Ajker Patrika

ম্যাজিস্ট্রেট নেই, সাত মাস অভিযান বন্ধ

শেখ আবু হাসান, খুলনা
আপডেট : ১১ জানুয়ারি ২০২২, ১২: ৪৬
ম্যাজিস্ট্রেট নেই, সাত মাস অভিযান বন্ধ

পরিবেশ অধিদপ্তর, খুলনা বিভাগীয় কার্যালয়ে চলছে দৈন্য। প্রয়োজনীয় জনবলের অভাবে অধিদপ্তরের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে দেখা দিয়েছে স্থবিরতা। বিভাগীয় কার্যালয়ে যে সংখ্যক জনবল থাকার কথা, তার অর্ধেকও নেই। সেখানে ৫৮ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী থাকার কথা, সেখানে আছেন মাত্র ১৮ জন। অর্থাৎ ৪০টি পদই খালি।

এ অবস্থা চলছে দীর্ঘদিন। ছয়-সাত মাস কোনো নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নেই। ফলে অধিদপ্তর থেকে কোনো অভিযান পরিচালনা করা সম্ভব হচ্ছে না। সব মিলিয়ে বিভাগীয় অধিদপ্তরটি প্রয়োজনীয় সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছে।

বিভাগীয় পরিবেশ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, খুলনা বিভাগীয় কার্যালয়ে ৫৮টি পদ রয়েছে। কিন্তু অনেক দিন ধরেই এই পদ পূরণ করা হচ্ছে না। বর্তমানে এই কার্যালয়ে মাত্র ১৮ জন আছেন। এই অল্পসংখ্যক জনবল দিয়ে বিভাগীয় কার্যালয়ের দাপ্তরিক কাজসহ বিভিন্ন কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা কঠিন হয়ে পড়েছে।

পরিবেশ দূষণকারী কলকারখানা, ইটভাটাসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত অভিযান, তদারকি করা সম্ভব হচ্ছে না। এ অবস্থায় মাঝেমধ্যে যেটুকু অভিযান চলছিল, তা-ও বন্ধ করে দিতে হয়েছে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের অভাবে। প্রায় সাত মাস অধিদপ্তরে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নেই।

গত রোববার সরেজমিন খুলনা বিভাগীয় পরিবেশ অধিদপ্তরে গিয়ে দেখা যায়, কার্যালয়ের নিচতলায় হেলফ্ ডেস্কে কোনো লোক নেই। নেই নিরাপত্তারক্ষী। নিচতলার ডানপাশে গবেষণাগার-২ এ সংস্কারের কাজ চলছে। আর বামপাশে গবেষণাগার-১ এ দু-তিনজন বসে আলাপ-আলোচনা করছেন। কার্যালয়ের দোতলা করিডর ফাঁকা। একটি কক্ষে তিন-চারজন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করতে দেখা যায়। আর একটি কক্ষে একজন মাত্র পরিদর্শককে কাজ করতে দেখা যায়।

পরিচালকের সঙ্গে দেখা করার কথা জানালে পরিদর্শক এই প্রতিবেদককে পরিচালক সাইফুর রহমান খানের কক্ষে নিয়ে যান। সেখানে কথা হয় পরিচালকের সঙ্গে। তিনি আজকের পত্রিকাকে জনবলসংকটের কথা স্বীকার করে বলেন, দূষণ প্রতিরোধ ও ব্যবস্থা গ্রহণে অভিযানসহ দাপ্তরিক কাজকর্ম কিছুটা ব্যাহত হচ্ছে। দীর্ঘদিন এই কার্যালয়ে বিভিন্ন পদে জনবল কম। অনেক আগেই জনবল বাড়ানোর জন্য হেড অফিসে জানানো হয়েছে।

এক প্রশ্নের জবাবে পরিচালক সাইফুর রহমান খান বলেন, খুলনা অঞ্চলে দেড় শর মতো ইটভাটা রয়েছে। এর মধ্যে ৪০-৫০টি বিভিন্ন শর্ত পূরণ না করায় অবৈধভাবে চলছে। তবে এগুলোর কয়েকটির মালিক মামলা করায় তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না। বাকিগুলোর বিরুদ্ধে শিগগির অভিযান শুরু হচ্ছে। ভাটাগুলোর বেশির ভাগের অবস্থান খুলনার ডুমুরিয়া, ফুলতলা, রূপসা, পাইকগাছা ও কয়রা উপজেলায়। সাতক্ষীরায় অভিযান চলছে। কোনো ইটভাটা পরিবেশ দূষণ করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

খুলনাঞ্চলে পরিবেশ দূষণ করতে পারে, এমন কারখানাগুলোতে ইটিপি (ইফ্লয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট) চালু রয়েছে। ২০২১ সালে নওয়াপাড়ায় এসএস ট্যানারি ও সুপার এক্স লেদার ফ্যাক্টরিতে ইটিপি চালু হয়েছে। খুলনায় হিমায়িত মৎস্য কারখানাগুলোতে ইটিপি চালুর জন্য অনেক আগে থেকেই অধিদপ্তর থেকে বলা হয়েছে।

তিনি আরও জানান, খুলনা নগরীর শেখপাড়া এলাকায় অনেক আগে থেকে গড়ে ওঠা পরিবেশদূষণকারী ঝালাই কারখানাগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। গত বছর এই ওয়েল্ডিং কারখানা বন্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য তালিকা করে ঢাকা সদর দপ্তরের এনফোর্সমেন্টে পাঠানো হয়। শুনানি শেষে এনফোর্সমেন্ট বিভাগ দূষণকারী কারখানার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে।

পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিদর্শক মো. মারুফ বিল্লাহ আজকের পত্রিকাকে বলেন, খুলনা বিভাগীয় পরিবেশ অধিদপ্তরে সাতজন পরিদর্শকের পদ রয়েছে, সেখানে আছেন মাত্র একজন। পদোন্নতি নিয়ে চলে যাওয়ার পর নতুন করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দেওয়া হয়নি। চারজন উপপরিচালকের স্থলে আছেন তিনজন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত