Ajker Patrika

বন্যায় সর্বস্বান্ত মাছচাষিরা

আশিস রহমান, দোয়ারাবাজার (সুনামগঞ্জ)
আপডেট : ০৪ জুন ২০২২, ১৫: ২১
বন্যায় সর্বস্বান্ত মাছচাষিরা

সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার সুরমা ইউনিয়নের আলীপুর গ্রামের মাছচাষি সিরাজ মিয়া। গত বছর বন্যায় তাঁর পুকুরের মাছ ভেসে যায়। ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ও প্রতিবেশীদের কাছ থেকে ধারদেনা করে আবারও মাছ চাষ করেন তিনি। স্বপ্ন ছিল ঘুরে দাঁড়ানোর।

কানলার হাওরপাড়ে ছোট-বড় পাঁচটি পুকুরে চাষ করা প্রায় ৫০ লাখ টাকার মাছ মজুত ছিল তাঁর। মাছ বিক্রির প্রস্তুতিও নিচ্ছিলেন। কিন্তু সম্প্রতি পাহাড়ি ঢল ও বন্যায় সিরাজ মিয়ার সব ক’টি পুকুর পানিতে তলিয়ে যায়। বানের পানিতে ভেসে গেছে লাখ লাখ টাকার মাছ। জাল দিয়ে পুকুরপাড় ঘিরেও মাছ রক্ষা করতে পারেননি তিনি।

একই গ্রামের মাছচাষি সোহেল আহমদ। তাঁরও তিনটি পুকুরের প্রায় ১২ লাখ টাকার মাছ ভেসে গেছে।

টেংরাটিলা গ্রামের মাছচাষি শের মাহমুদ ভূঁইয়া। বাড়ির পাশে ৪০০ শতক জমির ওপর তিনটি পুকুর রয়েছে তাঁর। বন্যায় প্রায় ১৫ লাখ টাকার মাছ ভেসে গেছে।

মাছচাষি সিরাজ মিয়া, সোহেল আহমদ ও শের মাহমুদ ভূঁইয়ার মতো উপজেলার দুই শতাধিক মাছচাষির স্বপ্ন ভেসে গেছে বানের জলে। পুঁজি হারিয়ে এখন দিশেহারা এসব চাষি।

স্থানীয় চাষিরা জানান, তাঁরা বেশির ভাগই পুকুর লিজ নিয়ে মাছ চাষ করে থাকেন। ডিলারদের সঙ্গে চুক্তি করে সারা বছর বাকিতে মাছের খাবার কিনে খাওয়ান। বছর শেষে মাছ বড় হলে স্থানীয় বাজারে খুচরা অথবা পাইকারি বিক্রি করে ডিলারদের টাকা পরিশোধ করেন।

একেকটি পুকুরে এক বছর মাছ চাষ করতে কয়েক লাখ টাকার খাবারের প্রয়োজন হয়। সেসঙ্গে শ্রমিক ও পরিবহন ছাড়াও আনুষঙ্গিক খরচও রয়েছে। কিন্তু অকাল বন্যা ও পাহাড়ি ঢলে প্রতিবছরই লোকসান গুনতে হচ্ছে চাষিদের।

টেংরাটিলা গ্রামের চাষি তাজুল ইসলাম বলেন, ‘আমার এককভাবে ১৬ একর জমি নিয়ে পাঁচটি পুকুর রয়েছে। বন্যায় পুকুরের প্রায় ৪০ লাখ টাকার মাছ ভেসে গেছে। রাত-দিন চেষ্টা করেও মাছ আটকাতে পারিনি। বন্যার পানির তীব্র স্রোতে মাছ ভেসে গেছে। এখন কী করব ভেবে পাচ্ছি না।’

আলীপুর গ্রামের চাষি আব্দুর রহিম জানান, উপজেলার বেশির ভাগ মাছচাষি এবারের বন্যায় পথে বসেছে। এমনিতেই গত বছরের বন্যায় পুকুর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এরপর সারা বছর ঋণ ও ধারদেনা করে মাছ চাষ করতে হয়।

তিনি আরও বলেন, ‘সহজে ব্যাংক থেকে ঋণ পাওয়া যায় না, ডিলাররাও বাকিতে মাছের খাদ্য দিতে চান না। এই দুঃসময়ে সরকার যদি বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মাছচাষিদের পাশে না দাঁড়ায়, তাঁরা দেউলিয়া হয়ে পরিবার নিয়ে পথে বসতে হবে।’

এ বিষয়ে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা তুষার কান্তি বর্মণ জানান, উপজেলায় ৪ হাজার ৬৬৬টি মাছ চাষের পুকুর রয়েছে। এর মধ্যে ২৫৮টি বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা পুকুরের মাছ সম্প্রতি বন্যা ভেসে গেছে। ক্ষয়ক্ষতির তালিকা করা হচ্ছে। মৎস্যচাষিদের পুকুরপাড় মেরামত এবং পাড়ের চারপাশ জাল দিয়ে ঘিরে রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত