করছেন বলে আছে অভিযোগ।

রেলের পূর্বাঞ্চলীয় মহাব্যবস্থাপক জাহাঙ্গীর হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘নিজেদের নলকূপগুলো যে ইচ্ছা করে বন্ধ রেখেছি এমন নয়, ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় অনেক নলকূপ অচল হয়ে গেছে। আমরা ওয়াসা এবং ফয়’স লেক থেকে পানি আনার ব্যবস্থা করছি। সেটা হলে অবৈধ পানির ব্যবসা এমনিতেই বন্ধ হয়ে যাবে।’

অনুসন্ধান: সরেজমিন দেখা যায়, অবৈধ সাতটি গভীর নলকূপের মধ্যে আমবাগান থেকে ঝাউতলা এলাকায় তিনটি, মতিঝরনায় দুটি ও সিআরবির গোয়ালপাড়া, বাটালি রোড এলাকায় দুটি রয়েছে। এসব এলাকায় অন্তত ১০ হাজার পরিবারের ৫০ হাজার মানুষ বসবাস করে। তারা কেউ প্রতিদিন আর কেউ মাসিক ভিত্তিতে পানির বিল পরিশোধ করে। নিয়ম অনুযায়ী নগরের কোথাও গভীর নলকূপ বসাতে হলে কিংবা পানির লাইন বসাতে হলে ওয়াসার অনুমোদন বাধ্যতামূলক। কিন্তু এ ক্ষেত্রে তা করা হয়নি বলে স্বীকার করেছেন পানি সরবরাহকারীরা।

এলাকাঘুরে দেখা গেছে, গোয়ালপাড়া, বাটালি রোড এলাকায় পানির অবৈধ সংযোগের জন্য পরিবারপ্রতি অগ্রিম দিতে হয়েছে ৫ হাজার টাকা। সার্ভিস চার্জ ২ হাজার ৫০০ টাকা। প্রতি মাসে পানির বিল দিতে হয় ৮০০ টাকা। প্রতিদিন পরপর ২০ মিনিট পানি পান তাঁরা। যাঁদের পানির লাইনের সংযোগ নেই, তাঁদের সকাল-বিকেল ড্রামপ্রতি ২০ টাকা আর কলসপ্রতি ২ টাকা দরে পানি কিনতে হয়। একই পরিস্থিতি সিপিবি, মতিঝরনা, আমবাগান ও ঝাউতলা এলাকায়।

যাঁদের নিয়ন্ত্রণে: আমবাগান থেকে ঝাউতলা পর্যন্ত এলাকার পানির ব্যবসার মূল নিয়ন্ত্রক ১৩ নম্বর পাহাড়তলী ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ও আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ হোসেন হিরণ। তাঁর অনুগত গাজী জাহাঙ্গীর আলম, মো. লোকমান হোসেন ও মো. বাবু প্রকাশ কালা বাবু এলাকায় সংযোগদান এবং বিল আদায় তদারকি করেন। টিকিট প্রিন্টিং প্রেস কলোনি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এলাকায় নলকূপ বসিয়ে তাঁরা পানির পাইপ টেনেছেন আমবাগান-ঝাউতলা ছিন্নমূল কলোনি পর্যন্ত, সংযোগ দেন প্রায় আড়াই হাজার পরিবারে। তবে সবচেয়ে বেশি সংযোগ লাইন রয়েছে কালা বাবুর।

গাজী জাহাঙ্গীর ও লোকমান হোসেনের বাসায় গিয়েও তাঁদের বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি। তবে কালা বাবু পানির ব্যবসার বিষয়টি স্বীকার করে আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘শুধু বিদ্যুৎ বিলের টাকাটা নিই। আমি একজন ঠিকাদার। প্রিন্টিং প্রেস কলোনির স্কুলের শিক্ষার্থীদের জন্য নলকূপ বসিয়েছিলাম। সেখান থেকে পানির কষ্টে যাঁরা আছেন, তাঁদের সংযোগ দিয়েছি। ওয়াসার অনুমোদন নেই। তবে যখন বলবে বন্ধ করতে, আমরা বন্ধ করে দেব।’ অবৈধ পানির ব্যবসা করার কথা অস্বীকার করেন মোহাম্মদ হোসেন হিরণও।

আওয়ামী লীগের বর্তমান কাউন্সিলর মো. ওয়াসিম উদ্দিন চৌধুরী সেই পানির ব্যবসা এখন নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার চেষ্টা করছেন। তিনি বলেন, ‘কালা বাবুকে পানির ব্যবসা বন্ধ করার জন্য এক বছর সময় দিয়েছি। গাজী জাহাঙ্গীর ও লোকমানদের ডিপটিউবওয়েল অনেক বছর আগের বসানো। পানির বিকল্প ব্যবস্থা না করে হুট করে বন্ধ করে দিলে এখানকার মানুষ কষ্ট পাবেন।’

এলাকাবাসীর অভিযোগ, এলাকা ভাগ করে মতিঝরনায় পানির ব্যবসা নিয়ন্ত্রক লালখানবাজার ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ও বিএনপির নেত্রী মনোয়ারা বেগম মণি, সাবেক কাউন্সিলর ও আওয়ামী লীগ নেতা এ এফ কবির আহমেদ মানিক।। এর মধ্যে মানিকের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তবে মনোয়ারা বেগম মণি বলেন, ‘সারা দিন বাসায় নামাজ-কালাম নিয়ে ব্যস্ত থাকি। এসব ব্যবসা করার সময় কই।’

রেলের সদর দপ্তর সিআরবিসংলগ্ন গোয়ালপাড়া ও বাটালি রোড এলাকায় পানি সরবরাহ দেওয়া হয় দুটি গভীর নলকূপ থেকে, যা বসানো হয়েছে বাটালি রোড এলাকায় শহীদ আব্দুর রব কলোনিতে। এটির নিয়ন্ত্রণে আছেন নগর স্বেচ্ছাসেবক দলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আলী মুর্তজা ও বিএনপির কর্মী আক্কাস। আরেকটি নিয়ন্ত্রণ করেন মো. কাশেম।

সোমবার সকাল ১০টায় আলী মুর্তজার নিয়ন্ত্রণে থাকা ডিপটিউবওয়েলে গিয়ে দেখা যায়, একটু পরপর খালি ড্রাম নিয়ে ভ্যান আসছে। ডিপটিউবওয়েল থেকে পানি ভর্তি করে নিয়ে যাচ্ছে। কে কত ড্রাম পানি নিচ্ছে, তার হিসাব রাখছিলেন এক মহিলা। প্রতি ড্রাম ২০ টাকা করে দিতে হয় ওই মহিলাকে।

অভিযোগের বিষয়ে আলী মুর্তজা বলেন, ডিপটিউবওয়েলটি দখলে নিতে আওয়ামী লীগ লোকজন অনেক চেষ্টা করেছিল। স্থানীয়দের বাধায় পারেনি।

রেলওয়ে জানায়, সিআরবির ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নামছে অনেক বছর ধরে। ফলে রেলওয়ের স্থাপিত নলকূপগুলোয় আর পানি উঠছে না। কিছু কিছু নলকূপ থেকে পানি উঠলেও তা ঘোলাটে, পানের অনুপযোগী। সিআরবি আর পাহাড়তলী মিলে আটটি সচল গভীর নলকূপ রয়েছে। এর মধ্যে চারটি সিআরবি ও চট্টগ্রাম স্টেশন এলাকায়, অন্য চারটি পাহাড়তলীতে। এর মধ্যে চট্টগ্রাম স্টেশনে একটি অচল হয়ে আছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আ.লীগের এমপি শাম্মীর বাসায় ১০ লাখ টাকা চাঁদাবাজি ও ভাগ-বাঁটোয়ারার বিবরণ দিলেন রিয়াদ

কোটি টাকা আত্মসাৎ করে লাপাত্তা: কে এই ফ্লাইট এক্সপার্ট এমডি সালমান, বাবার হাত ধরে যাঁর উত্থান

গঙ্গাচড়ায় হিন্দুপল্লিতে হামলাকারীদের উসকানি, স্থানীয় সাংবাদিক গ্রেপ্তার

কিশোরগঞ্জে হর্টিকালচারের উপপরিচালকের বিরুদ্ধে ‘সমকামিতার’ অভিযোগ, মামলা বাবুর্চির

অতিরিক্ত ফি দাবি করায় বিমানবন্দর স্টাফের চোয়াল ভেঙে দিলেন যাত্রী

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত