Ajker Patrika

ফুল চাষে বদলে গেছে পুরো গ্রামের চিত্র

সাবিত আল হাসান
আপডেট : ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১১: ০০
ফুল চাষে বদলে গেছে পুরো গ্রামের চিত্র

ব্রহ্মপুত্র নদের পাড়ে ছোট্ট একটি গ্রাম সাবদি। প্রতি বছরের শীত মৌসুমে ফুলের জন্য আলাদা কদর বাড়ে এই গ্রামের। অথচ কয়েক বছর আগেও এই গ্রামের জনপ্রিয়তা এত বেশি ছিল না। সাবদির সৌন্দর্যের কথা সকলের কাছে ছড়িয়ে পড়তেই পর্যটকদের ঢল নামে এখানে। এখানকার সাধারণ কৃষকদের ফুল চাষের মতো ব্যতিক্রমী উদ্যোগ বদলে দিয়েছে গ্রামের চিত্র। সৌন্দর্যমণ্ডিত এই গ্রামটি নিজেদের পর্যটনবান্ধব হিসেবে গড়ে তোলায় আর্থিকভাবে বেশ লাভবান হচ্ছেন বাসিন্দারা।

সাবদি গ্রামটির অবস্থান নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার কলাগাছিয়া ইউনিয়নে। ব্রহ্মপুত্র নদের শাখা বয়ে গেছে গ্রামের পাশ দিয়ে। প্রায় এক দশক আগে মাত্র চারজন কৃষক মিলে সিদ্ধান্ত নেন ফুলের চাষ করার। সেই থেকেই যাত্রা হয় তাদের। লাভের মুখ দেখায় সাবদিসহ আশপাশের দীঘলদি, মাধবপাশা গ্রামেও শুরু হয় বাণিজ্যিকভাবে ফুলের চাষ। বর্তমানে প্রায় ১২ মাসই আশপাশের এলাকার প্রায় ৪০০ বিঘা জমিতে নানা জাতের ফুলের চাষ হচ্ছে।

কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এখানকার ফুল নারায়ণগঞ্জের চাহিদা মিটিয়ে ঢাকার শাহবাগসহ মুন্সিগঞ্জে বিক্রি করা হয়। প্রতিবছর ফেব্রুয়ারিতে সবচেয়ে বেশি মূল্যে বিক্রি হয়। পয়লা ফাল্গুন, বিশ্ব ভালোবাসা দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস সামনে রেখে ব্যস্ত সময় পার করছেন ফুলচাষি ও তাঁদের পরিবার। একসময় শস্য ও সবজি চাষ করে আসা কৃষকেরা বর্তমানে ফুল চাষ করে সচ্ছলতার মুখ দেখছেন।

স্থানীয়রা বলছেন, শস্য অপেক্ষা ফুল চাষে নিজেদের নিয়োজিত করা চাষিরা পুরো গ্রামকে আমূল বদলে দিয়েছেন। প্রতিদিনই অসংখ্য পর্যটকের আগমনে মুখর থাকে পুরো গ্রাম। বিশেষ করে গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে চলা ব্রহ্মপুত্র নদ পর্যটকদের আরও বেশি আকর্ষণ করে। তবে নারায়ণগঞ্জ শহর থেকে সাবদি পর্যন্ত যাতায়াত ব্যবস্থা আরেকটু উন্নত করা গেলে সহজেই চলাচল করতে পারবেন দর্শনার্থীরা।

সরেজমিন সাবদির বেশ কয়েকটি ফুলের বাগান ঘুরে দেখা যায়, গাঁদা, চেরি, চন্দ্রমল্লিকা, জবা, সূর্যমুখী, ডালিয়া, রজনীগন্ধা, গোলাপসহ বিভিন্ন প্রকারের ফুল চাষ হচ্ছে এখানে। পাশাপাশি ফুল ক্রয় ও সৌন্দর্যে সাধারণ মানুষ বিনোদনের জন্য ভিড় করছেন বাগানে। একসঙ্গে এত ফুলের দেখা পেয়ে দর্শনার্থীরা অভিভূত। প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকা থেকে শত শত দর্শনার্থী ভিড় করেন সাবদি গ্রামে। তবে ফুলচাষিরা তাঁদের বাগান রক্ষায় কড়া পাহারা দিয়ে রাখছেন প্রতিনিয়ত।

প্রায় ৪০ বিঘা জমিতে ফুল চাষ করা চাষি আলমগীর বলেন, ‘পুরো বাগানে প্রায় ৪০ হাজার টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে। ধারণা করছি এই ফেব্রুয়ারিতে ভালো আয় হবে ফুল বিক্রি করে। তা ছাড়া এ বছর ফুলের ফলনও বেশ ভালো। করোনার কারণে দাম পাওয়া নিয়ে একটু চিন্তায় আছি। তবে লোকসান হওয়ার সম্ভাবনা কম। ফেব্রুয়ারিতে ফুলের চাহিদা বেশি থাকায় দিনরাত কাজ করে যাচ্ছেন সকল চাষি।’

আরেক ফুলচাষি মোতালেব বলেন, ‘আমরা আগে ধান, ফুলকপি, পাট, আলুসহ বেশ কয়েক পদের শস্য সবজি চাষ করতাম। কিন্তু এসবে অনেক সময়েই ভালো দাম পাওয়া যেত না। কিন্তু ফুল চাষ করে বিনিয়োগের চেয়ে বেশ ভালো দাম পাওয়া যায়। আর সে কারণেই ফুল চাষে আগ্রহ বাড়াচ্ছে সবাই।’

বন্দর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ফারহানা সুলতানা বলেন, ‘আমরা মূলত মাঠপর্যায়ে কৃষি নিয়ে কাজ করি। বন্দরে বড় একটি ফুলচাষিদের অংশ রয়েছে। তাঁদের জন্য আমরা আলাদাভাবে সহায়তা করে থাকি। বেশ কিছুদিন আগে গাজীপুর ও যশোরে ফুলচাষিদের নিয়ে কর্মশালা হয়েছে। আমাদের বন্দরের বেশ কিছু কৃষক তাতে অংশ নিয়েছেন। জাইকা থেকে কৃষি খাতে যে অনুদান এসেছে, তা অর্ধেক ফুলচাষি ও অর্ধেক সাধারণ চাষিদের জন্য রাখা হয়েছে। সব মিলিয়ে যথাসাধ্য চেষ্টা করা হচ্ছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত