Ajker Patrika

দুই শিশু কেন থানা হেফাজতে

আপডেট : ০৫ জানুয়ারি ২০২৪, ১২: ৫৩
দুই শিশু কেন থানা হেফাজতে

কথাটি কি শুধু মুখে মুখে বলব যে শিশুরাই জাতির ভবিষ্যৎ আর তাদের প্রতি আমরা বড়রা দানবিক আচরণ করব? বিশেষ করে আমাদের সমাজের কিছু লোক অবস্থাহীন শিশুদের সঙ্গে যে আচরণ করে, তা বৈষম্যের কুৎসিত চেহারাকেই ফুটিয়ে তোলে। আইনের রক্ষক হিসেবে যাঁরা দায়িত্ব পালন করে থাকেন, তাঁদের মধ্যে অনেকেই এই শিশুদের প্রতি নির্দয় আচরণে কুণ্ঠিত নন। যেমন—রেললাইনের নাটবল্টু খোলার অভিযোগে দুই শিশুকে দুই দিন ধরে পুলিশ হেফাজতে রাখা হয়েছে। বিষয়টি আমাদের ব্যথিত করেছে। এ নিয়ে আজকের পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে মঙ্গলবার। 

শিশুদের অধিকার সংরক্ষণের জন্য শিশু আইন, ২০১৩ করা হয়েছে। এ আইনের মূল প্রতিপাদ্য হলো শিশুদের সুরক্ষা দেওয়া, বিকাশে সহায়তা করা এবং তার ওপর সংঘটিত নির্যাতনের প্রতিকার করা। আর আইনে শিশুদের ক্ষেত্রে অপরাধী মনের অনুপস্থিতিতে কোনো কর্মকাণ্ড ঘটলে তা অনিচ্ছাকৃত বলে ধরে নেওয়া হয়েছে। আর ‘অভিযুক্ত’, ‘দোষী’ ও ‘দণ্ডিত’ ইত্যাদি শব্দ বড় বয়সী অপরাধীর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য বলে শিশু-কিশোরদের ক্ষেত্রে এসব শব্দ আইনে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। শিশু আইনটির উদ্দেশ্য আমাদের বুঝতে হবে। এই উদ্দেশ্য অবশ্যই অপরাধের সঙ্গে জড়িত শিশুকে শাস্তি প্রদান নয়; বরং তাকে সংশোধন করে সুস্থ, সুন্দর ও উন্নত জীবনের দিকে ধাবিত করা। 

আটক শিশু দুটির মধ্যে একজনের মা ভিক্ষা করেন, আরেকজনের মা গার্মেন্টসে শ্রমিকের কাজ করেন। তারা সারা দিন অভিভাবকের কাছ থেকে দূরে থাকে। তারা নাটবল্টু খুলতে গেছে খেলাচ্ছলে, নাকি কারও দ্বারা প্ররোচিত হয়ে—এটা আগে সমাধান হওয়া প্রয়োজন। সাম্প্রতিক সময়ে রাজনৈতিক কর্মসূচির কারণে বিভিন্ন জায়গায় রেলে নাশকতার চেষ্টা চলছে। শিশু দুটি কারও প্ররোচনায় রেললাইনের নাটবল্টু খোলার কাজটি করেছে কি না, সেটাও ভাবার বিষয় আছে। এদের একজনের বাড়ি ময়মনসিংহের ভালুকার বিরুনিয়া গ্রামে এবং আরেকজনের গাজীপুরের শ্রীপুরের সাতখামাইর গ্রামে। জানা দরকার, দুই ভিন্ন এলাকার দুই শিশুর মধ্যে কীভাবে সখ্য গড়ে উঠল। নাটবল্টু খোলার জন্য তো যন্ত্রপাতির দরকার পড়ে। আটকের সময় কি তাদের কাছে এসব পাওয়া গেছে? শিশু দুটিকে রেল পুলিশের কাছে না দিয়ে কেন থানায় পাঠানো হলো? শিশু দুটি দরিদ্র পরিবারের সন্তান বলেই কি তাদের আটক করা হয়েছে? এ প্রশ্নগুলোর উত্তর পাওয়া জরুরি। 

কোনো শিশুকে প্রথমেই অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত করা ঠিক নয়। কারণ এতে তাদের ওপর মনস্তাত্ত্বিক চাপ পড়ে। শিশুদের ‘অপরাধী’ হিসেবে চিহ্নিত করার আগে বিষয়টি ভাবা উচিত ছিল, কিন্তু ভাবা হয়নি। 

শিশু-কিশোরদের কল্যাণ, সংশোধন এবং সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার প্রত্যয়ে প্রণীত শিশু আইনকে প্রশ্নবিদ্ধ করা কোনো ক্রমেই সমীচীন নয়। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার লোকদের কাছে মানুষ দায়িত্বশীল আচরণ প্রত্যাশা করে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

চকরিয়া থানার ওসিকে প্রত্যাহারের নির্দেশ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার

হোয়াইট হাউসে মধ্যাহ্নভোজের আগেই বের হয়ে যেতে বলা হয় জেলেনস্কিকে

‘আমাদের অনুমতি ছাড়া কাউকে গ্রেপ্তার করলে থানা ঘেরাও করব’, সরকারি কর্মকর্তার বক্তব্য ভাইরাল

সৈয়দ জামিলের অভিযোগের জবাবে যা লিখলেন সংস্কৃতি উপদেষ্টা

বগুড়ায় ঘরে ঢুকে মা-মেয়েকে কুপিয়ে হত্যা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত