Ajker Patrika

আগুনের কারণ গ্যাসের চুলা

উখিয়া ও কক্সবাজার প্রতিনিধি
আপডেট : ১৪ জানুয়ারি ২০২২, ১০: ১৩
আগুনের কারণ গ্যাসের চুলা

মসজিদে নামাজ পড়তে গিয়েছিলেন শফিউল্লাহকাটার ১৬ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাসিন্দা আবু ছৈয়দ। ঘরে আগুন লাগার খবরে ছুটে আসেন তিনি। কিন্তু ততক্ষণে পুড়ে গেছে তাঁর ঘর।

গত ৯ জানুয়ারি বিকেল আনুমানিক ৫টার দিকে উখিয়ার শফিউল্লাহকাটার ১৬ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের অগ্নিকাণ্ড সূত্রপাত হয় বি ব্লকের আবু ছৈয়দের ঘর থেকে। ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে তিনি সেদিনের দুর্ঘটনার বর্ণনা দিচ্ছিলেন।

সে সময় ঘরে থাকা তাঁর একমাত্র মেয়ে নষ্ট গ্যাসের চুলায় আগুন জ্বালানোর চেষ্টা করেন। এ থেকে মুহূর্তেই আগুন ঘরে ছড়িয়ে পড়ে বলে জানান তিনি।

আবু সৈয়দ বলেন, ‘কোনোরকমে নিজের এফসিএন কার্ডটা বের করতে পেরেছি, আমার সবকিছু পুড়ে গেছে। ভাগ্যিস আগুন দেখে মেয়েটা বের হয়ে গিয়েছিল। নাইলে তাকেও হারাতাম।’

গত বছর ২২ মার্চ স্মরণকালের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের সাক্ষী হয় রোহিঙ্গা ক্যাম্প। গত ১৩ মাসে কমপক্ষে ১২টি ছোটবড় অগ্নিদুর্ঘটনা ঘটেছে ক্যাম্প এলাকায়।

অভিযোগ রয়েছে, রান্নার জন্য রোহিঙ্গাদের দেওয়া গ্যাসের চুলা নষ্ট হয়ে গেলে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান তা মেরামত করে দেয় না। এ ছাড়া রোহিঙ্গা নারীরা চুলার ব্যবহারও ভালো জানেন না। এ ছাড়া আগুন লাগলে সব ঘরে গ্যাস সিলিন্ডার থাকায় তা বিস্ফোরিত হয়ে আগুনের পরিধি বাড়ে।

১৬ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাসিন্দা নুরুল হক বলছিলেন, ‘ রান্নার জন্য আমাদের দেওয়া চুলা নষ্ট হয়ে গেলে নতুন করে তা দেওয়া তো দূরের কথা, মেরামতও করে দেওয়া হয় না। চুলা নষ্ট থাকায় আর আমাদের মেয়েরা ব্যবহার না জানাতে বারবার আগুন লাগে।’

এ ছাড়া ঘনবসতির কারণে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। ফলে ছোটখাটো দুর্ঘটনা হলে তা রূপ নেয় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে, এমন অভিমত অনেক রোহিঙ্গার।

মাস্টার ছৈয়দ নামে এক রোহিঙ্গা বলেন, ‘আমাদের ঘরগুলো একটা আরেকটার সঙ্গে লাগানো। একটু আগুন লাগলেই চারদিকে ছড়িয়ে যায়। ঘরের দূরত্ব থাকলে একটা ঘরে আগুন লাগলে তা ছড়ানোর আগে নেভানো সম্ভব হতো।’

কক্সবাজার ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপসহকারী পরিচালক মোহাম্মদ আবদুল্লাহ বলেন, ‘ আমাদের দশটি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে ওই দিন কাজ করে। অগ্নিকাণ্ডের কারণ জানতে তদন্ত করা হচ্ছে। তবে প্রাথমিকভাবে ঘরের গ্যাসের চুলা থেকে আগুন লাগে বলে আমরা জানতে পেরেছি।

ক্যাম্পের আইনশৃঙ্খলায় নিয়োজিত ১৪ এপিবিএনের অধিনায়ক নাঈমুল হক বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে আমরা সরেজমিনে যেটি পেয়েছি, গ্যাসের চুলা থেকে দুর্ঘটনাবশত অগ্নিকাণ্ড ঘটে। সে সময় বাতাসের তীব্রতা থাকায় আগুনের ফুলকি ছড়িয়ে পড়ে। তাতে অগ্নিকাণ্ডে প্রায় ৬০০ ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়।’

তবে ক্যাম্পে চলমান বিশেষ অভিযানকে ব্যাহত করতে দুর্বৃত্তরা অগ্নিকাণ্ড ঘটাতে পারে কিনা সেটিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা। তিনি বলেন, ‘মুহিবুল্লাহ হত্যাকাণ্ডের পর থেকে ক্যাম্পে বিশেষ অভিযান চলছে, আমরা অপরাধীদের আইনের আওতায় আনছি। ফলে এই অভিযানকে ব্যাহত করার অপচেষ্টা হিসেবে দুর্বৃত্তরা আগুন লাগাতে পারে। আমরা সে বিষয়টিও সেটিও খতিয়ে দেখছি।’

উখিয়ার স্থানীয় রাজনীতিবিদ উপজেলা যুবলীগের সভাপতি মুজিবুল হক আজাদ বলেন ‘রোহিঙ্গাদের একটি চক্র সহায়তার লোভে বারবার অগ্নিকাণ্ড ঘটাচ্ছে। তাঁদের জন্য স্থানীয়রাও দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন। তা ছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত রোহিঙ্গাদের সবাই সহায়তা দিলেও আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত স্থানীয়দের পাওয়া সহায়তা অপ্রতুল।’

অগ্নিকাণ্ডের ক্ষত কাটিয়ে পুরোনো রূপে ফিরতে শুরু করেছে শফিউল্লাহ কাটার ক্ষতিগ্রস্ত বি ব্লক। অস্থায়ী তাবুতে উঠেছেন অগ্নিদুর্গতরা, ক্যাম্প প্রশাসনের পক্ষ থেকে সরবরাহ করা হচ্ছে খাবার।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত